Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সালোয়ার বিতর্কে কলেজ শিক্ষিকা

পোশাক নির্বাচনের স্বাধীনতা নিয়ে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও স্কুল-কলেজে পোশাক বিতর্ক চলছেই। এ বার বিতর্কের কেন্দ্রে কল্যাণীর একটি শিক্ষক-শিক্ষন প্রতিষ্ঠান। নদিয়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-শিক্ষন প্রতিষ্ঠান কল্যাণী সুনীতি ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট বিএড কলেজের ইতিহাসের শিক্ষিকা বিষ্ণুপ্রিয়া চন্দের অভিযোগ, সালোয়ার-কামিজ পরে যাওয়ায় তাঁকে কর্তৃপক্ষের নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪২
Share: Save:

পোশাক নির্বাচনের স্বাধীনতা নিয়ে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও স্কুল-কলেজে পোশাক বিতর্ক চলছেই। এ বার বিতর্কের কেন্দ্রে কল্যাণীর একটি শিক্ষক-শিক্ষন প্রতিষ্ঠান।

নদিয়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-শিক্ষন প্রতিষ্ঠান কল্যাণী সুনীতি ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট বিএড কলেজের ইতিহাসের শিক্ষিকা বিষ্ণুপ্রিয়া চন্দের অভিযোগ, সালোয়ার-কামিজ পরে যাওয়ায় তাঁকে কর্তৃপক্ষের নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে।

কলেজ সূত্রের খবর, সেখানে শিক্ষিকারা সাধারণত শাড়ি পরেই যান। কলেজের সামনের রাস্তা খারাপের কারণে কখনও-সখনও দু’এক জন শিক্ষিকা সালোয়ার-কামিজ পরে যান। গত ১২ সেপ্টেম্বর কল্যাণী এ ব্লকের বাসিন্দা বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীও সালোয়ার কামিজ পরে কলেজে গিয়েছিলেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে আপত্তি করেন বলে অভিযোগ। বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষের তুঘলকি আচরণে সে দিন ক্লাস না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু বিকেলে আমাকে ফোন করে আবার ডেকে পাঠানো হয়। কলেজে গেলে চেয়ারম্যান দিলীপ বিশ্বাস আমার সালোয়ার-কামিজ পরা নিয়ে বকাবকি করেন। আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।”

শনি ও রবিবার ছুটি ছিল। সোমবার শাড়ি পরেই যান কলেজে ওই শিক্ষিকা। কিন্তু তাঁকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার ফের কলেজে ঢোকার সময়ে গেটে বায়োমেট্রিক কার্ড পাঞ্চ করতে গিয়ে তিনি দেখেন, কার্ড কাজ করছে না। বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর দাবি, কলেজের কিছু কর্মী তাঁকে জানান, কর্তৃপক্ষের বারণ থাকায় তিনি ঢুকতে পারবেন না। ঘটনাটটি জানাজানি হতেই শিক্ষক ও ছাত্রদের একাংশ ক্লাস বয়কট করে কলেজে বিক্ষোভ দেখান। কিছুক্ষণ পরে কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে যান বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী। এক শিক্ষিকা ও কয়েক জন ছাত্রীও তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। পরে কলেজে ফিরে অধ্যক্ষকে পুরো ঘটনাটি জানিয়ে চিঠি দেন বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী। কল্যাণীর মহকুমাশাসক কস্তুরী বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করে তাঁকেও চিঠির প্রতিলিপি দিয়েছেন তিনি। মহকুমাশাসক অবশ্য বলেন, “এটা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়। ওঁরাই ঠিক করবেন, কী করবেন।’’

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য, এটা কলেজের অভ্যন্তরীন বিষয়য়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কোনও অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হবে। সুনীতি ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট বিএড কলেজের চেয়ারম্যান তথা চিকিৎসক দিলীপবাবুর যুক্তি, ‘‘এটা শিক্ষক শিক্ষন প্রতিষ্ঠান। এখানকার শিক্ষিকা নিজেই শিক্ষক তৈরির কারিগর। বিএড কোর্স পড়াতে গিয়ে তিনি পাঠ দিচ্ছেন, শিক্ষিকার আদর্শ পোশাক শাড়ি আর নিজেই দিনের পর দিন অন্য পোশাক পরে আসছেন!” তাঁর দাবি, “আমরা শুধু পোশাকের কারণে আপত্তি করিনি। উনি প্রথম থেকেই শৃঙ্খলাপরায়ণ নন। ইচ্ছে মতো কলেজে আসেন-যান।”

এই পোশাক বিতর্কে বিস্মিত প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই। বেলঘরিয়া স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা, জাতীয় শিক্ষকের সম্মানপ্রাপ্ত শ্রাবণী সেনগুপ্ত যেমন বলেন, ‘‘এ নিয়ে বিতর্ক ভিত্তিহীন। এক জন শিক্ষিকার সেই পোশাকই পরা উচিত, যা দেখে ছাত্রছাত্রীদের সম্ভ্রমবোধ তৈরি হয়। সালোয়ার-কামিজ পরলেই যে সেটা খারাপ এটা ভাবার কারণ নেই।” তবে সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “নিয়মানুবর্তিতা কিন্তু শিক্ষকতার প্রথম শর্ত।”

অভিযোগ বা বিতর্ক যা-ই থাক, বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীকে না জানিয়ে তাঁর কলেজে ঢোকার কার্ড বাতিল করা বা প্রবেশাধিকার কেড়ে নেওয়া কি সঙ্গত হয়েছে? দিলীপবাবুর দাবি, ‘‘এটা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি। ওঁকে অসম্মান করতে চাইনি। উনি যদি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন মেনে চলেন, সে ক্ষেত্রে কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই মিটিয়ে নেওয়া যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE