কৃষকের সুরক্ষায় চালু হয়েছে শস্যবিমা। কিন্তু পদ্ধতিগত কারণে অঋণী কৃষকেরা এ ক্ষেত্রে বঞ্চিতই থাকতেন। এ বার তাই ঋণী-অঋণী সব কৃষককে বিমার আওতায় আনতে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায়’ পদ্ধতিগত পরিবর্তন করা হল। বিমার জন্য চাষিদের আর ব্যাঙ্কে ঘুরে বেড়াতে হবে না। সেই কাজ করবে সরকারের নির্দিষ্ট করা বিমা সংস্থা। সহযোগিতা করবে কৃষি দফতর।
এত দিন যে সব কৃষক ঋণ নিয়েছেন, তাঁরাই বিমার সুযোগ পেতেন। ব্যাঙ্কই উদ্যোগী হয়ে বিমা করিয়ে দিত, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হলেও বিমার টাকায় ঋণ আদায় করতে পারে ব্যাঙ্ক। যে সব কৃষক ঋণ নিচ্ছেন না, তাঁদেরও ব্যাঙ্কে গিয়েই বিমা করাতে হত। নিয়মমতো ব্যাঙ্কের বিমা সংস্থাকে সেই নথি পাঠানোর কথা। এ ক্ষেত্রে মুনাফা নেই, উল্টে খাটনি রয়েছে। তাই ঋণ নেননি, এমন বেশিরভাগ কৃষকই শস্যবিমার আওতার বাইরে থেকে যেতেন।
যেমন শস্যবিমার সুযোগ পাননি মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরোমণি গ্রামের কৃষক মাধব দাস, শালবনির ভাদুতলার পার্থ পালরা। তাঁদের বক্তব্য, “বিষয়টি জানাই ছিল না। ফলে আবেদনও জানাতে পারিনি।’’ বিমার জন্য আবেদনপত্র জমার শেষ দিন ছিল গত ১০ অগস্ট। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আবেদন জমা দিতে পেরেছেন মাত্র এক চতুর্থাংশ চাষি। ঋণী কৃষকদের ধরলে সংখ্যাটা সামান্য বাড়বে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৬ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৩০। কিষান ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ৬ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৯৯টি পরিবারের। সেখানে অঋণী কৃষকদের বিমার আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৪০টি! এত কৃষক কেন বঞ্চিত থেকে গেলেন? কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রভাত বসুর দাবি, “এই পদ্ধতিতে এ বারই প্রথম বিমা হচ্ছে। প্রচার চালিয়েছিলাম। হাতে সময় কম থাকায় সব কৃষককে বিমার আওতায় আনা যায়নি, এটা ঠিক। কিন্তু রবি মরসুমে যাতে কোনও কৃষকই বিমার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য আরও জোরদার প্রচার চালানো হবে।” এই অভিজ্ঞতা থেকেই এই আর্থিক বছরে নতুন পদ্ধতিতে বিমা করায় উদ্যোগী হয়েছে সরকার। ঠিক হয়েছে, বরাত পাওয়া সংস্থা জেলার চাষিদের থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করবে। আর সে কাজে সহযোগিতা করবে কৃষি দফতর। বিমার জন্য চাষিদের প্রিমিয়ামও দিতে হবে না। সেই টাকাও দিয়ে দিচ্ছে সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আমন ধানের প্রিমিয়াম হেক্টর প্রতি চাষে খরচের ৩.৮২ শতাংশ। খরচ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। প্রিমিয়ামের .৯১ শতাংশ করে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার দেবে। ২ শতাংশ চাষির দেওয়ার কথা। যদিও এখন রাজ্য ওই ২ শতাংশ অর্থও দিয়ে দিচ্ছে। চাষি নিখরচাতেই পাচ্ছেন বিমার সুবিধা।
কী রকম ক্ষতিপূরণ মিলবে?
সাত বছরের গড় হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কত ফলন হয় (সাধারণ ফলন) তা দেখা হবে। ক্ষতির ফলে কত ফলন কম হয়েছে দেখা হবে। সাধারণ ফলন ও কম ফলনের বিয়োগ ফল শতাংশের হিসেবে ফেলে নির্ধারণ হবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চাষিরা উপকৃত হবেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতেই পারে। ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে বঞ্চিত না হন, সে জন্য সব কৃষককে বিমার আওতায় আনার জন্য কৃষি দফতরকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy