E-Paper

পুরনো বাংলা বছরেই চলছে পুলিশি ক্যালেন্ডার!

পুলিশি ক্যালেন্ডারে ‘ভুল’ থেকে যাওয়ায় কর্মীদের একাংশ মজা করে বলছেন, ‘‘দু’বছরের দিন নিয়ে একটা বছর চলছে। কাজ তো একটু ঢিমেতালে হবেই!’

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ০৮:২২
কলকাতা পুলিশের ক্যালেন্ডারে ভুল লেখা বাংলা সাল।

কলকাতা পুলিশের ক্যালেন্ডারে ভুল লেখা বাংলা সাল। —নিজস্ব চিত্র।

মাস-তারিখের নিয়ম মেনে মধ্য এপ্রিলে এসেছে নতুন বাংলা বছর। সমাজমাধ্যমেও চলেছে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছার পুলিশি প্রচার। কিন্তু বাংলা নতুন বছর আসেনি পুলিশের ক্যালেন্ডারে! অভিযোগ, মাস বদলালেও সেই ক্যালেন্ডারে বাংলা সালের কোনও পরিবর্তন হয়নি। ভুলে ভরা সেই ক্যালেন্ডার লালবাজারের পুলিশকর্তার টেবিল থেকে শুরু করে শোভা পাচ্ছে একাধিক থানা, ট্র্যাফিক গার্ড, ব্যাটালিয়নের অফিসে। বাংলা নববর্ষ পেরোনোর মাসাধিক কাল পরেও পুলিশি ক্যালেন্ডারের এই ‘ভুল’ থেকে যাওয়ায় কর্মীদের একাংশ মজা করে বলছেন, ‘‘দু’বছরের দিন নিয়ে একটা বছর চলছে। কাজ তো একটু ঢিমেতালে হবেই!’’

পঞ্জিকা মতে, ১৪৩১ পেরিয়ে ১৪৩২-এ পড়েছে বাংলা সাল। ইংরেজি তারিখে এক মাসেরও বেশি আগে, ১৫ এপ্রিল হয়েছে বাংলা নতুন বছরের সূচনা। কিন্তু কলকাতা পুলিশের ক্যালেন্ডার দেখলে নববর্ষ বোঝার উপায় নেই! কলকাতা পুলিশ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক লিমিটেড নাম লেখা ক্যালেন্ডারে ইংরেজি সাল, তারিখ সব ঠিক থাকলেও বাংলা সাল রয়ে গিয়েছে ১৪৩১-এই। টেবিল ক্যালেন্ডারের পাতায় পাতায় সেই ‘ভুল’ জ্বলজ্বল করছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশ সমবায়ের উদ্যোগে প্রতি বছর ক্যালেন্ডার তৈরি হয়। টেবিল ক্যালেন্ডারের পাশাপাশি, অন্যান্য ক্যালেন্ডারও দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশের থানা এবং গার্ডগুলিতে। লালবাজারের পুলিশকর্তাদের ঘরেও পৌঁছয় সেটি। ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতেই মূলত এই ক্যালেন্ডার দেওয়া হয়। তাতে ইংরেজি মাসের সঙ্গে বাংলা সাল-তারিখও দেওয়া থাকে রেওয়াজ মেনে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা সালের পরিবর্তন হয়।

কিন্তু চলতি বছরের ওই পুলিশি ক্যালেন্ডারে ইংরেজি মাস, তারিখ ঠিক থাকলেও বাংলা সালের বদল হয়নি। সেই ‘ভুল’ ক্যালেন্ডারের কোনও পাতায় যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রয়েছে, তেমনই কোনও পাতায় আছে কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মার পুরস্কার দেওয়ার ছবি।

কো-অপারেটিভের কর্তাদের ছবিও রয়েছে সেখানে। তবে থানা, ট্র্যাফিক গার্ডের পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন দফতরে থাকা এই ‘ভুল’ ক্যালেন্ডারের জেরে প্রায় বিব্রত হতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশ। এক সহকারী নগরপাল পদমর্যাদার আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রতিদিন পুলিশের কাছে লোকজন আসেন নানা দরকারে। অনেকেরই বিষয়টি চোখে পড়ছে। আমাদের সামনেই হাসি-ঠাট্টা করছেন এটা নিয়ে। এমনিতেই পুলিশকে কিছু না করেও নানা কথা শুনতে হয়। এ ক্ষেত্রে তো পাল্টা কিছু বলার সুযোগই থাকছে না।’’

কিন্তু এই ‘ভুল’ হল কী করে? কেনই বা সেটা কারও চোখে পড়ল না? পুলিশ কো-অপারেটিভের এক কর্তার দাবি, ‘‘এগুলি তো সাধারণত অর্ডার দিয়ে বানানো হয়। কোনও ভাবে ছাপানোর গোলমালে হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। দ্রুত সংশোধন করে নেওয়া হবে।’’

‘আঠারো মাসে বছর!’— সরকারি কোনও দফতরে কাজে গিয়ে লাগাতার হয়রানিই হোক বা দীর্ঘ সময় জুড়ে চলা কাজে ভোগান্তি, নাগরিকেরা প্রায়ই এই প্রবাদ উগরে রাগ প্রশমন করেন। সেই ‘রোষানল’ থেকে বাদ যায় না পুলিশও। গাফিলতির অভিযোগের পাশাপাশি, তদন্তের দীর্ঘসূত্রতায় তাদেরও এই প্রবাদ শুনতে হয়। কিন্তু বাস্তবে পুলিশি ক্যালেন্ডারে বাংলা বছরের এই ‘দীর্ঘ যাত্রা’র কারণ যা-ই হোক, প্রবাদের ‘আঠারো’কে কার্যত ছাপিয়ে গিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police Lalbazar Kolkata Police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy