দখলদারদের পুনর্বাসন দিয়ে চার বছরের উপর থমকে থাকা নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রো প্রকল্পের কাজ ফের শুরু করতে চায় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এর জন্য পর্যায়ক্রমে টাকা মঞ্জুর করার কাজও শুরু হল। দখল সরিয়ে প্রকল্পের কাজ হবে বরাহনগর, কামারহাটি, দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুরসভার নানা অংশে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জমিজট খোলার পথ খুঁজতে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট নানা পুরসভার কর্তাদের প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী চান, মুখ থুবড়ে পড়া এই প্রকল্পে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে কাজে গতি আসুক। তিনি তত্ত্বাবধানের মূল দায়িত্ব দিয়েছেন পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মন্ত্রী তথা দমদমের বিধায়ক ব্রাত্য বসুকেও বলেছেন উদ্যোগী হতে। ওঁরা দু’জন সংশ্লিষ্ট পুরকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি আলাপনবাবু। তবে, নবান্ন সূত্রের খবর, প্রতি সপ্তাহে তিনি পরিস্থিতি খতিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
নোয়াপাড়া স্টেশনের কাছে রেলের জমিতে রয়েছে কযেকশো ঝুপড়ি। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশ ঝুপড়ি সরাতে হবে। কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘কাছেই সরকারি জমিতে ওদের সরানো হবে। এর জন্য সরকার ৩ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। চেষ্টা করছি জানুয়ারি মাসের মধ্যে মেট্রোর কাজের জন্য দরকারি জমি ফাঁকা করে দেওয়ার।’’
দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘এই পুরসভার অধীনে বিনয়পল্লী এবং লাগোয়া কিছু অংশে বড়দোর ৫০টি ঝুপড়ি রয়েছে। ওরা আছে জেশপ কারখানার পাশে রেলের জমিতে। ওদের শীঘ্রই কাছেই রেলের একটা জমিতে ঘর করে সরিয়ে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে রেলের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।’’
মেট্রো প্রকল্পের জন্য সরাতে হবে সুভাষনগর এক নম্বর রেলগেট কলোনির প্রায় ৫০০ ঝুপড়ি। এলাকাটি দক্ষিণ দমদম পুরসভার অধীন। কেন সময় লাগছে? স্থানীয় চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘ঠিক হয়েছিল স্থানীয় ১০ নম্বর ওয়ার্ডে জ্যোতিনগর কলোনির পাশে ওদের সরানো হবে। কিন্তু শেষমেষ ওঁরা বেঁকে বসেন। এখন বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে প্রমোদনগরে বেশ কিছুটা নিচু জমি ওদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকার টাকা দিলে আমরা ঘর করে দেব।’’ ইটের প্রাচীর, টিনের ছাউনির ঘরগুলোর প্রতিটির মাপ কমবেশি সওয়া দু’শ বর্গফুট। এর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান প্রদীপবাবু।
মেট্রোর কাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বরাহনগরের ইন্দিরানগর ও রাজীবনগর কলোনি। এ দুই কলোনির অন্তত দেড়শ ঘর সরাতে হবে। পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেই, অর্থাৎ দুই কলোনির অদূরে কলকাতা পুরসভার একটি জমি ছিল। সেটি তারা আমাদের পুরসভাকে হস্তান্তর করেছে। এখানেই তৈরি হবে ইন্দিরানগর ও রাজীবনগরের আবাসিকদের জন্য প্রায় দেড়শ ঘর। এর জন্য রাজ্য সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা এসেছে।’’
২০১১-তে নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রো প্রকল্প টেন্ডারে ১৭৭ কোটি টাকার বরাত পায় ‘সেনবো’। বাগজোলা খালের পাশ থেকে এয়ারপোর্ট কলোনি পর্যন্ত কাজ। কিন্তু বরাহনগরের ইন্দিরানগর ও রাজীবনগর, দমদম ও দক্ষিণ দমদমের বিনয়পল্লী, সুভাষনগর, নতুনপল্লীতে তাদের হাতে প্রশাসন জমি দিতে না পারায় কাজ আটকে যায়। সব মিলিয়ে ওই অঞ্চলে সহস্রাধিক ঝুপড়ি জমি দখল করে রেখেছে। সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার অমিত দাস এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘৭০০ মিটার অংশে পুরো কাজ করা গিয়েছে, আংশিক কাজ হয়েছে আরও প্রায় ৪০০ মিটার। জমি দখলমুক্ত করতে আমরা প্রশাসনের কাছে বার বার অনুরোধ করছি। যে কাজ হয়েছে, তাতে লেগেছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা।’’
এদিকে, এই মেট্রো প্রকল্পের তত্বাবধায়ক সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)-এর এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ‘‘প্রকল্পের কাজ শুরু করা নিয়ে শীঘ্রই বারাকপুরের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা হবে।’’ পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘দখল উচ্ছেদ বা জমি নিয়ে নয়, কিছু রাস্তার যান-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরভিএনএল পুলিশি সহয়োগিতা চায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy