Advertisement
E-Paper

দলের নেতাই ঠিকাদার, রাস্তার কাজে ক্ষুব্ধ মন্ত্রী

দিন দশেকের মধ্যে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে উত্তরকন্যার উত্তর দিকের একটি নির্মীয়মাণ রাস্তার অবস্থা দেখতে গিয়ে অবাক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। রাস্তা খুঁড়তেই দেখা যায় ঝুরঝুর করে বালি-মশলা উঠছে। ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথবাবুকে রাস্তায় দাঁড়িয়েই বলতে শোনা যায়, ‘‘এটা কী হচ্ছে!’’

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৯
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ

রবীন্দ্রনাথ ঘোষ

দিন দশেকের মধ্যে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে উত্তরকন্যার উত্তর দিকের একটি নির্মীয়মাণ রাস্তার অবস্থা দেখতে গিয়ে অবাক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। রাস্তা খুঁড়তেই দেখা যায় ঝুরঝুর করে বালি-মশলা উঠছে। ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথবাবুকে রাস্তায় দাঁড়িয়েই বলতে শোনা যায়, ‘‘এটা কী হচ্ছে!’’

সে খবর ছড়িয়ে পড়তে চিন্তায় পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বও। শিলিগুড়ি থেকে উত্তরকন্যা ঢোকার আগে বাঁ দিকে সওয়া এক কিলোমিটারের এই রাস্তাটি তৈরির জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে ৭ কোটি টাকার বরাত পেয়েছিল তৃণমূলেরই ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিকের সংস্থা। দেবাশিসবাবু রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতিরও সদস্য। তিনি যখন এই কাজের বরাত পান, তখন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন গৌতম দেব। তাঁর বিধানসভা এলাকার মধ্যেই পড়ে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ও রাজগঞ্জ। দেবাশিসবাবু গৌতমবাবুর ঘনিষ্ঠ নেতা বলেও পরিচিত।

উত্তরকন্যা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ মাসেই এই রাস্তার কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বছর গড়াতে চললেও মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, তার উপরে এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে আসছেন, তখন উন্নয়নের কাজকর্ম নিয়ে তিনি খোঁজ খবর করবেন। তাঁর উত্তরবঙ্গের সচিবালয়ের গা ছুঁয়ে থাকা ওই রাস্তাটি সম্পর্কেও খোঁজ নিতে পারেন। তা আঁচ করেই এই রাস্তাটির কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে কেন, সেটা খতিয়ে দেখতে রবীন্দ্রনাথবাবু নিজেই গিয়েছিলেন।

রাস্তার কাজ দেখে মন্ত্রী ক্ষুব্ধ শুনে ঘটনাস্থলে চলে যান দেবাশিসবাবুও। রাতে দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমি ’৯৪ সাল থেকে ঠিকাদারি করি। এটা আমার পেশা। কাজ পাওয়া কিংবা পরিদর্শনের আড়ালে কোনও রাজনীতি নেই। মন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি, কাজটা বিধি মেনেই দ্রুত সম্পূর্ণ করব।’’

তবে তাতে সন্তুষ্ট নয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। রাস্তায় দাঁড়িয়েই দেবাশিসবাবুকে মন্ত্রী জানিয়ে দেন, বিধি মেনে নির্দিষ্ট মানের বালি-পাথর-বিটুমিন ব্যবহার করতে
হবে। সেই কাজে বেচাল হলে মুখ্যমন্ত্রী যে কাউকে রেয়াত করেন না, সেটাও বলে দেন রবীন্দ্রনাথবাবু। এর পরেই ওই রাস্তার কাজ যতটা হয়েছে, তার মান সামগ্রিক ভাবে খতিয়ে দেখতে এক জন সুপারিনটেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের কমিটি গড়ার নির্দেশ দেন তিনি। দেবাশিসবাবু এর আগে যে সব রাস্তার কাজ করেছেন, সেগুলির অবস্থাও খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি।

প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘স্বজনপোষণ করতে গিয়ে উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ তৃণমূলের জমানায় নতুন নয়।’’

পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য বলেন, ‘‘কাজে কিছু ত্রুটি থাকার কথা আমার কানে আসায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে খোঁজ নিতে বলেছিলাম। সকলকেই নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে।’’ তবে তৃণমূলের এক নেতার কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর ভয়েই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন ও বর্তমান দুই মন্ত্রীই এখন চাইছেন ওই রাস্তার কাজ থেকে নিজেদের হাত ধুয়ে ফেলতে।

TMC North Bengal Development minister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy