ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে অবৈধ হস্তক্ষেপের তথ্য পেয়েই ভোটের কাজে যুক্ত প্রশাসনিক কর্তাদের দায়িত্ব বেঁধে দিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) ভূমিকাও এসেছিল কমিশনের নজরে। এ বার তাঁদের নিয়োগ-বিধি সুনির্দিষ্ট করে দিল দিল্লির নির্বাচন সদন। তাতে কমিশন রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছে, একমাত্র সরকারি কর্মচারীদেরই এ কাজে লাগানো যাবে। নিয়োগ-প্রশ্নে দায়বদ্ধ করা হয়েছে নির্বাচনী কাজের সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের আধিকারিকদেরও। কারণ, ভোটার তালিকায় নাম ওঠা বা বাদ যাওয়ার অনেকাংশে নির্ভর করে বিএলও-দের রিপোর্টের উপরেই।
২০২২ সালের বিএলও-নিয়োগ-বিধি কিছুটা সরল ছিল। কমিশন সেই বিধি কঠোর ভাবে সংশোধন করেছে। কমিশন তাতে বলেছে, বিএলও নিয়োগ হবে গ্রুপ-সি এবং তার উপরের স্তরের কর্মীদের মধ্যে থেকে। সংশ্লিষ্ট কর্মীকে হতেই হবে পূর্ণ সময়ের সরকারি চাকুরিজীবী। পুরসভা-পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় প্রশাসনের স্থায়ী কর্মীরাও নিযুক্ত হতে পারেন।
যদি কোনও কারণে সরকারি কর্মীদের পাওয়া না যায়, তখন ইআরও (এসডিও বা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট) এবং জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক লিখিত শংসাপত্র দিতে সে কথা জানাবেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে (সিইও)। সিইও অনুমতি দিলে তখন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়োগ করা যেতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রে কমিশনের আগাম অনুমতি বাধ্যতামূলক। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘১৯৫০ সালের রিপ্রেজ়েন্টেশন অব দ্য পিপলস আইনের ১৩বি(২) ধারা অনুযায়ী বিএলও নিয়োগ হন। নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্টের কোনও গাফিলতি ধরা পড়লে সেই আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যাবে। স্থায়ী সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রেই সেই আইনের প্রয়োগ সম্ভব। অস্থায়ী কর্মী হলে তাঁদের ধরা মুশকিল।’’ প্রসঙ্গত, এখন রাজ্যে বুথ প্রায় ৮১ হাজার। আগামী দিনে তা হবে প্রায় ১ লক্ষ। ফলে অত সংখ্যক বিএলও প্রয়োজন।
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও, এ দেশের ভোটার কার্ড পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে—এই তথ্যে কমিশন নড়েচড়ে বসেছিল। অবৈধ উপায়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলার একটি চক্র ধরা হয় এবং আইনি পদক্ষেপ হয় তিন জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে। তখন থেকেই বিএলও-দের ভূমিকাও আতশকাচের তলায় আসে। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৬০-৭০% বিএলও-ই চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মী। এমনকি বহু বিএলও এমন রয়েছেন, যাঁরা সাম্মানিক প্রাপক অস্থায়ী কর্মী। এ নিয়ে সরব হন বিরোধীরাও। কারণ, বুথভিত্তিক সমীক্ষা করে ভোটার কার্ড পেতে কে যোগ্য বা অযোগ্য, সেই রিপোর্ট দেন বিএলও-রাই। যার ভিত্তিতে ইআরও বা এইআরও সংশ্লিষ্ট আবেদন মঞ্জুর করে থাকেন। বিএলও-রিপোর্ট পাওয়ার পরেই কমিশন স্থির করে, তাদের নিয়োগের বিধিতে স্থায়ী বদল আনা হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)