Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্কুল ফেরালে কোথায় অভিযোগ, উত্তর নেই 

শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সব শিশুর বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার রয়েছে। অটিজ়ম, সেরিব্রাল পল্‌সির মতো সমস্যাযুক্ত শিশুদের অভিভাবকদের প্রশ্ন, তাঁদের সন্তান এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে তাঁরা কোথায় যাবেন অভিযোগ জানাতে?

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০৬
Share: Save:

নিয়ম আছে, তবে সেটা খাতায়-কলমেই। সেই নিয়মের যথাযথ প্রয়োগ না হলে সমাধান কী ভাবে মিলবে? অভিযোগ কোথায় জানানো যাবে? সে সব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর নেই। মূলত এই জায়গায় এসেই আটকে যাচ্ছে অটিস্টিক শিশুদের মূল স্রোতে ফেরানোর উদ্যোগ।

শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সব শিশুর বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার রয়েছে। অটিজ়ম, সেরিব্রাল পল্‌সির মতো সমস্যাযুক্ত শিশুদের অভিভাবকদের প্রশ্ন, তাঁদের সন্তান এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে তাঁরা কোথায় যাবেন অভিযোগ জানাতে? সাধারণ স্কুলের দরজা বন্ধ হলে শেষে কি তবে বিশেষ স্কুলই তাঁদের সন্তানদের ভরসা?

যেমনটা হতে চলেছে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা এক দম্পতির ক্ষেত্রে। ওই দম্পতি জানাচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের সাড়ে চার বছরের অটিস্টিক ছেলেকে সাধারণ স্কুলে পড়াতে চেয়েছিলেন। একের পর এক ‘না’ শুনে ক্লান্ত দম্পতি যখন সরকারি নিয়মের কথা মনে করিয়ে দেন এক স্কুল কর্তৃপক্ষকে, তখন তাঁরা শিশুটিকে দু’সপ্তাহ ক্লাসে বসিয়ে যোগ্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষা নেন। অবশেষে উত্তর আসে সেই ‘না’। তাঁরা ভেবেছিলেন স্কুলটি যে বোর্ডের অধীনে সেখানে অভিযোগ জানাবেন। দম্পতির প্রশ্ন, ‘‘এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বোর্ডে কাকে অভিযোগ জানাতে হবে?’’ একই প্রশ্ন বহু দম্পতিরই।

কিন্তু একের পরে এক প্রশ্ন এবং তার উত্তরেও এ বিষয়ে স্পষ্ট দিশা মেলেনি। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি আইসিএসই বোর্ডের সচিব জেরি অ্যারাথুন। ওই বোর্ডের অধীন স্কুলগুলির সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব স্কুল ফর আইসিএসই’-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি সুজয় বিশ্বাস বলেন ‘‘অটিস্টিক, সেরিব্রাল পল্‌সির মতো সমস্যাযুক্ত শিশুদের ভর্তি নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যদি স্কুল কর্তৃপক্ষের ধারণা না থাকে, তা হলে আগে সেই নিয়ম জেনে নিতে হবে। কোনও শিশুকে প্রথমেই বিশেষ স্কুলে পাঠাতে পারেন না কর্তৃপক্ষ।’’ কিন্তু স্কুল যদি ভর্তি না নেয় অভিভাবক কোথায় যাবেন? তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বা স্কুল সচিব বা বোর্ডকে চিঠি লেখা যেতে পারে।’’ তবে তাতে যে কাজ হবেই, এমন আশ্বাস দেননি তিনি। উপরন্তু বোর্ডকেও এ নিয়ে সচেতন হওয়ার কথা বলেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সিবিএসই স্কুলগুলির ক্ষেত্রে কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে? সেটা জানা নেই স্কুলগুলিরই! সিবিএসই বোর্ডের অধীন গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী মিত্র বলেন, ‘‘বোর্ডের ক্ষেত্রে নির্দেশ আছে বিশেষ শিশুদের নিতে হবে। তবে স্কুল না নিলে অভিভাবক কোথায় অভিযোগ জানাবেন, সেটা জানা নেই।’’ ওই বোর্ডের অধীন অন্য স্কুল শ্রীশিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষিকা ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে স্কুল ভর্তি না নিলে বোর্ডকে অভিযোগ জানাতেই পারেন অভিভাবক।’’ কী পদ্ধতিতে? জানাতে পারেননি তিনি। তাঁর পরামর্শ, ‘‘বোর্ডের মূল কাজ পাঠ্যক্রম তৈরি ও পরীক্ষা পরিচালনা করা। বিশেষ শিশুদের ভর্তির বিষয়ে তাই স্কুলের সচেতনতা জরুরি।’’ মডার্ন হাই স্কুল ফর গার্লস-এর ডিরেক্টর দেবী কর বলছেন, ‘‘স্কুলে স্পেশ্যাল এডুকেটর আছেন। যারা বেশি মাত্রায় অটিস্টিক, তাদেরকে স্পেশ্যাল স্কুলে দেওয়াই ভাল।’’

পশ্চিমবঙ্গের সর্বশিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্নার আশ্বাস, ‘‘সরকারি এবং সরকার পোষিত কোনও স্কুলে বিশেষ শিশুদের ভর্তি নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে কসবার শিক্ষা ভবনে আমার অফিসে অভিভাবকেরা যোগাযোগ করুন। তাহলেই হবে।’’

যদিও এই আশ্বাসে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান অভিভাবকেরা। তাই কয়েক জন অভিভাবক একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে খুলে ফেলেছেন একটি সংগঠন। যেখানে সমস্যার সমাধান খোঁজেন তাঁরা। পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা কমলিকা কানুনগো মেয়েকে সাধারণ স্কুলে দিয়েও এক বছরের মধ্যে সেখান থেকে ছাড়িয়ে কসবার একটি স্পেশ্যাল স্কুলে ভর্তি করেন। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল থেকে ছাড়াতে বাধ্য হয়ে বুঝেছিলাম, আমার মতো অনেক মা আছেন যাঁদের এই সমস্যা হচ্ছে।’’ তাই কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে ফেসবুকে ‘কলকাতা ইনক্লুসিভ স্কুলস অ্যান্ড সার্ভিস’ নামে একটি পেজ খুলে ফেলেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Autism অটিজম Health Factors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE