Advertisement
E-Paper

পাশে গ্রামের মানুষ, সুস্থ মনোরোগীদের নতুন ঠিকানা

অনেকের বলা ঠিকানায় স্বেচ্ছাসেবকেরা পৌঁছে জেনেছেন, গোটা পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছে। পথের ধার থেকে তুলে আনা মানসিক রোগগ্রস্ত ওই মহিলাদের ঠাঁই হয় অগত্যা হোমের চার দেওয়ালে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৬
বাগানের কাজ করছেন সুস্থ হয়ে ওঠা মনোরোগীরা । নিজস্ব চিত্র

বাগানের কাজ করছেন সুস্থ হয়ে ওঠা মনোরোগীরা । নিজস্ব চিত্র

হোমে যাঁরাই কোনও কাজে আসতেন, তাঁদের হাত ধরে পান্না, মমতাজেরা অনুরোধ করতেন, ‘‘বাড়ি নিয়ে যাবে?’’

কিন্তু অনেকে সঠিক ঠিকানা মনে করতে পারেননি, অনেকে আবার ঠিকানা বলতে পারলেও বাড়ির লোক জানিয়ে দিয়েছেন, ও সব ‘পাগল-টাগল’কে ঠাঁই দেওয়া যাবে না। অনেকের বলা ঠিকানায় স্বেচ্ছাসেবকেরা পৌঁছে জেনেছেন, গোটা পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছে। পথের ধার থেকে তুলে আনা মানসিক রোগগ্রস্ত ওই মহিলাদের ঠাঁই হয় অগত্যা হোমের চার দেওয়ালে।

কোনও দিন তাঁদেরও নিজেদের বাড়ি হবে, যেখানে তাঁরা বাঁচবেন-কাজ করবেন—ভাবেননি পান্না, মমতাজ, ফতেমা, পাতা, সোনালি, সঙ্গীতারা। এ বার সেই ইচ্ছে সত্যি হতে চলেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের উত্তর কাশীপুর এলাকার সানপুকুর পঞ্চায়েতে ৬৮ কাঠা জমি এখন হোমের সুস্থ হয়ে ওঠা ১৫ জন মহিলার মনোরোগীর নতুন ঠিকানা।

কলকাতা ও আশপাশে রাস্তায় পড়ে থাকা মহিলা মনোরোগীদের তুলে এনে থাকা-খাওয়া-চিকিৎসার ব্যবস্থা করে চেতলা এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই কাজে সাহায্য করে কলকাতা পুরসভা ও সমাজকল্যাণ দফতর। বিভিন্ন মানুষের দানের মোট ৩৪ লক্ষ টাকা দিয়ে ২০১৫ সালে ওই জমি কিনেছিল ওই সংস্থা। রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পান্নারা সেই জমিতে বানিয়ে ফেলেছেন একতলা বাড়ি। আজ, রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সেখানে থাকা শুরু করলেন ১৫ জন। গত এক বছর ধরেই অবশ্য দফায় দফায় সেখানে সময় কাটিয়েছেন তাঁরা। চাষবাস, পোলট্রি, বাগান করার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হয়েছে তাঁদের। অর্জিত রোজগার সেখানে সঞ্চয় করবেন তাঁরা।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান সর্বাণী দাস রায় বলছিলেন, ‘‘সুস্থ হয়ে ওঠার পরে সেই মানুষগুলিকে যদি হোমে অসুস্থদের সঙ্গেই রেখে দেওয়া হয়, তা হলে সেটা অত্যন্ত অমানবিক। কিন্তু আমাদের রাজ্যে এখনও সরকারি ভাবে এই মানুষগুলোর পুনর্বাসনের তেমন ব্যবস্থা নেই। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সাহায্য দরকার ছিল, যা অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই কাশীপুর গ্রামের মানুষের থেকে মিলেছে।’’

বেলজিয়ামের গিল শহরে এখনও টিকে রয়েছে এক ‘কমিউনিটি কেয়ার’ ব্যবস্থা। শহরের বাসিন্দারা নিজেদের পরিবারে মানসিক রোগগ্রস্তদের দত্তক নেন। লিখিত দলিল-দস্তাবেজ অনুযায়ী, ১২৫৫ সাল থেকে এটা চলছে! এঁদের ভরণপোষণের জন্য পরিবারগুলিকে ভাতা দেয় সরকার। সর্বাণী জানালেন, ১৫ জন মনোরোগীকে একপ্রকার দত্তকই নিয়েছেন গ্রামের মানুষ। যত দিন বাড়ি তৈরি হয়নি, তত দিন তাঁদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন গ্রামের কিশোর ভারতী স্কুলের মাস্টারমশাই পলাশ গঙ্গোপাধ্যায়। পালা করে খাবার দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। মেয়েদের হাতে ধরে চাষবাস, পোলট্রির কাজ শিখিয়েছেন। এগিয়ে এসেছে পঞ্চায়েতও। অসুস্থ থাকায় কথা বলা যায়নি পলাশবাবুর সঙ্গে। সানপুকুরের সদ্য প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান মুসহক মোল্লার কথায়, ‘‘লোকে ভাবে, গ্রামের মানুষ পিছিয়ে পড়া। তাঁরা হয়তো ‘পাগল’ বলে ওই মেয়েদের জায়গা দেবেন না। আসলে তা নয়। সমাজের মূলস্রোতে ফেরাতে গোটা গ্রাম ওঁদের পাশে রয়েছে।’’

‘স্টেট মেন্টাল হেলথ অথরিটি’র অন্যতম সদস্য মোহিত রণদীপের কথায়, ‘‘সামাজিক বা আর্থিক অবস্থানের তোয়াক্কা করে না এই রোগ। আমরা কেউ বিপদের বাইরে নই। দুর্গাপুজোর জন্য ক্লাবগুলিকে যদি ২৮ কোটি দেওয়া যায়, তা হলে কয়েক কোটি কি সুস্থ হয়ে ওঠা মনোরোগীদের আর্থিক ও সামাজিক পুনর্বাসনে দেওয়া যায় না?’’

Hom Mental Patient New Address
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy