Advertisement
E-Paper

ওবিসি তালিকা তৈরির ভিত্তি কী? মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানতে চাইল জাতীয় অনগ্রসর কমিশন, বিধানসভায় প্রশ্ন তুলবে বিজেপিও

সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে ওবিসি তালিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি পরিষদীয় দল। সোমবার বিধানসভায় মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বিধানসভায় আসবেন। অংশ নিতে পারেন বিধানসভার অধিবেশনেও। তাই সেই সুযোগে ওবিসি সংরক্ষণের তালিকা নিয়ে তাঁকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায় বিজেপি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ ১৯:৩২
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

গত মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তৃতা দিয়ে আদালতের নির্দেশে তৈরি হওয়া নতুন অনগ্রসর সম্প্রদায়ের তালিকা তৈরির কথা জানিয়েছিলেন। এ বার সেই তালিকা নিয়ে কার্যত প্রশ্ন তুলে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে চিঠি দিলেন জাতীয় অনগ্রসর সম্প্রদায় কমিশনের (এনসিবিসি) চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম অহির। সূত্রের খবর, ওই চিঠিতে নতুন সংরক্ষিত তালিকা তৈরির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে মুখ্যসচিবকে। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে এই তথ্য জানাতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কথা জানার পরেই সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে ওবিসি তালিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি পরিষদীয় দল। সোমবার বিধানসভায় মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বিধানসভায় আসবেন। অংশ নিতে পারেন বিধানসভার অধিবেশনেও। তাই সেই সুযোগে ওবিসি সংরক্ষণের তালিকা নিয়ে তাঁকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায় বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর সম্প্রদায় কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজ্য ওবিসি তালিকাভুক্ত বিভিন্ন জাতিগুলিকে উপ-শ্রেণিভুক্ত করে নোটিফাই করা হয়েছে। এ কথা জানিয়েছে জাতীয় অনগ্রসর সম্প্রদায় কমিশন। এর প্রেক্ষিতে এনসিবিসি চেয়ারপার্সন চেয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর সম্প্রদায় কমিশনের সুপারিশ-সহ সমীক্ষার রিপোর্ট এবং যাবতীয় তথ্য ও সমস্ত সহায়ক নথি দেওয়া হোক। চিঠির বয়ান অনুযায়ী, আগামী বুধবারের মধ্যে মুখ্যসচিবকে এই তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। তবে রাজ্য সরকার তাদের এই তথ্য আদৌ দেবে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান নবান্নের আধিকারিকদের একাংশ। শনিবার জাতীয় অনগ্রসর সম্প্রদায় কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, এর আগে দু’বার রাজ্য সরকারের কাছে ওবিসি তালিকা তৈরি সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হলেও তা জানায়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাই এ বারও তাদের চিঠির উত্তর পাওয়া যাবে না বলেই ধরে নিচ্ছে এনসিবিসি।

সম্প্রতি ওবিসি নিয়ে রাজ্যের অবস্থান বিধানসভায় স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। আদালতের নির্দেশ মেনে তৈরি করা হয়েছে ওবিসিদের নতুন তালিকা। রাজ্যে কোন কোন জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, সেই তালিকা কিছু দিন আগে প্রকাশও করে অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশন। রাজ্য সরকারের নতুন তালিকায় ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে। আরও অনগ্রসর বা ‘ওবিসি-এ’ তালিকায় ৪৯টি এবং অনগ্রসর বা ‘ওবিসি-বি’ তালিকায় ৯১টি জনগোষ্ঠীর নাম রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সমীক্ষা করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ২২ মে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছিল। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। ওই সব সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। হাই কোর্টের নির্দেশের পর জেলাশাসকদের নেতৃত্বে রাজ্যের সব ক’টি জেলায় সমীক্ষা হয়। সল্টলেকে অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশনের দফতরে তার রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা চলেছে দীর্ঘ দিন। তার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন সংশোধিত তালিকায় সিলমোহর দেন মুখ্যমন্ত্রী।

সোমবার অধিবেশনে বিষয়টি তুলে ধরা নিয়ে এক বিজেপি বিধায়ক বলেছেন, ‘‘গত মঙ্গলবার একতরফা ভাবে স্পিকার মুখ্যমন্ত্রীকে ওবিসি তালিকা নিয়ে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও বিষয়টি নিয়ে বলার সুযোগ দেওয়া স্পিকারের উচিত ছিল। যেহেতু বিজেপি পরিষদীয় দলের নেতাকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি, তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা জবাব চাইব।’’ প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে এই বিষয়ে টুইট করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়। নিজের এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাড়াহুড়ো করে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি সমীক্ষা চালানো একপ্রকার হতাশার প্রতিফলন। ওবিসি তালিকায় আরও বেশি মুসলিম সম্প্রদায়কে শেষ মুহূর্তে অন্তর্ভুক্ত করার এই পদক্ষেপে না রয়েছে যথাযথ ভিত্তি, না রয়েছে পদ্ধতিগত কোনও দৃঢ়তা।’’ অমিত আরও লিখেছেন, ‘‘এই ইচ্ছাকৃত সম্প্রসারণ প্রকৃত হিন্দু ওবিসি সম্প্রদায়গুলির অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে, যাদের প্রতিনিধিত্ব এবং সুযোগ-সুবিধা এখন তোষণমূলক রাজনীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ন্যাশনাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস প্রয়োজনীয় তথ্য ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা চাইলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বিষয়টি রহস্যজনক ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে এবং স্বচ্ছতাও দেখাচ্ছে না। তারা কী গোপন করতে চাইছে?’’

এমন আক্রমণের জবাবে রাজ্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কমিশনের অন্যতম সদস্য তথা রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ওবিসি নিয়ে যে তালিকা তৈরি করেছে, তা সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি করা হয়েছে আদালতের নির্দেশ এবং আইনমাফিক। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভিত্তিতে কোনও কিছু করা হয়নি। বিজেপি নেতারা আসলে এ সব অভিযোগ করে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে উস্কে দিয়ে ভোটের ফয়দা তুলতে চাইছেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘যেহেতু আদালতের নির্দেশে আইন মেনেই সংশোধিত ওবিসি তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাই এ ক্ষেত্রে আগামী দিনেও আবেদনের সুযোগ থাকবে। তালিকা নিয়ে কারও কোনও আপত্তি থাকলে কমিশনে অভিযোগ জানানো যাবে।’’

Mamata Banerjee OBC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy