দিলীপ সরকার। —ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ মেনে নিয়ে রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রক্রিয়া শুরু করল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। কোটি টাকার বেশি নয়ছয়ে অভিযুক্ত দিলীপবাবু। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, আগামী ৭ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হওয়ার কথা।
সেই বৈঠকের প্রাক্কালে তৃণমূল মনোভাবাপন্ন শিক্ষক-অফিসার-কর্মীদের একাংশের আলোচনায় উঠে আসছে, বিপুল অঙ্কের টাকা অপচয়ের জন্য দিলীপবাবুকে বরখাস্ত পর্যন্ত করা হতে পারে। তৃণমূলেরই আরেক পক্ষ মনে করছে, দিলীপবাবুকে স্বেচ্ছা অবসর নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। বাম মনোভাবাপন্ন শিক্ষক-অফিসার-কর্মীরা অনেকে চান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ক্ষেত্রে দিলীপবাবুর ভূমিকা মনে রেখে তাঁকে সতর্ক করে, ফের রেজিস্ট্রার পদে ফেরানো হোক।
এই অবস্থায়, মেপে পা ফেলতে চাইছেন উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দিনভর কর্মসমিতির আসন্ন বৈঠকের আলোচ্য বিষয় সূচি নিয়ে দফায় দফায় পরামর্শ করেছেন আইনজ্ঞদের সঙ্গে। কী পদক্ষেপ করে আগামী দিনে আইনি লড়াই এড়ানো যাবে, সুপ্রিম কোর্টে জবাবদিহি করতে হবে না, সেটাই আলোচ্য ছিল। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য মন্তব্য করতে রাজি হননি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম আমলে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার তদন্ত ও মামলায় ঢিলেমির অভিযোগ উঠেছিল। তার ভিত্তিতে তৃণমূল জমানায় হস্তক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জানান, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক দুর্নীতি প্রমাণ হলে কড়া পদক্ষেপ করা জরুরি। ফলে, উপাচার্য শিক্ষা দফতরের মনোভাবও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বস্তুত, ২০০৮ সালে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ ‘আভ্যন্তরীন বিষয়’ বলে তা চেপে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। প্রাক্তন উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার কয়েক দফায় তদন্ত করান। সেই সময়ে অরুণাভবাবুর ২০১০ সালের মার্চ মাসে অরুণাভবাবু মাটিগাড়া থানায় দিলীপবাবু-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কোটি টাকার বেশি নয়ছয়ের অভিযোগে এফআইআর করেন। সেই মামলার চার্জশিট অবশ্য জমা পড়ে তৃণমূল জমানায়। খোদ মমতা নির্দেশ দিলে তবে পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়।
এর পরে দিলীপবাবু সাসপেন্ড হন। বিভাগীয় তদন্তে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গিয়ে স্থগিতাদেশ পান দিলীপবাবু। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। গত এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ খারিজ করে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপে ত্রুটি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দেয়। সিদ্ধান্ত অপছন্দ হলে দিলীপবাবু আইনের দ্বারস্থ হতে পারবেন বলে জানায় সর্বোচ্চ আদালত।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমি বলতে পারি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ আর্থিক দুর্নীতিতে যুক্ত বলে প্রমাণ হলে তাঁকে সরে যেতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy