Advertisement
E-Paper

বিশাল বাড়িও হাঁকিয়ে বসেছিল নাজমা

বিশাল বাড়ির নীচতলায় ‘বৈদ্য ক্লিনিক’ খুলে বসেছিল নাজমা বিবি। এলাকায় হাতুড়ে হিসাবে পরিচিতিও কম ছিল না। সেই সুবাদে ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা চালাত। যদিও এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, মূলত গর্ভপাত করানোই ছিল ক্নিনিকের কাজ। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কারা আসত সেখানে?

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৫
বসিরহাট হাসপাতালে যত্ন নেওয়া হচ্ছে উদ্ধার হওয়া দু’টি শিশুর।

বসিরহাট হাসপাতালে যত্ন নেওয়া হচ্ছে উদ্ধার হওয়া দু’টি শিশুর।

বিশাল বাড়ির নীচতলায় ‘বৈদ্য ক্লিনিক’ খুলে বসেছিল নাজমা বিবি। এলাকায় হাতুড়ে হিসাবে পরিচিতিও কম ছিল না। সেই সুবাদে ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা চালাত। যদিও এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, মূলত গর্ভপাত করানোই ছিল ক্নিনিকের কাজ। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

কারা আসত সেখানে?

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বাদুড়িয়া, বসিরহাট তো বটেই দূরদূরান্ত থেকেও অনেক মহিলা আনাগোনা করতেন সেখানে। বাদুড়িয়ার যদুরহাটি হাসপাতালে মোড়ে ওই ক্লিনিকের থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মাটিয়া যৌনপল্লি। সেখান থেকেও মেয়েরা আসত। মুম্বই-সহ অন্য যৌনপল্লিতে কাজের সূত্রে গর্ভবতী হয়েও নাজমার ক্লিনিকে এসে অনেকে গর্ভপাত করিয়ে যেতেন।

নাজমার স্বামী বাগবুল বৈদ্য আবার যদুরহাটি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য। এলাকায় কাপড়ের দোকানও আছে। সেই দোকান থেকেও শিশু পাচারের কারবার চালাত নাজমা, জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ওই ক্লিনিক, দোকান সিল করে গিয়েছেন তাঁরা। ওই দম্পতি-সহ গ্রেফতার হয়েছে আরও ৮ জন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বাদুড়িয়া, দমদম, হাবরা, বেড়াচাঁপা, হাড়োয়া, দুর্গানগর এলাকা দিয়ে নারী পাচারের পাশাপাশি শিশু পাচারও বেড়েছে বলে খবর পান রাজ্য গোয়েন্দারা। আরও জানতে পারেন, এই সব এলাকায় নার্সিংহোম, ক্লিনিক, দোকানকে সামনে রেখে রমরমিয়ে চলছে শিশু পাচারের ব্যবসা।


এই সেই বাড়ি। (ডানদিকে) কুকীর্তির সাক্ষ্য বহন করছে এই নার্সিংহোম।

সোমবার সিআইডি অফিসার সৌগত ঘোষের নেতৃত্ব স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চলে। ‘সোহান’ নার্সিংহোমের মালিক আসাদুর জামান ওরফে রবিউলও ধরা পড়েছে। তাকে জেরা করে একটি ট্রাস্টিবোর্ডের আধিকারিক অতিক্রম ব্যাপারীর নাম জানতে পারেন তদন্তকারীরা। তার দমদমের বাড়িতে হানা দেয় সিআইডি। অতিক্রমকে না পাওয়া গেলেও তার স্ত্রী উৎপলাকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার যদুরহাটিতে গিয়ে দেখা গেল, বৈদ্য ক্লিনিকের সামনে মানুষের ভিড়। আগে স্থানীয় শ্রীরামপুর গ্রামে থাকত বাগবুলরা। কয়েক মাস আগে গ্রাম ছেড়ে বড় রাস্তার পাশে বিশাল দোতলা বাড়িতে এসে ওঠে। মাফিজুল মণ্ডল, সুমন বৈদ্য নামে স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, নাজমার ক্লিনিক থেকে গর্ভপাত করানো হতো, সেটা অজানা নয় কারও। অল্পবয়সী মেয়েদের গর্ভপাত করাতে গিয়ে অসুবিধা হলে নিয়ে যাওয়া হতো বাগজোলার সোহান নার্সিংহোমে।


আদালতের পথে ধৃতেরা।

সুরত আলি মণ্ডলের তিনতলা বাড়ির দু’টি তলা ভাড়া নিয়ে চলছিল নার্সিংহোম। ১০১৩ সালে মাসিক সাড়ে ৪ হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ১৬ বছরের চুক্তি ছিল বাড়ির মালিকের সঙ্গে। রবিউল ইসলাম, বাবলু মণ্ডল, আয়ানুর ইসলাম মণ্ডলরা বলেন, ‘‘এখানে যে নানা অসামাজিক কাজকর্ম হয়, তা এলাকার সকলেরই জানা। সন্ধের পর বহিরাগতদের ভিড় বাড়ে নার্সিংহোমে। মদ-জুয়ার আসর বসত। পুলিশ জানিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে ওই নার্সিংহোমের এক চিকিৎসক নার্সের শ্লীলতাহানির অভিযোগে জড়িয়ে পড়ে। মালিক-সহ ওই চিকিৎসক গ্রেফতারও হয়েছিল।

কিন্তু এত সব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কী করে নার্সিংহোমের জন্য অনুমতি দিল পঞ্চায়েত? বাগজোলা পঞ্চায়েতের সদস্য গিয়াসুদ্দিন মনসুরি বলেন, ‘‘প্রথমে ভাল কাজ মনে করে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। নার্সিংহোমের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নার্সের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠার পর থেকে নার্সিংহোম বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাতিল করা হয় অনুমতিপত্র। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আদালতের কাগজ দেখানোর পরে বাধ্য হয়ে নার্সিংহোম খোলার অনুমতি দেওয়া হয়।’’

Baduria Newborn Trafficking Racket Busted 8 Arrested
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy