Advertisement
১১ মে ২০২৪
BJP

BJP: কথা কম, কাজ বেশির নব অনুশাসনে রাজ্য বিজেপি-কে বাঁধতে চান নতুন সভাপতি

সুকান্ত চান ‘কথা কম, কাজ বেশি’। তাঁর গত কয়েকদিনের পদক্ষেপে তা স্পষ্ট। তাঁর অভিমত, যখন কিছু বলার থাকবে তখনই বলা হবে।

ইতিমধ্যেই রাজ্য নেতৃত্বকে নিজের নীতি বুঝিয়ে দিয়েছেন সুকান্ত।

ইতিমধ্যেই রাজ্য নেতৃত্বকে নিজের নীতি বুঝিয়ে দিয়েছেন সুকান্ত। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৪৬
Share: Save:

আলপিন টু এলিফ্যান্ট— বিভিন্ন বিষয়ে কথা। প্রতিক্রিয়া। মন্তব্য। পাল্টা মন্তব্য। দিলীপ ঘোষ জমানার এই ‘রেওয়াজ’ কি বন্ধ করতে চান রাজ্য বিজেপি-র নতুন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার? আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি কিছু বলেননি। দলের অন্দরেও নয়। বাইরেও নয়। কিন্তু পর পর কয়েকটি ঘটনায় দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ তেমনই ভাবছে। যদিও অন্য একাংশের মতে, বিষয়টা তেমন নয়। একেক জনের কাজ করার পদ্ধতি একেক রকম। দিলীপ কথা বলতে ভালবাসেন। সুকান্ত প্রকৃতিগত ভাবেই কম কথার মানুষ। এর মধ্যে নতুন অনুশাসনের কিছু নেই।

দিলীপ এবং তাঁর ঘরানার অন্য নেতারা নির্বিচারে সংবাদমাধ্যমের সামনে বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করে থাকেন। এ বার সেই রীতি ভাঙতে চান সুকান্ত। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের পক্ষে প্রয়োজন অনুযায়ী রাজ্যের প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যই সাংবাদিক বৈঠক করবেন বা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ঠিক করে দিয়েছেন সুকান্ত। এমনকি, তিনি নিজেও সব বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানাবেন না বলে ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন নতুন রাজ্য সভাপতি। তাঁর ঘনিষ্ঠদের ব্যাখ্যা, সুকান্ত মনে করেন, যখন কিছু বলার থাকবে তখনই বলা হবে। সবসময় কিছু না কিছু বলতেই হবে, এমন নয়।

রাজ্য বিজেপি-র একাংশ মনে করছে, মুখে কিছু না বললেও সুকান্ত যে ‘কথা কম, কাজ বেশি’ তত্ত্বে বিশ্বাস করেন, তা তিনি রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে বুঝিয়ে দিয়েছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত সে ভাবে কোনও ‘বিতর্কিত’ বা ‘আলটপকা’ মন্তব্য করেননি তিনি। গত ১ অক্টোবর বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) তাঁকে সংবর্ধনা দেয় রাজ্য বিজেপি। সেখানে ডজন খানেক বক্তা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে কম সময় বক্তৃতা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা সুকান্ত।

গত রবিবার ভবানীপুর-সহ তিন আসনের ফল ঘোষণার দিন সুকান্তের অবস্থান আরও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। ফল যে ৩-০ হবে, সেটা জানা ছিল বিজেপি-র। সেই ফলের পরে কার্যত নীরবই ছিল রাজ্য বিজেপি। সংবাদমাধ্যমের জন্য সুকান্ত একটি ভিডিয়ো বার্তা পাঠিয়ে দেন। পরিকল্পনা মাফিক দলের পক্ষে একটি প্রেস বিবৃতি দেন রাজ্যের সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ভবানীপুরের পরাজিত প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল নেটমাধ্যমে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দেন। এইটুকুই। কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেননি। প্রশ্নোত্তরেরও অবকাশ দেননি। বিজেপি সূত্রের খবর, এটি হয়েছে নতুন রাজ্য সভাপতির নির্দেশে।

তবে নতুন সভাপতির তত্ত্ব পুরনো সভাপতি মানবেন কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরেই সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ, এই বছর গেরুয়া শিবিরের উদ্যোগে দুর্গাপুজো হবে কি হবে না নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে বুধবার মহালয়ার সকালেই মুখ খুলেছেন দিলীপ। তাঁর বক্তব্যে যথারীতি বিতর্কেরও আঁচ রয়েছে। মূলত দলের নেতা সব্যসাচী দত্তর উদ্যোগে গত বছর জাঁকজমক করে পুজো করেছিল বিজেপি। এ বার কি পুজো হবে? সব্যসাচী জানিয়েছেন, গতবার ভোট ছিল। তাই পুজো হয়েছে। এ বার ভোট নেই তাই পুজো নেই। এর প্রেক্ষিতেই দিলীপ বলেছেন, ‘‘বিধি অনুযায়ী পুজো হওয়া উচিত। ভোট দেখে পুজো হওয়া ঠিক নয়। যাঁরা পুজো করেছিলেন তাঁদের চিন্তাভাবনা করা উচিত।’’

দিলীপের এই বক্তব্যে স্পষ্ট, সুকান্তর নতুন নীতি ‘মসৃণ’ হবে কি না, তা নিয়ে কোথাও একটা সংশয় তৈরি হচ্ছে। বিশেষত, যদি প্রাক্তন সভাপতি নিজেই ‘কথা কম, কাজ বেশি’র তত্ত্ব না মানেন। দিলীপকে কি বাগে আনতে পারবেন সুকান্ত? পারবেন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধতে? রাজ্য বিজেপি-র অন্দরমহল আপাতত তাকিয়ে সেদিকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Sukanta Majumdar Dilip Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE