E-Paper

ইআরও-দের দায়িত্ব বাড়ল

বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভোটার তালিকায় অসাধু কার্যকলাপের অভিযোগে কমিশনের নির্দেশে ইতিমধ্যেই দুই ইআরও এবং দু’জন এইআরও-কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও চলছে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৫৭
জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।

বৈধতা যাচাইয়ের সুযোগ খোলা রেখেই বিহারের এসআইআর-মামলায় (ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন) আধার কার্ডকে ভোটার-আবেদনের দ্বাদশ নথি হিসেবে মান্যতা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ রাজ্যের ক্ষেত্রেও তা কার্যকর হবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। এই পরিস্থিতিতে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের (ইআরও— ভোটার অনুমোদনে যাঁরা মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত) দায়িত্ব অনেক গুণ বাড়িয়ে দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, দিল্লিতে গত ১০ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে কমিশন পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে (সিইও) স্পষ্ট করে দিয়েছে, আসন্ন এসআইআর-এ ভোটার তালিকায় অযোগ্য বা বিদেশি কোনও নাগরিকের অস্তিত্ব থেকে গেলে দায় বর্তাবে ইআরও-দের উপরেই। আইন অনুযায়ী, তেমন ঘটনায় জেল, জরিমানার মতো কড়া পদক্ষেপের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের হাতে। গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ভোটার তালিকা ম্যাপিংয়ের কাজ শুরু হওয়ায়, ইতিমধ্যেই এই সতর্কবার্তা কার্যকর রয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

কমিশন সূত্রের বক্তব্য, এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় অনেক অযোগ্য, মৃত বা বিদেশি নাগরিকের অস্তিত্ব পাচ্ছে কমিশন। বিদেিশদের আঞ্চলিক নিবন্ধীকরণ কার্যালয় (এফআরআরও) এবং কমিশন যৌথ ভাবে এ দেশের ভোটার কার্ড থাকা এমন বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের চিহ্নিত করে তাঁদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কাজ চালাছে বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই। তবে তাঁদের কাছে আধার কার্ড কী ভাবে ছিল, তা নিয়ে ধন্দে কমিশন-কর্তারা। এর প্রতিফলন দিল্লিতে গত সিইও-বৈঠকে পড়েছিল। সেই সূত্রেই দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, যোগ্য কোনও ভারতীয় নতুন ভোটার তালিকার বাইরে যেন না থাকেন। অযোগ্য বা বিদেশির কোনও অস্তিত্বও ভোটার তালিকায় থাকা চলবে না। এই পর্বে তাই ইআরও-দের ভূমিকাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও) যে রিপোর্ট দেবেন, সেই অনুযায়ী পৃথক যাচাই বা শুনানি করে তবে তাঁদের ভোটার-আবেদন মঞ্জুর করতে হবে। সেই বৈঠকেই কমিশনের বার্তা ছিল, গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ভার পুরোপুরি ইআরও-দের উপর। যা নিশ্চিত করতে হবে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসকদেরও।

বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভোটার তালিকায় অসাধু কার্যকলাপের অভিযোগে কমিশনের নির্দেশে ইতিমধ্যেই দুই ইআরও এবং দু’জন এইআরও-কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও চলছে। কর্তব্যে গাফিলতিতে এমন আরও পদক্ষেপ যে ভবিষ্যতে হতেই পারে, বুঝিয়ে দিচ্ছে কমিশন।

এর মধ্যে সব জেলাশাসককে বৃহস্পতিবারই লিখিত বার্তা পাঠিয়ে সিইও কার্যালয় জানিয়েছে, গত ২০০২ সালের এসআইআর তালিকার সঙ্গে এ বছর ১ জানুয়ারি প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা (সঙ্গে গত ১ এপ্রিল এবং ১ জুলাইয়ের ভোটার সংযোজনের তালিকাও) মিলিয়ে দেখার (ম্যাপিং) কাজ শেষ করতে হবে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। বিএলও-রা প্রত্যেক ভোটারের তথ্য উভয় তালিকা থেকে মিলিয়ে নথিবদ্ধ করবেন। এক-একটি এলাকায় বিএলও এবং ইআরও চূড়ান্ত ম্যাপিংয়ের কাজ করবেন। গোটা প্রক্রিয়ায় নজরদারি চালাবেন বিএলও সুপারভাইজ়ার, এইআরও এবং ইআরও-রা। জেলাশাসকেরা কমিশনের পোর্টালে বিধানসভা কেন্দ্র অনুযায়ী প্রতিদিনের তথ্য জমা করবেন। আগামী ১৮ এবং ১৯ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ নির্বাচন কমিশনার রাজ্যে এসে জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ঘুরেও দেখবেন কয়েকটি জেলার প্রস্তুতি। ২০ সেপ্টেম্বর নাগাদ কমিশন নিজে এই ম্যাপিংয়ের কাজ দেখবে।

এই ম্যাপিং-প্রক্রিয়াকেই অনেকে মিনি-এসআইআর হিসেবে দেখতে চাইছেন। কারণ, উভয় তালিকায় মিল থাকা ভোটারেরা প্রথমেই শনাক্ত এবং বাছাই হয়ে যাবেন। কমিশনের বক্তব্য, এতে এ রাজ্যে মোট ভোটারের অন্তত ৬০-৭০ শতাংশকে বেছে নেওয়া যাবে মূল এসআইআর শুরুর আগেই। ফলে সেই সময়ে বাকি অংশের ভোটারদের যাচাইয়ে মনোনিবেশ করবে কমিশন। তাঁদের যাচাই প্রক্রিয়া হবে বিধিবদ্ধ ভাবেই। তাতে নথির যাচাই থেকে শুনানি— সবই হতে পারে বলে কমিশন-কর্তাদের একাংশের মত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election Commission of India Chief Electoral Officer

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy