প্রতি বছর উরস উৎসবে দুই বাংলার মিলনস্থল হয়ে ওঠে মেদিনীপুর। বাংলাদেশ থেকে বিশেষ ট্রেন আসে। এ বার অবশ্য সে ট্রেন আসবে না। ১২৩ বছরে এমন ছন্দপতন এ নিয়ে পঞ্চম বার।
বৃহস্পতিবার সকালে ফোনে পাওয়া গেল ঢাকার মহম্মদ মেহবুব উল আলমকে। যে ধর্মীয় সংস্থার উদ্যোগে বাংলাদেশের রাজবাড়ি থেকে মেদিনীপুরে প্রতি বছর ‘উরস স্পেশাল ট্রেন’ আসে, সেই ‘অঞ্জুমান-ই- কাদেরিয়া’র সভাপতি তিনি। বিশেষ ওই ট্রেনের ‘টিম লিডার’ও তিনি। মহবুব বললেন, ‘‘প্রাথমিক প্রস্তুতি ছিল। তবে এ বার মেদিনীপুরে যাওয়া হচ্ছে না। আগামী বছর আবার যাব।’’
বাংলাদেশ থেকে বিশেষ ট্রেনে তীর্থযাত্রীরা শহরের মিঁয়াবাজারে জোড়া মসজিদে সুফি সাধকের মৃত্যু বার্ষিকীতে আসেন। হজরত মহম্মদের ৩৩তম বংশধরের মাজার রয়েছে এখানে। সেই ১৯০২ সাল থেকে এই ট্রেন আসছে। ট্রেনে দু’হাজারের বেশি পুণ্যার্থী থাকেন।
এ বার ৪ ফাল্গুন, ১৭ ফেব্রুয়ারি উরস উৎসবের আয়োজন হচ্ছে। বসবে মেলাও। তবে বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির জেরে ‘উরস স্পেশাল ট্রেন’ আসবে না। এর আগে ১৯৬৫, ১৯৭১, ২০২১, ২০২২ সালে ট্রেন আসেনি। ২০২১, ২০২২-এ আসেনি করোনা পরিস্থিতিতে। আর ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে আসেনি মুক্তিযুদ্ধের জেরে।
ঢাকা থেকে ফোনে মহম্মদ মেহবুব বললেন, ‘‘সেই ’৭৪ সাল থেকে প্রতি বার যাই। তবে এখনকার সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা ঠিক করেছি যে, এ বার না হয় থাক। এই ট্রেনকে দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসাবেই দেখি। ট্রেন বরাবর চলবে, এটাই চাই।’’ তিনি মনে করালেন, এই ট্রেনে টিকিট পেতে এত চাহিদা থাকে, যে লটারির মাধ্যমে ট্রেন যাত্রীদের বেছে নেওয়া হয়। বিশেষ ট্রেন এক দিন বাদে ফের মেদিনীপুর ছেড়ে যায়। বাংলাদেশের তীর্থযাত্রীরা অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্র, মাদুর, ক্ষীরের গজা, মিহিদানা ইত্যাদি কিনে নিয়ে যান।
তবে ট্রেন না এলেও উরস উৎসব হবে। বসবে মেলাও। তার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বুধবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরে পুলিশ-প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খান বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় বাংলাদেশ থেকে ট্রেন আসছে না। তবে হাজার হাজার পুণ্যার্থী আসবেন। তাঁদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি।’’ উরস মেলা কমিটির তরফে আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘‘আশা করছি, মেলা সুষ্ঠু ভাবেই হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)