Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মসজিদের মাইক ডাকল শ্মশানযাত্রায়

নাকাশিপাড়ার চ্যাঙা গ্রামের মুসলিম বাসিন্দারাই চাঁদা তুলে, খাট-ফুলের বন্দোবস্ত করে, কাঁধ দিয়ে শবদেহ নিয়ে গেলেন শ্মশানে।

পড়শিদের কাঁধেই রওনা দিল শবদেহ। নিজস্ব চিত্র

পড়শিদের কাঁধেই রওনা দিল শবদেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

গোটা গাঁয়ে মোটে দু’ঘর হিন্দু। দিন ফুরোলে কাঁধ দিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার লোক নেই।

ভ্যানচালক অসীম হাজরার আবার টাকাকড়িও বিশেষ কিছু ছিল না। কাঁধ দেওয়া তো পরের কথা। খাট, ফুল, নতুন সাদা চাদর, টেম্পোর ভাড়াই বা জোগাবে? পাড়া-পড়শির এন্তেকাল হলে কাছের গোরস্থানে দাফন হয়, তাঁরা কি মুখাগ্নির খরচ জোগাবেন?

নাকাশিপাড়ার চ্যাঙা গ্রামের সেই মুসলিম বাসিন্দারাই কিন্তু চাঁদা তুলে, খাট-ফুলের বন্দোবস্ত করে, কাঁধ দিয়ে শবদেহ নিয়ে গেলেন শ্মশানে। চিতার আগুন নেভা পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে করে গেলেন সব, যা মৃতের আত্মীয়-বন্ধুদের করার কথা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

খুব ভেবে-চিন্তে, মহৎ কিছু করার বাসনা নিয়ে সম্ভবত এ সব করেননি নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার পাটিকাবাড়ি এলাকার অজগাঁয়ের ওই বাসিন্দারা। নিছক গাঁয়ের লোকের স্বাভাবিক দায়িত্ববোধ থেকে করেছেন। কিন্তু এমন এক সময়ে করেছেন, যখন উগ্র ধর্মীয় প্রচারের জেরে ‘স্বাভাবিক’ ছবিগুলো ঘোলাটে হয়ে উঠছে ক্রমশ।

দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্ট ও কিডনির রোগে ভুগছিলেন চ্যাঙা দক্ষিণপাড়ার অসীম হাজরা। বয়স হয়েছিল ছাপ্পান্ন বছর। শুক্রবার দুপুরে তিনি মারা যান। টানাটানির সংসার। দুই ছেলেও ভ্যান চালান। ভ্যান চালান অসীমের ভাই কাজল হাজরাও। তাঁদের আক্ষেপ, যা-ও বা দেহ সৎকারের জন্য ‘সমব্যথী প্রকল্পে’ দু’হাজার টাকা পাওয়া যেত, ভোটবিধি জারি হয়ে যাওয়ায় সেটুকুও মেলেনি। কী ভাবে কী হবে তা নিয়ে তাঁরা যখন চিন্তিত, পাড়ারই কিছু যুবক এগিয়ে আসেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে মসজিদের মাইক দিয়ে সকলকে ডেকে টাকা তুলে ফেলা হয়। হবিষ্যি করার জন্য তোলা হয় চাল। বাঁশের মাচায় মৃতদেহ নিয়ে টেম্পোয় তুলে পাটুলি ঘাটে নিয়ে যান গ্রামবাসীই। সেখানেই শবদাহ করা হয়। মুখাগ্নি করেছেন অসীমের ছেলেরাই, কিন্তু সারাক্ষণ তাঁদের যাঁরা ঘিরে থেকেছেন, হাতে-হাতে এটা-ওটা এগিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই মুসলিম।

অসীমের ভাই কাজল বলেন, ‘‘দাদার মৃত্যুর পরে আমরা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। গাঁয়ের মুসলিম ভাইয়েরা এগিয়ে না এলে কী করে সব কিছু করতাম, জানি না!” যাঁরা সারা ক্ষণ তাঁদের পাশে ছিলেন, তাঁদেরই এক জন আফিরুল হক বলেন, ‘‘আমি বাড়িতে ছিলাম। আমাদের এক বন্ধু আমানুল্লা এসে খবরটা দেয়। গিয়ে দেখি, ওই অবস্থা! তখনই ঠিক করা হয় মসজিদের মাইকে প্রচার করে সব বন্দোবস্ত করা হবে।’’

তবে তাঁরা কেউই মনে করছেন না, বড় কিছু করেছেন। আফিরুল বলেন, ‘‘আমরা তো এক গাঁয়ে থাকি, একটাই পরিবারের মতো। ওঁদের কিছু হলে দেখা আমাদের কর্তব্য। আমাদের সুখ-দুঃখে ওঁরাও পাশে থাকবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nakashipara Religious Extremism Fundamentalism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE