ঝাড়খণ্ড এবং লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গের উপরে একাধিক বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়েছিল। বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলির উপর দিয়ে তা কলকাতার দিকে আসতে শুরুও করেছিল। কিন্তু হুগলির উপরেই মেঘটির বেশির ভাগ অংশ ভেঙে পড়ায় কলকাতায় বৃষ্টি যেটুকু হল, দহনজ্বালা তাতে জুড়োল না। তাপমাত্রা কিছুটা নামল, এই যা!
অর্থাৎ রে়ডার-চিত্রে তাকিয়ে থাকাই সার! পশ্চিমের মেঘ যেন কলকাতার রাস্তা মাড়াতে চাইছে না কিছুতেই! আলিপুরের হাওয়া অফিসে বসে মেঘের এই অনীহার আঁচ পাচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিত্যদিনই ঝাড়খণ্ডে মেঘ তৈরি হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গের দিকে তা ধেয়ে আসছে। কিন্তু জেলা পেরোতে না-পেরোতেই সেই মেঘ ভেঙে যাচ্ছে। ফলে কলকাতায় যা পৌঁছচ্ছে, তা কিঞ্চিৎ স্বস্তি দিচ্ছে বটে। কিন্তু পুরোপুরি জ্বালা জুড়োতে পারছে না। কখনও কখনও মুখ ঘুরিয়ে সোজা পাড়ি দিচ্ছে বাংলাদেশের দিকে।
এ দিন একাধিক মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়েছিল ঝাড়খণ্ড-ওড়িশায়। কিন্তু সন্ধ্যার সামান্য একটু মেঘ ছাড়া তার প্রায় কিছুই কলকাতায় এসে পৌঁছয়নি। রে়ডার-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানান, রবিবার ঝাড়খণ্ড থেকে একটি মাঝারি আকারের মেঘপুঞ্জ বাঁকুড়া হয়ে বর্ধমান, দুর্গাপুরে ঢুকতে না-ঢুকতেই মেঘ ভেঙে গিয়েছিল। সেই ভাঙা মেঘ বয়ে এসেছিল মহানগরের দিকে। তার দাক্ষিণ্যেই বয়ে গিয়েছিল দমকা হাওয়া, বৃষ্টিও মিলেছিল কমবেশি। রাতের তাপমাত্রা এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছিল অনেকটা। মেঘটি পরিপূর্ণ চেহারা নিয়ে বয়ে এলে ঝড়বৃষ্টির জোর অনেক বেশি হতো। আবার ২৩ এপ্রিল রাতে কলকাতার দিকে আসতে আসতে হাওয়ার টানে মেঘ চলে গিয়েছিল নদিয়া, মুর্শিদাবাদ পেরিয়ে বাংলাদেশের দিকে। সাধারণ ভাবে এপ্রিলে মহানগরে অন্তত ২-৩টি কালবৈশাখী হওয়ার কথা। কিন্তু এ বছর এপ্রিলে মাত্র একটি কালবৈশাখী পেয়েছে কলকাতা।
আরও খবর: পানীয় জলের তীব্র অভাব সুন্দরবনে
কেন আকাল কালবৈশাখীর? কেন মেঘ আসছে না কলকাতার দিকে?
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ঝাড়খণ্ডে এ বার খুব শক্তিশালী মেঘ তৈরি হচ্ছে না। অনেক সময় একের পর এক মেঘ তৈরি হতে থাকে। তার ফলে একটি মেঘ ভেঙে গেলেও ঝড়বৃষ্টি থেমে থাকে না। ক্রমশ গোলার মতো মেঘ তৈরি হতে থাকায় অনেক বড় এলাকা জুড়ে কালবৈশাখী হয়। তার ফলে জেলা এবং মহানগর, দুই এলাকাই প্রায় সমান ভাবে ঝড়বৃষ্টি পায়। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, এ বছর বায়ুপ্রবাহের অভিমুখও হঠাৎ হঠাৎ বদলে যাচ্ছে। সেই জন্য মেঘও কলকাতার বদলে এ-দিকে সে-দিকে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি এক রাতে রেডার-চিত্র দেখে কলকাতায় ঝড়বৃষ্টির আভাস দিয়েছিলেন আবহবিদেরা। কিন্তু হাওয়ার মতি বদলে মহানগরের কান ঘেঁষে মেঘ চলে গিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিকে। এমনকী কলকাতার উপকণ্ঠে সোনারপুর-রাজপুরেও ভাল ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু মহানগরের মাথায় জল পড়েনি বললেই চলে।
কৃষি-আবহবিদেরা জানান, এই সময়ে বৃষ্টির বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। বিশেষ করে পাট ও তিল চাষের জন্য বৃষ্টি খুব দরকার। এ বার কলকাতায় কালবৈশাখী না-হলেও জেলাগুলিতে প্রায় রোজই কমবেশি ঝ়ড়বৃষ্টি হয়েছে। ফলে চাষের ক্ষেত্রে তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।
কলকাতাবাসীর প্রশ্ন, কবে বড় আকারের মেঘ আসবে মহানগরের দিকে? সন্ধ্যার ঝড়বৃষ্টিতে কবে কেটে যাবে নাকাল করা গরমের জ্বালা?
উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানীরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy