Advertisement
E-Paper

সহকর্মী গুলি করল কেন? প্রশ্ন খুকড়ামুড়ার

পুরুলিয়ার আড়শা থানার কাঁটাডির খুকড়ামুড়া গ্রামের বুধবার দুপুরে পা দিয়ে দেখা গিয়েছে সব স্বাভাবিক।

সুজিত মাহাতো

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:০২
বিনা-মেঘে: নিহতের বড় দাদা আশিস মাহাতো জানিয়েছেন, এই বাড়ি দোতলা হয়ে গিয়েছে। এ বার মেজ ও ছোট ভাইয়ের এক সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা তাঁরা ভাবছিলেন। তার আগেই ছন্দপতন। (ইনসেটে) বিশ্বরূপের বাবা ভীমচন্দ্র মাহাতো। ছবি: সুজিত মাহাতো

বিনা-মেঘে: নিহতের বড় দাদা আশিস মাহাতো জানিয়েছেন, এই বাড়ি দোতলা হয়ে গিয়েছে। এ বার মেজ ও ছোট ভাইয়ের এক সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা তাঁরা ভাবছিলেন। তার আগেই ছন্দপতন। (ইনসেটে) বিশ্বরূপের বাবা ভীমচন্দ্র মাহাতো। ছবি: সুজিত মাহাতো

সন্ধ্যা হলেই আনচান করে উঠত মায়ের মন। ছত্তীসগঢ়ের জঙ্গলের ক্যাম্পে কেমন আছে ছোট ছেলে বিশ্বরূপ? সেখানে মাওবাদীদের আনাগোনা রয়েছে! তাই বিশ্বরূপের ফোন না আসা পর্যন্ত দুশ্চিন্তার কাঁটা খচখচ করত বাড়ির সবার মনেই। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ঠিক ৭টাতেই ফোন করেছিলেন বিশ্বরূপ। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু রাত ফুরোতেই বুধবার সকালে ছত্তীসগঢ়ের নারায়ণপুর জেলার কাদেনার ক্যাম্পে এক সহকর্মীর এলোপাথাড়ি গুলি যে সে ছেলের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তা ভাবতে পারছেন না কেউই।

পুরুলিয়ার আড়শা থানার কাঁটাডির খুকড়ামুড়া গ্রামের বুধবার দুপুরে পা দিয়ে দেখা গিয়েছে সব স্বাভাবিক। বিশ্বরূপের ‘বড়দা’ আশিস কাঁটাডি পঞ্চায়েতের হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক। সংবাদমাধ্যমের ফোন পেয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। কিছু শুনেছেন? তিনি বলেন, ‘‘ছত্তীসগঢ়ে কিছু ঘটেছে বলে শুনেছি। ভাই ওখানে থাকে। ওকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু ফোনটা বন্ধ। আপনারা কিছু জানেন?’’ কিছুক্ষণ পরেই আড়শা থানা থেকে ফোনে আসে সেই মর্মান্তিক খবর। ফোন ধরে কেঁদে ফেলেন আশিসবাবু। পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর স্ত্রী নয়নতারা, ছ’বছরের মেয়ে রিয়া। কাছেই বাবা ভীমচন্দ্রবাবু। মেজোভাই সুবোধ জঙ্গলমহল পুলিশের কনস্টেবল। তিনি খাতড়ায় রয়েছেন। আশিসবাবু তাঁকে ফোন করে সব জানান।

বিশ্বরূপের মা ভাগ্য মাহাতো সেই সময়ে কিছু দূরে জমিতে কাজ করছিলেন। পড়শিদের এক জন মোটরবাইক নিয়ে ছোটেন তাঁকে ডেকে আনতে। তিনি বাড়িতে আসার পরে জানানো হয় ছেলের মৃত্যু সংবাদ। তারপর থেকে তিনি টানা কেঁদে যাচ্ছেন। খবর আসার পর থেকেই থম মেরে যান বাবা ভীমচন্দ্রবাবু। কোনও রকমে বলেন, ‘‘রোজকার মতো মঙ্গলবারও রাতে ফোন করে প্রথমে আমার সঙ্গে কথা বলে। জানিয়েছিল, ভাল আছে। তারপরে ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলে। বাড়ির সবাই কেমন আছে, কে, কী করছে সব খুঁটিয়ে জানতে চাইত।’’

আশিস বলেন, ‘‘মাওবাদী এলাকায় ভাইয়ের কাজ বলে সব সময়ে হামলার ভয়ে থাকতাম। কিন্তু সহকর্মীর গুলিতে ভাই মারা যাবে ভাবিনি। কেন এমন হল?’’ তিনি জানান, বিশ্বরূপের ভয়ডর তেমন ছিল না। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ফুটবল ও ভলিবলে দড় ছিলেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন বলে শারীরিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। সে সময়ে আশিসবাবুই এক প্রকার জোর করে বিশ্বরূপকে পুরুলিয়া শহরের জে কে কলেজে স্নাতকের পাস কোর্সে ভর্তি করান। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়েই সিআরপি এবং আইটিবিপি-তে পরীক্ষা দেন বিশ্বরূপ। প্রথমবারের চেষ্টাতেই দু’টি জায়গা থেকে চাকরি পান। তবে প্রথম নিয়োগের চিঠি আইটিবিপি থেকে আসায়, তাতেই বিশ্বরূপ যোগ দেন। রাজস্থানের জয়পুর তাঁর প্রথম কর্মস্থল। সেখান থেকে বছর দেড়েক আগে ছত্তীসগঢ়ের ওই রক্ষী শিবিরে তাঁর বদলি হয়ে আসা। আশিসবাবু জানান, বছরে দু’বার ছুটিতে বাড়ি আসতেন বিশ্বরূপ। এ বছর পুজোর সময়ে এক মাসের ছুটিতে এসেছিলেন। ৩ নভেম্বর ফেরেন।

ছুটিতে এলে অনেকটা সময় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেই কাটত। বিশ্বরূপের বন্ধু বীর সিং মাহাতো, সিদ্ধার্থ মাহাতো বলেন, ‘‘ছুটিতে এলে ও নানা রকম গল্প করত। খেলাধুলো নিয়েই মেতে থাকত। ওদের ক্যাম্পেরও অনেক কথা শোনাত। কিন্তু কোনও দিন সহকর্মীদের মধ্যে কোনও সমস্যা ছিল বলে শুনিনি।’’ বিশ্বরূপকে পড়িয়েছেন গ্রামেরই বাসিন্দা কাঁটাডি হাইস্কুলের শিক্ষক সন্তোষ মাহাতো। একই কথা তাঁর মুখেও। আশিসবাবুও বলেন, ‘‘বিশ্বরূপ কোনও দিন কারও সঙ্গে ঝুটঝামেলায় জড়াত না। কর্মক্ষেত্রে ওর কোনও সমস্যা হয়েছে বলে শুনিনি। তা হলে কেন সহকর্মী ওকে গুলি করল, সেটাই বুঝতে পারছি না।” সে প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে খুকড়ামুড়া জুড়ে।

ITBP Chattisgarh Purulia CRPF Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy