গেল পুজোতেই আইটিআই মোড়ের মণ্ডপে মাইকে গান বাজছিল, ‘গাড়ি সিগন্যাল মানে না...।’ তার অনেক আগে থেকেই অবশ্য নদিয়ার কল্যাণীতে গাড়ি সিগন্যাল মানে না। ‘গ্রিন সিটি’র তকমা পাওয়া শান্ত এবং সুশৃঙ্খল শহরে লাল আলোতেও দুরন্ত গতি বাস, অটো থেকে সাইকেল আরোহীর।
২০১২ সালে কল্যাণীর পূর্বতন পুরবোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, খরচ বাঁচাতে ট্রাফিক পুলিশ না রেখে সিগন্যাল দিয়ে যান নিয়ন্ত্রণ হবে। সেই মতো কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি জায়গা কল্যাণী মেইন স্টেশন, আইটিআই মোড়, সেন্ট্রাল পার্ক, বুদ্ধ পার্ক এবং জেআইএস কলেজের মোড়ে ঘটা করে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বসানো হয়। কিন্তু ট্রাফিকের নিয়ম নিয়ে অধিকাংশ শহরবাসীর ন্যূনতম সচেতনতা বোধ না থাকায় সিগন্যাল নিয়ে যেমন বিভ্রান্তি ছড়ায়, তেমনই দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে একের পর এক। সিগন্যাল কেউ মানছেন, কেউ মানছেন না। তার জেরেই দুর্ঘটনাটা ঘটছে বেশি। অবস্থা বুঝে পুরসভার পক্ষ থেকে অস্থায়ী ভাবে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েকজন ঠিকাকর্মীকে লাঠি হাতে রাস্তায় নামানো হয়। কিন্তু তাঁদের নিয়মিত দেখতে পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ পুরবাসীর। তাছাড়া ট্রাফিক পুলিশের নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণও তাঁদের দেওয়া হয়নি। ফলে আরও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
এই প্রেক্ষিতে পুরসভার সিগন্যাল বসানোর পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক অবিনাশ সরকার বলেন, ‘‘উন্নয়নের এত কাজ থাকতে যে শহরে ৪৪০ কিলোমিটার রাস্তা আছে, তার মাত্র পাঁচটি মোড়ে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বসানোর অর্থ কী তা আমাদের বোধগম্য হয়নি।’’ কল্যাণীর পূর্বতন এসডিপিও চন্দ্রশেখর বর্ধনের সময় এই সিগন্যাল বসেছিল। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা নিজেদের উদ্যোগেই সিগন্যালগুলো বসিয়েছিল। তখন আমাদের সঙ্গে কথা হয়নি। এই সিগন্যালগুলি আগাগোড়াই স্বয়ংক্রিয়। ফলে কে সিগন্যাল মানছে আর কে মানছে না তা সবসময় নজরদারি করতে গেলেও রাস্তা গাড়ি বা বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হত যেটা বাস্তবে অসম্ভব।’’ বরং তৎকালীন এসডিপিও ও এসডিও যৌথ ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন এই ট্রাফিক সিগন্যালগুলিতে সিসি টিভি ক্যামেরা বসানোর। যাতে কেউ নিয়ম ভেঙে চলে গেলে বা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালালে সিসি টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। সেই মতো পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু দুই সরকারি আধিকারিকের বদলির পরে সেই পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে।
কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান নীলিমেষ রায়চৌধুরী মেনে নেন, সিগন্যালগুলো এখন ‘বাড়তি চাপ’ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই এই সিগন্যালগুলো বসেছে। উদ্দেশ্যটা হয়তো ভালই ছিল। কিন্তু এখনও বেশিরভাগ মানুষ সিগন্যাল মেনে চলার বিষয়ে সচেতন হননি। তাই অসুবিধা হয়।’’ কল্যাণীর তৃণমূল নেতা অরূপ মুখোপাধ্যায় আবার প্রশ্ন তোলেন, ‘‘পুরসভা পথ-নিরাপত্তার স্বার্থে সিগন্যালগুলো করে দিয়েছিল। এখন লোক দিয়েও সহায়তা করছে। কিন্তু পুলিশ কী করছে?’’
পুলিশের বক্তব্য, এমনিতেই কল্যাণীতে ট্র্যাফিক পুলিশ বলতে একজন মাত্র এএসআই। ঢাল-তলোয়ার দূরের কথা, সৈন্যই নেই। ট্রাফিক সমস্যায় উদ্বিগ্ন কল্যাণীর বর্তমান এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কল্যাণীর এত দীর্ঘ রাস্তা আর অসংখ্য মোড়। গাড়ির চাপও নিত্য বাড়ছে। সেখানে একজন ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে কি হবে? ট্রাফিকের বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় আছি। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে থানার পুলিশই যাচ্ছে। সাধারণ নজরদারির ব্যবস্থাটুকুও করা যায়নি।’’
অগত্যা সাবধানে চলতে হবে শহরবাসীকে। তাঁদের ট্রাফিক সচেতনতা বোধের উপরেই নির্ভর করছে শহরের শৃঙ্খলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy