Advertisement
E-Paper

নেই শূন্যপদে নিয়োগ, শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে রাজ্যের মাদ্রাসাগুলো

চিত্র এক: দু’শো ছাত্রকে সামলাচ্ছেন এক জন শিক্ষক। হুগলির খানাখুলের হীরাপুর জুনিয়র হাইমাদ্রাসায় প্রধানশিক্ষক ছাড়া আর কোনও শিক্ষক নেই। কোনও শিক্ষাকর্মীও নেই। ২০০৯ সালে মাত্র তিন জন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস শুরু হয়েছিল। বছর দুয়েক আগে দু’জন অবসর নেওয়ার পর এখন প্রধানশিক্ষকই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র সম্বল!

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ১৬:১৯

চিত্র এক: দু’শো ছাত্রকে সামলাচ্ছেন এক জন শিক্ষক। হুগলির খানাখুলের হীরাপুর জুনিয়র হাইমাদ্রাসায় প্রধানশিক্ষক ছাড়া আর কোনও শিক্ষক নেই। কোনও শিক্ষাকর্মীও নেই। ২০০৯ সালে মাত্র তিন জন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস শুরু হয়েছিল। বছর দুয়েক আগে দু’জন অবসর নেওয়ার পর এখন প্রধানশিক্ষকই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র সম্বল!

চিত্র দুই: কলকাতার এন্টালির তাঁতিবাগ গার্লস হাইমাদ্রাসা। ছাত্রী সংখ্যা প্রায় তিনশো। শিক্ষক রয়েছেন তিন জন। ইংরাজি, অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান, ভূগোলের শিক্ষক নেই তিন বছর। ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক সামনের অক্টোবরে অবসর নেবেন। এই মাদ্রাসায় ৯টি শিক্ষকপদ খালি রয়েছে।

চিত্র তিন: মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ইসলামপুর সাগর হাইমাদ্রাসা। প্রায় ১৫০০ পড়ুয়ার এই মাদ্রাসায় ২৩টি শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। বর্তমানে রয়েছেন ১০ জন। অঙ্ক, জীববিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান, ইতিহাসের শিক্ষক নেই বহুকাল।

চিত্র চার: বর্ধমান হাইমাদ্রাসায় উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান শাখা চালু হয়েছে ২০১০ সালে। কিন্তু শিক্ষক না ছাত্রভর্তি নেওয়া যাচ্ছে না।

চারটি মাদ্রাসার ছবি উদাহরণ মাত্র। সূত্রের খবর, রাজ্যের ৬১৫টি মাদ্রাসার অধিকাংশেরই হাল কম-বেশি এক। আদালতের নির্দেশে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ তিন বছর ধরে। কমিশনের বক্তব্য, এখন শূন্যপদ রয়েছে প্রায় সাত হাজার। খালি রয়েছে প্রায় এক হাজার শিক্ষাকর্মীর পদ। ১৩২টি মাদ্রাসায় প্রধানশিক্ষক নেই। শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে, শিক্ষাকর্মী না থাকায় মাদ্রাসা পরিচালনার কাজ লাটে ওঠার জোগার। কর্মচারী কম থাকায় ক্যাশবুক, মিড ডে মিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও বিভিন্ন তহবিলে আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা, বৃত্তিপ্রদান, কন্যাশ্রী, সাইকেল দেওয়া, কর্মীদের প্রতি মাসে বেতনের কাগজপত্র তৈরি — সব কাজেই গুরুতর সমস্যা হচ্ছে।

গত ২৭ এপ্রিল মাদ্রাসা পর্ষদ ভবনে এক কর্মশালার এই সমস্যাগুলির কারণে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে বলে বেশ কয়েক জন প্রধানশিক্ষক অভিযোগ করেন। বোর্ডের সভাপতি ফজলে রাব্বিও মেনে নেন, ‘‘শিক্ষক সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে আমাদের মুখ দেখানোর জায়গা নেই।’’ কিন্তু তাঁর সাফাই, ‘‘আদালতের নির্দেশে কিছু করা যাচ্ছে না। আমরা অসহায়।’’

মামলাটি হয়েছিল ২০১৩ সালে। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগের বিরোধিতা করে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি রহমানিয়া হাইমাদ্রাসার পরিচালন কমিটি। পরের বছর আদালত জানায়, কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হলে তা হবে অবৈধ। পরে ডিভিশন বেঞ্চে গেলে সেখানেও হেরে যায় রাজ্য। মামলাটি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত ‘বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম’-এর সভাপতি ইসরারুল হক মণ্ডলের ধারনা, ‘‘মামলার জন্য তিন বছর নিয়োগ বন্ধ। সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই হাইকোর্টে হেরেছে রাজ্য।’’ মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলামের কথায়, ‘‘শিক্ষক না থাকায় বেশিরভাগ দিনই নির্ধারিত সময়ের আগে ছুটি হয়ে যাচ্ছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে এই সমস্যার কথা জানিয়েছি।’’

যাবতীয় দায় ঝেড়ে ফেলে কর্তৃপক্ষ এখন সর্বোচ্চ আদালতের দোহাই দিতেই ব্যস্ত। ফলে শূন্যপদে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করে সমস্যার সমাধানে কবে হবে — তা জানেন না কেউ।

আরও পড়ুন—তৃণমূল না জোট, কে বসবে সিংহাসনে? দেখুন কী বলছেন জ্যোতিষীরা

madrasa high madrasa west bengal teachers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy