Advertisement
E-Paper

কেউ বুঝিনি, ট্রেনটা চলে আসবে

ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত ওই দুই কলেজ পড়ুয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর সোমবার দুপুরে পানিহাটির পাঠবাড়ি লেনে পৌঁছনোর পর থেকে কার্যত থমথমে এলাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৭
(বাঁ দিকে) কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শৈশব দলুইয়ের মা।  শোকস্তব্ধ সুনীল তাঁতির মা।

(বাঁ দিকে) কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শৈশব দলুইয়ের মা। শোকস্তব্ধ সুনীল তাঁতির মা।

কানে মোবাইল নিয়ে রাস্তা পারাপার পছন্দ করতেন না, ঝুঁকি নিয়ে সেলফি তোলারও বিরুদ্ধে ছিলেন। সেই যুবক কী ভাবে বন্ধুদের সঙ্গে রেললাইনের ধারে শ্যুটিং করতে গেলেন? দমদম ও বেলঘরিয়ার মাঝে রেললাইনে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির শ্যুটিং করতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত সুনীল তাঁতির পরিবারের কাছে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।

অন্য দিকে, নিষেধ করা সত্ত্বেও বাড়ি থেকে অত দূরে রেললাইনের ধারে ছেলে কেন গেলেন, তা নিয়ে মঙ্গলবারও আক্ষেপ করেন মৃত শৈশবের বাবা শান্তি দলুই। ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত ওই দুই কলেজ পড়ুয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর সোমবার দুপুরে পানিহাটির পাঠবাড়ি লেনে পৌঁছনোর পর থেকে কার্যত থমথমে এলাকা। মঙ্গলবার সকালেও একই পরিস্থিতি। চোখের সামনে দুই বন্ধুর এমন পরিণতি এখনও তাড়া করছে বরাত জোরে বেঁচে যাওয়া যুবক সৌনদীপ সাঁতরাকে।

সৌনদীপের দাবি, ‘‘কেউ বুঝিনি যে ট্রেনটা চলে আসবে। হাওয়ার ধাক্কায় পড়ে গিয়েছিলাম। উঠে দেখলাম ওরা লাইনে পড়ে।’’ এ দিন সকালে ওই যুবককে ফের দমদম জিআরপিতে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সৌনদীপের দাবি, শৈশবের ডাকেই ছবি তুলতে গিয়েছিলেন তিনি। মোবাইলে ভাল ছবি উঠবে না বলে, অন্যের মোবাইল কিছু ক্ষণের জন্য ধারও করেছিলেন। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বেলঘরিয়া স্টেশনে নেমে হেঁটে পৌঁছন তিন কিমি দূরের সিসিআর ব্রিজের কাছে। সৌনদীপ জানান, শৈশব ও সুনীল রেললাইনে বসে কথা বলছিলেন। দূর থেকে তা মোবাইলে তুলছিলেন তিনি। একটা ইঞ্জিন আসায়, সবাই সরে যান। কিন্তু পরের লোকাল ট্রেনটা কেউ খেয়াল করেননি। তদন্তকারীদের ধারণা, সিসিআর ব্রিজের নীচে রেললাইনে বাঁক রয়েছে। সম্ভবত সে কারণেই ট্রেনটি দেখতে পাননি ওই যুবকেরা।

দুই বন্ধুকে হারানোর পরে সৌনদীপ। মঙ্গলবার, পানিহাটিতে।

ঘটনার পরে সৌনদীপই ফোনে সুনীল ও শৈশবের বাবাকে বিপদের আভাস দেন। বেলঘরিয়া স্টেশনে পৌঁছে যান সুনীলের বাবা রাজেন তাঁতি ও শৈশবের বাবা শান্তিবাবু। তাঁরা জানান, স্টেশনে পৌঁছে ফের ফোন করলে সৌনদীপ তাঁদের রেললাইন ধরে দমদমের দিকে এগোতে বলেন। কিছুটা এগোনোর পরেই জিআরপি সব জানায়। শান্তিবাবু বলেন, ‘‘দেখলাম, ছেলেটা লাইনে পড়ে রয়েছে। পুলিশ আর এগোতে দিল না।’’

জলও খাননি সুনীলের শোকার্ত মা স্বপ্নাদেবী। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘বিটি রোড দিয়ে অনেক গাড়ি চলে। সাইকেলে করে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে নিষেধ করেছিলাম ছেলেকে। কিন্তু বিপদটা অন্য ভাবে এল।’’ তিনি জানান, শৈশব ডাকতে এলেও তিনি ছেলেকে বেরোতে দেননি। পরে তাঁর অনুপস্থিতিতে বেরিয়ে যান সুনীল।

রেললাইনের ধারে শৈশব ছবি তুলতে যায় শুনে বকাবকি করেছিলেন বাবা শান্তিবাবু। বললেন, ‘‘সোদপুর সাইডিংয়ের ছবি দেখিয়ে বলেছিল, দাঁড়ানো ট্রেনে ভয় নেই। কলেজে ছবিটা লাগবে।’’ ছোটবেলার বন্ধু হলেও সুনীলের সঙ্গে মাঝে সম্পর্ক ছিল না শৈশবের। জানুয়ারিতে শৈশবের জন্মদিন থেকে ফের বন্ধুত্ব।

এলাকার অন্য যুবকেরা জানান, বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল শৈশবদের। কিন্তু ওঁদের যে এ ভাবে বলি হতে হবে তা কে ভেবেছিল!

ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

Train Belghoria Train accident ট্রেন দুর্ঘটনা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy