Advertisement
E-Paper

RSS: সঙ্ঘকে রুখতে বহুত্ববাদের বার্তা দিয়ে নতুন উদ্যোগ

রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশিই শামিল হচ্ছেন নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার-সহ নানা আন্দোলনের কুশীলব এবংবিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২২ ০৭:১৯
গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যের কথা বলছে বিরোধীরা।

গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যের কথা বলছে বিরোধীরা। ফাইল চিত্র।

গেরুয়া শিবিরের বিপরীতে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যের কথা বারবার বলছে বিরোধীরা। কিন্তু দেশ জুড়ে আরএসএস-বিজেপির আগ্রাসন মোকাবিলায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র বার্তাই কি যথেষ্ট? এই প্রশ্ন তুলে এবং বহুত্ববাদ ও সহনশীলতার কথা বলে গতি পাচ্ছে নতুন উদ্যোগ। নাগরিক আন্দোলনের মোড়কে ওই উদ্যোগে সরাসরি কোনও দল থাকছে না। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশিই শামিল হচ্ছেন নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার-সহ নানা আন্দোলনের কুশীলব এবংবিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সাম্প্রতিক অতীতে আরএসএস কী ভাবে তাদের প্রভাব বহু গুণ বাড়িয়ে তুলেছে এবং আরও এগোচ্ছে, তার বিশ্লেষণ করে এই প্রবণতার মোকাবিলায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সক্রিয়তা বাড়ানোর ডাক দিয়েছে সিপিআই। কমিউনিস্ট পার্টির ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত বহুত্ববাদী আন্দোলনের মঞ্চ ‘প্লুরালিস্ট ইন্ডিয়া’। নয়াদিল্লিতে সদর দফতর খুলে দেশের নানা জায়গায় রাউন্ড টেবল কনফারেন্স করে বহুত্ববাদ ও সহনশীলতার বার্তা প্রচার করছে তারা। কংগ্রেস, বামপন্থী, সমাজবাদী-সহ নানা রাজনৈতিক নেতৃত্ব অন্যান্য জগতের প্রতিনিধিদের পাশাপাশিই এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করছেন।

মঞ্চের উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, দলের ছাতায় কোনও কর্মসূচির আয়োজন হলে সেখানে শামিল হতে অন্য কোনও দলের অসুবিধা থাকতে পারে, ব্যক্তিদের সমস্যা হতে পারে। এমন মঞ্চের তরফে সম্মেলন হলে সেখানে অংশগ্রহণ করতে তেমন সমস্যা থাকার কথা নয়। দিল্লিতে তাদের প্রথম রাউন্ড টেবলে মূল বক্তা ছিলেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক মুকুল ওয়াসনিক, চেন্নাইয়ে ছিলেন সিপিএমের আইনজীবী-সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। লখনউয়ে আসন্ন সম্মেলনে থাকার কথা লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমারের, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সিপিআই ছেড়ে কংগ্রেসে যাওয়া তরুণ নেতা কানহাইয়া কুমারকেও।

এই মঞ্চের যুক্তি, ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা বোঝানো হয়। কিন্তু অসহিষ্ণুতা অন্য ভাষা, সংস্কৃতি বা আরও অনেক কিছুর প্রতিই হতে পারে। তাদের মতে, বহুত্ববাদ এবং সহনশীলতাই ভারতের আসলশক্তি। যে পরম্পরা ভাঙার চেষ্টা করছে আরএসএস-বিজেপি।

এক দেশ, এক ধর্ম, এক ভাষা, এক খাদ্যাভ্যাস— এমন একস্তরীয় ভাবনা ভারতীয় ধারণা ও সংস্কৃতির পরিপন্থী। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছে, যেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বললে উল্টো দিকে আরএসএস-বিজেপিরই সুবিধা হয়ে যাচ্ছে। তাই বহুত্ববাদ ও সহনশীলতাকে রক্ষা করার লড়াই জরুরি বলে মত উঠে আসছে আলোচনায়।

চেন্নাইয়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সিপিএম সাংসদ বিকাশবাবু বলছেন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতাও বহুত্ববাদই। ধর্মনিরপেক্ষতার মানে এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধু হিন্দু-মুসলিম। কিন্তু আসলে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ব্যক্তির ধর্মাচরণে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ থাকবে না। দেশে এখন ঠিক উল্টোটা হচ্ছে। সেই জায়গায় ওঁরা বহুত্ববাদের কথাটা বলতে চাইছেন।’’ তাঁর মতে, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলায় নাগরিক সমাজের একটা বড় ভূমিকা আছে। সেই দিক থেকে এই উদ্যোগ ভাল।’’

সভা-সমাবেশে কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় গল্পের ছলে বলে থাকেন, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যে এক কালে যে গ্রামে ডাকাতি হতো, সেখানে বাইজির আসর বসানো হতো। গ্রামের পুরুষেরা সেই আসরে মগ্ন থাকতেন আর পিছন থেকে ডাকাতেরা গ্রাম লুটে চলে যেত!

নতুন মঞ্চের অন্যতম অঙ্গ হয়ে দেবপ্রসাদবাবু বলছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীরা হিন্দুত্বের নাচ লাগিয়ে পিছনে দেশের সম্পদ বেচে দিচ্ছেন! শুধু একটা হিন্দুত্ববাদী ব্যবস্থা বানিয়েই এঁরা ক্ষান্ত নন, বিপদ খুবই গভীরে।’’ প্রাক্তন সাংসদের মতে, স্বাধীনতার আগে সাম্প্রদায়িক বিরোধের সমস্যা সামাল দিতে তৎকালীন জাতীয় নেতৃত্বকে এত মনোযোগ দিতে হয়েছিল, নতুন দেশের যাত্রা শুরুর সময়ে বহুত্ববাদী সংস্কৃতির অন্যান্য দিক সে ভাবে সামনে আসেনি। বারেবারে এসেছে ধর্মনিরপেক্ষতার কথাই। এখনকার বিপদ মোকাবিলায় যা যথেষ্ট নয় বলে মনে করে শুরু হয়েছে নয়া উদ্যোগ।

RSS BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy