Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Suresh Prabhu

প্রভুর ভোজনের পরেও পাল্টায়নি হাওড়ার জগদীশের জীবনযাত্রা

ট্যান্ডেল বাগানের মল্লিকবাড়ি ঘুরে খোঁজখবর নিল আনন্দবাজার ডিজিটাল।

মধ্যাহ্নভোজের সেই দিন। —ফাইল চিত্র

মধ্যাহ্নভোজের সেই দিন। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৫৮
Share: Save:

সূচনা হয়েছিল জলপাইগুড়ির নকশালবাড়ি থেকে। তার পরেও বিজেপি-র বহু নেতা-নেত্রী এ রাজ্যে এসে গরিব বা নিম্নবিত্তদের বাড়িতে খাবার খেয়েছেন। ভোটমুখী বাংলায় অমিত শাহের সফরে আবার ফিরল সেই ‘ভোজন রাজনীতি’। কেমন আছে সেই সব পরিবার? নকশালবাড়ির মাহালি দম্পতির মতোই হাওড়ার একটি আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু-সহ বিজেপি নেতারা। আদৌ কি পাল্টেছে তাঁদের জীবনযাত্রা? ট্যান্ডেল বাগানের মল্লিকবাড়ি ঘুরে সেই খোঁজখবর নিল আনন্দবাজার ডিজিটাল।

সালটা ২০১৭। ১৭ এপ্রিল হাওড়ায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তৎরকালীন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। সেই কর্মসূচি শেষে ট্যান্ডেল বাগানের জগদীশ মল্লিকের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন সুরেশ, দিলীপ ঘোষ-সহ রাজ্য বিজেপির কয়েক জন শীর্ষ নেতা-নেত্রী। বর্তমানে রেলের অবসরপ্রাপ্ত সাফাইকর্মী জগদীশ মল্লিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সে দিন নিজের হাতে ভাত, ডাল, রুটি সব্জি, ভেন্ডি ভাজার মতো পঞ্চব্যাঞ্জন বানিয়ে নিজে হাতে পরিবেশন করেছিলেন। শেষ পাতে ছিল দু’রকম মিষ্টি। সে দিন একসঙ্গে এত ভিভিআইপি-কে একসঙ্গে পেয়ে আপ্লুত ছিল হতদরিদ্র এই আদিবাসী পরিবার। ঘোর কাটতেই লেগেছিল বেশ কিছু দিন।

সে দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জগদীশ বলছিলেন, ‘‘তৎকালীন রেলমন্ত্রীকে আদর আপ্যায়ন করে যে কী খুশি হয়েছিলাম ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না। আর রেলমন্ত্রীর মতো অত বড় মাপের মানুষ যে আমাদের এই ভাঙাচোরা কোয়ার্টারে আসবেন, এটা ছিল আমার স্বপ্নেরও অতীত। তাই সাধ্যের বাইরে গিয়েও যতটা সম্ভব আয়োজন করেছিলাম।’’

কিন্তু তার পর? এই প্রশ্নে জগদীশের চোখেমুখে সুখস্মতি রোমন্থনের অনাবিল আনন্দ যেন আচমকা মিলিয়ে যায়। উদাসীন আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘‘২০১৫ সালের জুন মাসে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। আগে যে ভাঙাচোরা কোয়ার্টারে থাকতাম, অবসরের পর সেটাও ছেড়ে দিতে হয়েছে। ভাইপো রেলের অস্থায়ী কর্মী। তাঁর দয়ায় পাশের একটা কোয়ার্টারে আছি।’’

আরও পড়ুন: বাংলায় ক্ষমতায় আসব: অমিত ।। দিবাস্বপ্ন দেখছে বিজেপি: সৌগত

স্ত্রী আর ছোট ছেলে সুজিতকে নিয়ে তিন জনের সংসার জগদীশের। সুজিত একটি বেসরকারি সংস্থায় ছোটখাটো চাকরি করেন। জগদীশ বলেন, ‘‘নিজের সামান্য পেনশন আর সুজিতের রোজগারে কোনও রকমে সংসার চলে।’’

সুরেশ না হয় দিল্লিতে। দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যস্ততায় খোঁজ-খবর নিতে পারেন না। রাজ্য বিজেপি-র নেতারা? তাঁরা পরে আর কখনও আসেননি? জগদীশ বলেন, ‘‘বাড়িতে আসা দূরের কথা, ফোনেও কেউ কোনও দিন খোঁজ নেননি।’’ বাইরে দাঁড়িয়ে জগদীশ বলে চলেন, ‘‘এই যে দেখছেন, এই কোয়ার্টারে আমার নিজের কোনও ঘর পর্যন্ত নেই। রেল কোয়ার্টারে বর্ষাকালে জল জমে যায়। মশার উপদ্রব আর ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার সঙ্গে বছরভর বাস আমাদের। কিন্তু উপায় তো কিছু নেই।’’

আরও পড়ুন: সাড়ে সাত মাস পর বুধবার থেকে রাজ্যে চালু হচ্ছে সীমিত লোকাল ট্রেন

স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য উপেক্ষার এই অভিযোগ মানতে নারাজ। উত্তর হাওড়ার বিজেপি নেতা উমেশ রায় বলেন, ‘‘এ সব তৃণমূলের রটনা। ওই পরিবারের খোঁজখবর আমরা নিয়মিত রাখি। ওঁরা সবাই ভাল আছেন। মন্ত্রীর ওই মধ্যাহ্নভোজনের পরে বিজেপি-র প্রতি তাঁদের আগ্রহও বেড়েছে। ছোট ছেলে তো আমাদের দলের কর্মী। দলিত আদিবাসী পরিবারের পাশে বিজেপি নেতৃত্ব সব সময়েই আছে।’’

ট্যান্ডেল বাগান এলাকায় প্রচুর দলিত-জনজাতি মানুষের বাস। সুরেশ প্রভুর মধ্যাহ্নভোজের দিন জগদীশের কোয়ার্টারের চৌহদ্দিতে তাঁরাও কিন্তু ভিড় জমিয়েছিলেন। হাত লাগিয়েছিলেন মন্ত্রীর আপ্যায়নের জোগাড়ে। তাঁদের মধ্যেও কিন্তু ক্ষোভ-অসন্তোষ রয়েছে। তাঁদের সিংহ ভাগের বক্তব্য, আদিবাসী বাড়িতে এক দিনের ভোজনে বিজেপির কী রাজনৈতিক লাভ হয়েছে, সেটা তাঁরা বলতে পারবেন না। কিন্তু এলাকার যে কোনও উন্নতি হয়নি, সেটা স্পষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suresh Prabhu Howrah BJP Lunch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE