Advertisement
E-Paper

পার্থ বলছেন বেড়েছে আসন, প্রশ্ন তবু বিস্তর

গত চার বছরে রাজ্যে বেশ কিছু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা যাতে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যত্র পাড়ি না দেন, সে জন্যই নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে আসন সংখ্যা বাড়ানোর এই উদ্যোগ বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৫
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, স্বামী সর্বগানন্দ এবং বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ।—নিজস্ব চিত্র।

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, স্বামী সর্বগানন্দ এবং বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ।—নিজস্ব চিত্র।

গত চার বছরে রাজ্যে বেশ কিছু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা যাতে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যত্র পাড়ি না দেন, সে জন্যই নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে আসন সংখ্যা বাড়ানোর এই উদ্যোগ বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

রাজ্যের ছেলেমেয়েদের অন্যত্র পাড়ি না দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সময়ে আবেদন জানিয়েছেন। পার্থবাবুও এ কথা বলেছেন বহু বার। শনিবার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও তিনি সেই আবেদন জানালেন। সেই সঙ্গে তুলে ধরলেন, পড়ুয়াদের রাজ্যে ধরে রাখতে রাজ্য সরকার কী করছে তার খতিয়ান। জানালেন, ২০১১ সালে রাজ্যে যতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, তৃণমূল আসার পরে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে ২৬-এ দাঁড়িয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হওয়ার সুযোগের অভাবেই পড়ুয়ারা অন্যত্র পাড়ি দিতেন। এখন সেই সমস্যা মিটিয়ে ফেলা গিয়েছে। পার্থবাবুর কথায়, “রাজ্যের ছেলেমেয়েদের এখানে ধরে রাখতে সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যেও সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে।”

প্রশ্ন উঠেছে, ছেলেমেয়েরা কি কেবল কলেজ-বিশ্বদ্যালয়ে আসনের অভাবেই রাজ্য ছাড়েন? প্রবীণ শিক্ষকদের একটি বড় অংশ তা মনে করেন না। তাঁদের মতে, রাজ্য ছেড়ে যাঁরা যান, তাঁদের মধ্যে অনেকেই মেধাবী ছাত্রছাত্রী। তাঁরা যান মানের খোঁজে। ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশের কলেজে উন্নততর পরিকাঠামো, সময়ের উপযোগী পাঠ্যক্রম, শিক্ষাদানের উঁচু মান এ সবের টানেও যান তাঁরা। রয়েছে রাজনীতি ও অশান্তির প্রশ্নও। রাজ্যের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপে জেরবার। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেন রাজনৈতিক দলের ক্যাডার তৈরির কারখানা হিসেবে কাজ করে। এটা কেবল এই জমানায় নয়, বাম আমলেও পরিস্থিতি এর চেয়ে আলাদা ছিল না বলেই মত ওই প্রবীণ শিক্ষকদের।

ছাত্র সংসদের দখল নেওয়া থেকে পরীক্ষায় টোকাটুকি, এমনকী, ফেল করা পড়ুয়াদের পাশ করানোর দাবিতে এখানকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিত্য অশান্তি, মারামারি লেগেই থাকে। একেই শিক্ষার পরিবেশের এই হাল, তার উপরে যথাযথ পরিকাঠামো ও শিক্ষক-শিক্ষিকার বন্দোবস্ত ছাড়াই চালু করে দেওয়া হচ্ছে অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রেই খবর, বাম আমলের শেষের দিকে তৈরি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে। ঘাটতি রয়েছে সময়োপোযোগী পাঠ্যক্রমেরও। ফলে শিক্ষার পরিকাঠামো, পরিবেশ ও মানের অভাবে ধুঁকতে থাকা রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক ছাত্রছাত্রী।

প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় যেমন মনে করেন, পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো ছাড়াই যত্র-তত্র কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলছে রাজ্য সরকার। ফলে ছাত্রছাত্রীরা আসতে চাইছেন না। তাঁর কথায়, “সরকার গুণগত মানের থেকে আয়তনগত মানের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। এটা কাম্য নয়।” শিক্ষার পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হওয়াকেও ছাত্রছাত্রীদের অন্যত্র চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করছেন ওই প্রবীণ শিক্ষক। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়পত্র দিয়ে সরকার শিক্ষাকে টাকা তোলার কারখানায় পরিণত করছে।”

যদিও নরেন্দ্রপুরের ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মানোন্নয়নে নজর দেওয়া হয়েছে। উচ্চ মানের পাঠ্যক্রম, পরিকাঠামো ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির ব্যাপারেও রাজ্য সরকার উদ্যোগী।

যদিও অভিজ্ঞতা সে কথা বলছে না। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আমলে পরিকল্পিত কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতিতে স্নাতক স্তরে ছাত্রভর্তির পদ্ধতি বাতিল করে কলেজভিত্তিক অনলাইন চালু হয়েছে পার্থবাবুরই আমলে। এর ফলে ছাত্রভর্তিতে ছাত্র সংসদের দাপাদাপির পথই খোলা থাকল বলে মনে করছেন অনেকে। অভিযোগ, বাম আমলের মতোই এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে দলীয় আনুগত্যই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই, নেহাতই সংখ্যার বিচারে এগিয়ে থাকার যে হিসেব শিক্ষামন্ত্রী দিয়েছেন, তা কতটা গ্রহণযোগ্য, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেক প্রবীণ শিক্ষক।

যদিও এর উল্টো মতও আছে। যেমন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, “এখান থেকে যে অনেক ছাত্রছাত্রী বাইরে পড়তে যান, আমি তার সঙ্গে একশো ভাগ একমত নই। বাইরে থেকেও তো অনেকে এখানে পড়তে আসেন।”

partha chatterjee narendrapur ramkrishna mission Sducation minister Student College University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy