Advertisement
১৯ মে ২০২৪
ইঞ্জিনিয়ারিং

মেধার সঙ্গে আপস করে ভর্তি নয়: পার্থ

জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় নম্বরের ভিত্তিতে কোন ছাত্র বা ছাত্রী ঠিক কোথায় ঠাঁই পেয়েছেন, সেই ‘র‌্যাঙ্ক কার্ড’ সকলেই পাবেন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে মেধাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় নম্বরের ভিত্তিতে কোন ছাত্র বা ছাত্রী ঠিক কোথায় ঠাঁই পেয়েছেন, সেই ‘র‌্যাঙ্ক কার্ড’ সকলেই পাবেন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে মেধাই।

বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘শিক্ষা প্রদর্শনী’-তে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধার সঙ্গে কোনও রকম আপস করা হবে না। পড়ুয়াদের ভর্তি হবে করা অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন বা এআইসিটিই-র নিয়ম মেনেই। ‘‘বেআইনি ভাবে কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে বলে যদি খবর পাই, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবো,’’ বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। একই সঙ্গে মন্ত্রী জানান, সরকারি ভাবে আইন এবং মাইনিং কলেজ তৈরির ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে।

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির ব্যাপারে সর্বভারতীয় প্রযুক্তি শিক্ষা সংসদের নিয়মবিধিটা ঠিক কী রকম?

এআইসিটিই-র নিয়ম বলছে: উচ্চ মাধ্যমিক বা তার সমতুল পরীক্ষায় গড়ে কমপক্ষে মোট ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতেই হবে। তা ছাড়া আলাদা ভাবে অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে ৪৫ শতাংশের কম পেলে কেউই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হতে পারবেন না। শুধু তা-ই নয়, ইংরেজিতেও ন্যূনতম ৩০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিকে কোনও পড়ুয়ার ফল হয়তো ভাল নয়। অথচ জয়েন্ট এন্ট্রান্সে তিনি ভাল র‌্যাঙ্ক করেছেন। তাঁর ক্ষেত্রেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি মসৃণ হবে না। বাধা আসতেই পারে।

অর্থাৎ এনআইসিটিই-র নিয়মেই মেধার ভিত্তিতে ভর্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত করা আছে। তা হলে খোদ শিক্ষামন্ত্রীকে ফের মেধা-ভিত্তিক ভর্তির কথা বলতে হচ্ছে কেন?

আসলে এ বার ইঞ্জিনিয়ারিং জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলপ্রকাশের দিনে ওই পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক বোর্ড বলেছিল, প্রবেশিকায় শূন্য, এমনকী শূন্যের চেয়ে কম (নেগেটিভ মার্কস) নম্বর পেলেও সব পরীক্ষার্থীই কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ পাবেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, র‌্যাঙ্ক কার্ডও দেওয়া হবে সকলকেই। শুরু হয় বিতর্ক। শিক্ষা শিবিরের একাংশের আশঙ্কা, মেধার সঙ্গে আপস করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বেনো জল ঢোকার পথ করে দেওয়া হচ্ছে। গত বার রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে অর্ধেকেরও বেশি আসন ভর্তি হয়নি। এ বারেও যাতে সেই অবস্থা না-হয়, তার জন্য রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড মেধার সঙ্গে আপস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন স্তরে। শিক্ষা শিবিরের একাটি অংশের বক্তব্য, এতে ইঞ্জিনিয়ারিং পঠনপাঠনের মান তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। এই প্রশ্নও ওঠে যে, সকলেই যদি কাউন্সেলিংয়ে সুযোগ পান, তা হলে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখে লাভটা কী? সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা-সহ বিভিন্ন বিপর্যয়ের উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মান অবনমনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকেই।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণায় শিক্ষামান রক্ষার আশ্বাস পাচ্ছে শিক্ষা শিবির। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান সজল দাশগুপ্তও এ দিন বলেন, ‘‘র‌্যাঙ্ক কার্ড মানে পাসপোর্ট দেওয়া নয়। র‌্যাঙ্ক কার্ড হাতে পেলেই যে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির দরজা খুলে যাবে, তা নয়। পড়ুয়া যে সব দিক থেকে যোগ্য, তার প্রমাণ দিতে হবে।’’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড জানাচ্ছে, এ রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার আসন রয়েছে ৩৬ হাজার। কিন্তু প্রকাশিত মেধা-তালিকায় নাম রয়েছে এক লক্ষ ১৯৫৪ জনের। তারও উপরে রয়েছে এআইসিটিই-র নিয়মবিধি। পরীক্ষার্থী ও আসন-সংখ্যার তফাতটাই বলে দিচ্ছে, যেমন-তেমন নম্বর পেয়ে ভর্তি হওয়ার জায়গা নেই। সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়ে যোগ্য প্রমাণিত হলে তবেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঠাঁই পাওয়া যাবে। প্রবেশিকা ছাড়াও সেখানে গুরুত্ব পাবে উচ্চ মাধ্যমিক বা তার সমতুল পরীক্ষার ফল। সুতরাং জয়েন্ট এন্ট্রান্সে কম র‌্যাঙ্ক পাওয়া পড়ুয়া যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না, সেটাই জোর দিয়ে বোঝাতে চাইছেন বোর্ডের কর্তারা।

তা হলে সব পরীক্ষার্থীকে র‌্যাঙ্ক কার্ড দেওয়াই বা কেন? রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের প্রধান সজলবাবু জানাচ্ছেন, সিবিএসই যে-সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা নেয়, তাতেও সকলকেই র‌্যাঙ্ক কার্ড দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Educational Minister Engenering
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE