মঞ্চের মাথায় ড্রোনের মহড়া। ছবি: সুদীপ আচার্য।
বদলের পক্ষে রায় দেননি মানুষ। দিদিও বিশেষ বদলের পথে হাঁটলেন না।
আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করবেন। তার আগে বিষ্যুৎবার বিকেলে তাঁর নতুন মন্ত্রিসভার চেহারাটা নিজেই সামনে নিয়ে এলেন তিনি। দেখা গেল— অমিত মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিদায়ী মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ পোড় খাওয়া, কেজো মুখগুলোই তালিকায় রেখেছেন। হেরে যাওয়া আট মন্ত্রী ছাড়া পুরনোদের মধ্যে নানা কারণে সরিয়েছেন মাত্র ৯ জনকে। সেই জায়গায় যাঁদের আনা হয়েছে, তাঁদের কেউ দলে গতিশীল নেতা বলে পরিচিত, কেউ আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি, কেউ বা পুলিশের পেশা ছেড়ে আসা উদ্যমী নেতা।
দিদি জানিয়েছেন, এ ভাবে টিম বেছে নেওয়ার মৌলিক শর্ত ছিল তিনটি— ‘‘জাত, ধর্ম ও জেলাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব।’’ বস্তুত সেই কারণেই এ দিন দিদির তালিকায় চমকের তুলনায় যুক্তি, যোগ্যতা ও রাজনৈতিক কারণ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। চমক বলতে মন্ত্রিসভায় আনা হচ্ছে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তাঁকে মন্ত্রী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা চলছিলই। দিদি এ দিন জানান, ‘‘মেয়রের পাশাপাশি মন্ত্রীও হবেন শোভন। মেয়র পদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব দেওয়া হবে তাঁকে।’’ কোন দফতর পাবেন তিনি? সেটা খোলসা করেননি দিদি। শুধু হেসে বলেন, ‘‘সবই এক দিনে জেনে যাবেন! কিছু বাকি থাকুক।’’
আসলে বৃহস্পতিবার যা প্রকাশ করেছেন দিদি, তা হল ‘অর্ধেক’ তথ্য। কাকে কোন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হবে, শপথ গ্রহণের পর নবান্নে পৌঁছে তবেই ঘোষণা করবেন মমতা।
বস্তুত মন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে এ বার দলে প্রত্যাশা ছিল অনেকের। তবে দিদি কাকপক্ষীকেও মনের কথা টের পেতে দেননি। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে সম্ভাব্য মন্ত্রীদের তালিকা পাঠিয়ে না দিয়ে এ দিন নিজেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান মমতা। তার পর বেরিয়ে বলেন, ‘‘কারা মন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা চলছিল। তা দূর করতেই মন্ত্রীদের নাম জানাচ্ছি।’’
তালিকা দেখে রাজনীতিকদের বিশ্লেষণ— এক, একা দু’শো পেরিয়েই দিদি বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কোনও দুর্নীতি নেই।’’ তাতেই বোঝা গিয়েছিল নারদ কাণ্ডে অভিযুক্তদের মন্ত্রিসভায় রাখবেন দিদি। মদন মিত্র হেরে গিয়েছেন তাই। নইলে কথা রেখেছেন মমতা। বুঝিয়ে দিয়েছেন, জনমতই সব অভিযোগ ধুয়ে দিয়েছে।
দুই, বুধবার দলীয় বৈঠকে দিদি জানিয়েছিলেন, প্রথম বিধায়ক হয়েই কেউ যেন মন্ত্রিত্বের আশা না করেন। দেখা গেল, প্রথম বার জিতে আসাদের মধ্যে যাঁদের নিয়ে জল্পনা চলছিল, সেই সৌরভ চক্রবর্তী, উদয়ন গুহ বা আব্দুল গনিদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হচ্ছে না। নতুন বিধায়কদের মধ্যে থেকে পাঁচ জনকে বেছে নিয়েছেন দিদি— শুভেন্দু অধিকারী, ইন্দ্রনীল সেন, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, জাকির হোসেন ও জেমস কুজুর। এঁদের মধ্যে অবশ্য শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রী হওয়া নিয়ে রহস্য ছিল না।
কোন দফতর দেওয়া হবে কৌতূহল তা নিয়েই।
তিন, জেলা ধরে ধরে প্রতিনিধিত্ব রাখার ব্যাপারে এ বার ভারসাম্য রাখতে চেয়েছেন দিদি। যেমন উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বিদায়ী মন্ত্রিসভায় ৬ জন প্রতিনিধি ছিলেন। তা নিয়ে অন্য জেলায় অভিমান ছিল। এ বার উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ৪ জন মন্ত্রিসভায়। আবার উত্তরবঙ্গ থেকে আগে ৬ জন মন্ত্রী ছিলেন। উত্তরবঙ্গে এ বার দলের শক্তি যে হারে বেড়েছে তাতে মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়তে পারত। কিন্তু দিদি খেদের সঙ্গেই বলেছেন, ‘‘মালদহে তো কেউ জিততে পারেননি! জিততে না পারলে মন্ত্রী করব কী ভাবে?’’ ফলে এ বারও উত্তরবঙ্গ থেকে ৬ জনই। জঙ্গলমহল, পুরুলিয়ার কথা মাথায় রেখে সেখান থেকে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আনা হয়েছে।
চার, ভোটের আগে তৃণমূল নেতারাই বলছিলেন, রাজ্যের সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর অংশের প্রচুর ভোট পেয়েছে দল। দেখা গেল মন্ত্রিসভা গঠনে সেই বিষয়কেও গুরুত্ব দিলেন দিদি। তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের কিছু প্রতিনিধিকে মন্ত্রী করা হল। মন্ত্রিসভায় রাখা হল সাত জন সংখ্যালঘু নেতাকেও।
পাঁচ, ফল ঘোষণার পর থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানতে সক্রিয় মমতা। দেখা গেল দিদির টিমে নতুন মুখদের অধিকাংশই নির্বিবাদী। নদিয়া থেকে অবনী জোয়ারদারকে বেছে নেওয়ার কারণ সেটাই।
তবে এর পরেও কৌতূহল থাকল। কারণ, এক দিনে সবটা ভেঙে বললেন না দিদি!
ছবি: সুমন বল্লভ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy