নরেন্দ্র মোদী।—ফাইল চিত্র।
গা গরম করা শুরু করে দিয়েছিল বাংলার বিজেপি। শিলিগুড়িতে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী— কয়েক দিনের জন্য সাজ সাজ রবে ছিলেন উত্তরবঙ্গের বিজেপি কর্মীরা। কিন্তু উৎসাহে জল ঢেলে দিয়েছে রথযাত্রা ঘিরে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা। ১৬ ডিসেম্বর বাংলায় আসছেন না মোদী, শিলিগুড়িতে ওই দিন হচ্ছে না কোনও জনসভা। ঠিক কবে প্রধানমন্ত্রী বাংলায় আসতে পারেন, সে বিষয়েও রাজ্য বিজেপির কাছে আপাতত কোনও খবরাখবর নেই।
রথযাত্রা তথা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র পরিকল্পনায় বেশ কয়েক দফা রদবদলের পরে স্থির হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার শহর থেকে যাত্রা শুরু হবে। অমিত শাহ সূচনা করবেন। উত্তরবঙ্গের সেই রথ ১৬ ডিসেম্বর শিলিগুড়ি পৌঁছবে এবং সে দিন শিলিগুড়িতে বড়সড় জনসভা করবেন মোদী।
কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায় যাত্রার অনুমতি না পাওয়াকে কেন্দ্র করে। প্রশাসন অকারণে অনুমতি আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ তুলে রাজ্য বিজেপি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু তাতে উল্টে বিপদ বাড়ে বিজেপির। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে দেয় যাত্রা। ফলে মোদী এবং শাহের জনসভার যে সব প্রস্তাবিত তারিখ ও স্থান ছিল, সে সবও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।
আরও পড়ুন: সেরা ‘মুহূর্তম’-এ দ্বিতীয় বার তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন কেসিআর
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছিলেন, রথযাত্রা শুরু করা যাক বা না যাক, ১৬ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই আসছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেই সভার প্রস্তাবিত তারিখের দিন তিনেক আগে এসে রাজ্য বিজেপি জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী আপাতত আসছেন না শিলিগুড়িতে। আদৌ শিলিগুড়িতে কোনও জনসভা হবে কি না, তা-ও নিশ্চিত ভাবে এখনবলতে পারছেন না বিজেপি নেতারা।
রথযাত্রা কবে থেকে শুরু করা যাবে, তা নিয়েই এখন অন্ধকারে রাজ্য বিজেপি। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিজেপি নেতাদের সঙ্গে লালবাজারে বৈঠকে বসছে পুলিশ-প্রশাসন। এই বৈঠকে আলোচনা কত দূর এগোবে, এক দিনে আলোচনা সেরে ফেলা যাবে কি না, আলোচনা চালানোর নামে পুলিশ-প্রশাসন প্রক্রিয়াটাকে আরও ঝুলিয়ে দেবে কি না— এ সব প্রশ্নে ঘিরে মুরলীধর সেন লেনের গেরুয়া অফিসে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে এই মুহূর্তে। নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের বাংলা সফরের কোনও প্রস্তাবিত তারিখ নিয়েও আলোচনা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না বলে খবর।
১৬ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে নরেন্দ্র মোদীর যে সভা হওয়ার কথা ছিল, তা যে হচ্ছে না, সে কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করার পথে বিজেপি হাঁটেনি। তবে সভা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি নেতারা এত দিনে জানাচ্ছেন যে, সভা বাতিল।
আরও পড়ুন: অসমে তৃণমূলের ভরাডুবি, বাঙালি এলাকাতেও প্রায় সর্বত্র হার
শুধু কি রথযাত্রা ঘিরে অনিশ্চয়তাই সভা বাতিল হওয়ার কারণ? তিন রাজ্যে বিজেপির পরাজয়ের জেরে মোদী-শাহ এখন বাংলায় সময় দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই— বিষয়টা এই রকম নয় তো? রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় উড়িয়ে দিলেন এই তত্ত্ব। বললেন, ‘‘এই রকম একটা কথা রটানো হচ্ছে জানি। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের ভোটের ফলের সঙ্গে বাংলায় মোদীজির সভা পিছনোর কোনও সম্পর্কই নেই।’’ তা হলে সভা বাতিল হল কেন? প্রথমে তো বলা হচ্ছিল যে, রথযাত্রা শুরু হোক বা না হোক, শিলিগুড়িতে ১৬ ডিসেম্বর সভা হবেই। রাজুর জবাব, ‘‘আমাদের আশা ছিল, ১৬ তারিখের বেশ কিছুটা আগেই যাত্রা শুরু করে দিতে পারব। তাই সভার তারিখ না বদলানোর কথাই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ১৬ ডিসেম্বরের আগে যাত্রা শুরু হলেও, ওই তারিখের মধ্যে শিলিগুড়ি পৌঁছতে পারব না। কোচবিহার থেকে সরাসরি শিলিগুড়ি গেলে আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার অনেক এলাকাই যাত্রাপথ থেকে বাদ পড়ে যাবে। তাই পরিকল্পনা বদলাতে হচ্ছে।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, রথযাত্রা শুরুর তারিখ নির্দিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের জনসভার স্থান বা তারিখ নিয়ে সব আলোচনা বন্ধ। তারিখ স্থির হলেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে জানানো হবে, রথ কবে কোথায় থাকবে। সেই সূচি দেখে প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানাবে, কোন কোন তারিখে প্রধানমন্ত্রী সময় দিতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy