Advertisement
E-Paper

ঠান্ডায় সন্তান বুকে কাঁপছেন অনিতারা

মশাতে রক্ষা নেই, দোসর শীত। আর এই দুই জোড়া কামড়ে ত্রাহি ত্রাহি রব জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে। নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন মেঝেতে সদ্যোজাতকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকতে হচ্ছে বহু মহিলাকে। অভিযোগ, সব জেনেও কোনও হেলদোল নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৪৩
তখনও জলে ভিজে যাওয়া বিছানায় শুয়ে আছেন মেহেরুন বিবি। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

তখনও জলে ভিজে যাওয়া বিছানায় শুয়ে আছেন মেহেরুন বিবি। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

মশাতে রক্ষা নেই, দোসর শীত। আর এই দুই জোড়া কামড়ে ত্রাহি ত্রাহি রব জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে। নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন মেঝেতে সদ্যোজাতকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকতে হচ্ছে বহু মহিলাকে। অভিযোগ, সব জেনেও কোনও হেলদোল নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় জঙ্গিপুরের রহমানপুর গ্রামের করিনা বিবিকে। ওই রাতেই তিনি সন্তানের জন্ম দেন। শয্যা না থাকায় সদ্যোজাতকে নিয়ে তাঁর ঠাঁই হয় মেঝেতে। করিনা বলছেন, ‘‘গরম কাল হলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু এখন তো সন্ধ্যার পর থেকে মেঝে ফুঁড়ে ঠান্ডা উঠছে। তার উপরে মশার উপদ্রব। সরকার চারিদিকে এত টাকা খরচ করছে। আমাদের জন্য কি একটা চৌকিও দিতে পারে না?’’

ফরাক্কার কাশিমনগরের অনিতা চৌধুরী এখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচেন। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে তিনি সোমবার রাতে হাসপাতালে এসেছিলেন। মঙ্গলবার সকালে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাঁরও বরাতে শয্যা জোটেনি। মেঝের এক কোণে পাতলা চাদরে সদ্যোজাতকে নিয়ে শুয়েছিলেন তিনি। ‘‘উত্তুরে হাওয়া দিলেই কেঁপে কেঁপে উঠছি। এই ঠান্ডা মেঝেতে থাকা যাচ্ছে না। ডাক্তারবাবুকে বলেছি, তাড়াতাড়ি ছুটি দিতে। এখানে থাকলে মরে যাব।’’ বলছেন অনিতা।

মেঝেতে পড়ে থাকা রোগীদের মধ্যে সবথেকে করুণ অবস্থা বছর চব্বিশের মেহেরুন বিবির। বীরভূমের লক্ষীডাঙার ওই মহিলা মঙ্গলবার ভোরে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সদ্যোজাতকে নিয়ে তিনি যেখানে শুয়েছিলেন ঠিক তার উপরের জানালায় ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। সেই এসি মেশিনের জলে তাঁর বিছানা জলে ভিজে গিয়েছিল। সেই অবস্থাতেই টানা বারো ঘণ্টা পড়েছিলেন তিনি। মেহেরুনের মা বেশ কয়েকবার নার্সদের কাছে বিষয়টি জানালেও কেউ তাঁর কথায় কান দেয়নি বলে অভিযোগ। পরে সংবাদমাধ্যমের লোকজন ওই মহিলার ছবি তোলার পরে নড়েচড়ে বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া রান্নাঘরের সামনে। ক্ষুব্ধ মেহেরুনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এর থেকে নরকও বোধহয় ঢের ভাল!’’

জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে এমন ঘটনা নতুন নয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই মহকুমা হাসপাতালের উপরে প্রায় কুড়ি লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। তাছাড়া পড়শি এলাকা বীরভূম ও ঝাড়খণ্ড এলাকা থেকেও বহু রোগী আসেন। এই মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মী সবই রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সরকারের ঢাকঢোল পেটানোর তো বিরাম নেই। কিন্তু গাঁ-গঞ্জের হাসপাতালের বাস্তব পরিস্থিতির ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর্তারা আদৌ কতটা খোঁজ রাখেন সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।’’

জঙ্গিপুর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে শয্যা রয়েছে ১৪০টি। অথচ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৯৫ জন প্রসূতি ভর্তি ছিলেন। ফলে বাকি ৫৫ জনকেই থাকতে হয়েছে মেঝেতে। যাঁরা শয্যা পেয়েছেন তাঁদের অবস্থাও যে খুব ভাল সেটাও হলফ করে বলা যায় না। সেখানেও শয্যাগুলোকে এমন ভাবে রাখা হয়েছে যে পা ফেলার জায়গাটুকুও নেই। ঠান্ডা পড়ে যাওয়ায় পাখা এখন বন্ধ। হাসপাতাল চত্বরে নোংরা, আবর্জনা, জমা জলের সৌজন্যে মশার উপদ্রব সাঙ্ঘাতিক। বেশিরভাগ প্রসূতিদের মশারিটুকুও জোটে না। যাঁরা বাড়ি থেকে মশারি সঙ্গে আনেন তাঁরাও জায়গা না থাকায় সে মশারি টাঙাতে পারেন না। দরজা জানালা বন্ধ করে মশা তাড়ানোর ধূপ জ্বেলে সে এক চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

রঘুনাথগঞ্জের বাসিন্দা বাসনা হালদারও প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতাল থেকে দেওয়া পাতলা কম্বলে শীত ভাঙছে না। রাতে মশার দাপটে ঘুমোতে পারছি না। আমিও বলেছি তাড়তাড়ি ছুটি দিয়ে দিতে। এখানে থাকলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ব।’’ সমস্যার কথা মানছেন হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হলে আমরা কি করব? কাউকে তো আর ফিরিয়ে দিতে পারি না। অন্য কোনও ঘরও নেই যে, সেখানে ওঁদের সরিয়ে নিয়ে যাব।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘পাশেই নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। সেখানেই এই সব ওয়ার্ডগুলি সরিয়ে দেওয়া হবে। তখন আর এই সমস্যা থাকবে না।’’

state news jangipur mahakuma hospital lack of bed in hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy