সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে দেশজোড়া আন্দোলনে প্রবল চাপের মুখে যখন মোদী-শাহ স্ববিরোধী কথা বলছেন, তখন ওই আইনের পক্ষে জনমত গড়তে প্রচার-পুস্তিকা সামনে নিয়ে এল বিজেপি। রাজ্য বিজেপির তরফে রবিবার প্রকাশিত ওই পুস্তিকার শেষ পাতায় ১৪ নম্বর প্রশ্ন রাখা হয়েছে, ‘এর পর কি তবে এনআরসি?’ জবাবে লেখা হয়েছে, ‘হ্যাঁ, এর পরে এনআরসি। অন্তত কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব সে রকমই।’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশজোড়া সিএএ বিরোধী আন্দোলনের চাপে বিড়ম্বনায় পড়া বিজেপি-র দলীয় পুস্তিকায় এমন ঘোষণা আসলে বিরোধীদের উপর পাল্টা চাপের কৌশল। এনআরসি হবে বলে ঘোষণা করে দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা করারও চেষ্টা করল তারা।
সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, সারা দেশেই এনআরসি হবে। কিন্তু সিএএ-র বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে বিক্ষোভের মাঝপথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেন, এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। পর দিন শাহও একই দাবি করেন। তার পর থেকে এনআরসি-প্রশ্নে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ কৌশল নিয়ে চলছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ অন্যান্য নেতা বলছেন, এনআরসি দরকার। কিন্তু তা কবে এবং কী ভাবে হবে, ঠিক নেই। কিন্তু এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বিজেপির রাজ্য দফতরে সিএএ সংক্রান্ত পুস্তিকা প্রকাশের পরে বিরোধী দলগুলি বলছে, বিজেপি নিজেই ঝুলি থেকে বেড়াল বের করে আনল!
ওই পুস্তিকার শেষ পাতায় আরও বলা হয়েছে, ‘সিএবি পাশ হয়ে যাওয়ার পরে এখন এনআরসি হলে বস্তুত পক্ষে ডি-ভোটার তালিকায় কোনও হিন্দু-শিখ-জৈন-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা পার্সির নাম থাকবে না। হিন্দু-শিখদের হোমল্যান্ড তাদের জন্য সুরক্ষিত।’ যার প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, মুখে নানা কথা বলে বিজেপি মানুষকে ‘বিভ্রান্ত’ করতে চাইছে। কিন্তু আসলে যে তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে বিভাজনের নীতিতেই এগোচ্ছে, তা তাদের পুস্তিকাতেই স্পষ্ট।
তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি কী চায়, এখন বুঝতে কারও বাকি নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নাগরিক আন্দোলনকেই আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মানুষ বিজেপির লক্ষ্যপূরণ হতে দেবেন না।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ফ্যাসিস্ত বিজেপির মুখ এবং মুখোশের মধ্যে যে ফারাক আছে, তা আবার স্পষ্ট হল।’’ সিএএ-র বিরুদ্ধে যৌথ কর্মসূচি ঠিক করতে আগামী ১৩ জানুয়ারি দিল্লিতে বৈঠক করবে বিরোধী দলগুলি। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাবুল এ দিন বলেছেন, ‘‘কোনও ভারতীয়কে কাগজ দেখাতে হবে না। যাঁদের পাসপোর্ট নেই, আধার কার্ড নেই, তাঁরা যাবেন। কিন্তু যাঁদের পাসপোর্ট আছে, তাঁদের যাওয়ার দরকারটা কী?’’ কয়েক দিন আগেই শাহ বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন স্বীকৃত ১৪টি নথি থাকলেই নাগরিকত্ব প্রমাণ হয় না। একই বিষয়ে বাবুল এবং শাহ-র এই দু’রকম মন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।