Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৩

লুপ্তপ্রায় জিনিসের সংগ্রহশালা ফালাকাটায়

এক সময় মহিষের গলায় বাঁধা থাকত ঘণ্টা। মহিষের পিঠে চড়েই কৃষকরা চলতেন খেতে। মাছ ধরার জন্য ব্যবহার হতো বাঁশের তৈরি জলঙ্গা, টেপাই, লোহার তৈরি কোঁচা। গরুর গাড়িতে করে নতুন বউ চলত শ্বশুরবাড়ি। বিন্নি ধানের চালের ভাত পাতে পড়ত। বাড়িতে বাড়িতে সে সব এখন আর নেই বললেই চলে। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সব। সেই লুপ্তপ্রায় জিনিসগুলি সংগ্রহ করে নিজেই সংগ্রহশালা হয়ে উঠছেন ফালাকাটার পাঁচমাইলের বাসিন্দা বিপুল বর্মন।

নিজের সংগ্রহশালায় বিপুল বর্মন। ছবি: হিমাংশু রঞ্জন দেব।

নিজের সংগ্রহশালায় বিপুল বর্মন। ছবি: হিমাংশু রঞ্জন দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৬
Share: Save:

এক সময় মহিষের গলায় বাঁধা থাকত ঘণ্টা। মহিষের পিঠে চড়েই কৃষকরা চলতেন খেতে। মাছ ধরার জন্য ব্যবহার হতো বাঁশের তৈরি জলঙ্গা, টেপাই, লোহার তৈরি কোঁচা। গরুর গাড়িতে করে নতুন বউ চলত শ্বশুরবাড়ি। বিন্নি ধানের চালের ভাত পাতে পড়ত। বাড়িতে বাড়িতে সে সব এখন আর নেই বললেই চলে। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সব। সেই লুপ্তপ্রায় জিনিসগুলি সংগ্রহ করে নিজেই সংগ্রহশালা হয়ে উঠছেন ফালাকাটার পাঁচমাইলের বাসিন্দা বিপুল বর্মন।

কখনও বাড়িতেই সেই সব জিনিস নিয়ে বসে থাকেন তিনি। কখনও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনী করেন। মাথাভাঙার খলিসামারীতে রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির উদ্যোগে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার সার্ধ শতবর্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় খলিসামারিতে। সেখানে ডাক পেয়ে প্রদর্শনী করেছেন বিপুলবাবু। তিনি জানান, সামাজিক জীবনে এই অঞ্চলের মানুষের ব্যবহৃত ১৮৩ রকমের জিনিস তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। যেগুলির ব্যবহার এখন প্রায় আর দেখা যায় না।

বছর পঁচিশের যুবক বিপুলবাবু জানান, আমার বয়স বেশি না। এর মধ্যেই দেখছি ছোটবেলার ব্যবহার করা জিনিস ক্রমশ হারিয়ে গিয়েছে। আমাদের বাড়িতে এক সময় অনেকগুলি মহিষের গাড়ি, গরুর গাড়ি ছিল। ওই গাড়িতে আমাদের বাড়ির নতুন বধূরা আসতেন। এখন ওই গাড়ি আর নেই। কিছু চাকা পড়ে আছে। সেখান থেকেই সংগ্রহের চিন্তা মাথায় আসে।

বিপুলবাবুর কাজে খুশি কোচবিহার জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক ভাস্কর বেরা। তিনি বলেন, “বিপুলবাবু মূলত রাজবংশী সমাজের লুপ্তপ্রায় জিনিসগুলি সংগ্রহ করেছেন। যা এককথায় অসাধারণ। ওই জিনিসপত্রগুলি আজ থেকে কয়েক দশক আগের এই অঞ্চলকে আমাদের সামনে তুলে ধরে, যা এই প্রজন্মের কাছে একটি বড় পাওনা।”

কী কী আছে বিপুলবাবুর সংগ্রহে?

তিনি জানান, মহিষের গাড়ি, গরুর গাড়ির চাকা, মহিষের গলায় বাঁধা ঘণ্টা, মাছ ধরার বাঁশের তৈরি টেপাই, জলোঙ্গা, চেকরি, কোঁচা সহ বেশ কয়েক ধরনের জিনিস, পানীয় জলের জন্য বাড়িতে তৈরি করা কুয়োর রিং, বিত্তি, হেউতি সহ অন্তত দশ প্রজাতির ধান। যা একসময় এই অঞ্চলে চাষ হত। ধান মাড়ানোর পিড়ি, গরুর জল খাবার দেওয়ার জন্য আগে সিমেন্টের তৈরি একটি পাত্র দেওয়া হত। চাষের সময় গরু যাতে কোনও কিছুতে মুখ দিতে না পারে, সে জন্য মুখ বন্ধের জন্য তৈরি কোমা, আগের দিনে নিমন্ত্রণ বাড়িতে খাওয়ানো হত কলাগাছের তৈরি করা পাত্র, পায়রা রাখার জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি একপ্রকার খাঁচা, চাষের কাজের সময় রোদ ও বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য বাঁশ, প্লাস্টিক, শালপাতা দিয়ে তৈরি ঝাপি। এমনই ১৮৩ রকমের জিনিস তিনি সংগ্রহ করেছেন।

রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির সদস্য পার্থপ্রতিম রায় জানান, ভবিষ্যতে ভাষা অ্যাকাডেমির উদ্যোগে একটি সংগ্রহশালা গড়া হবে। সেখানে বিপুলবাবুর মতো সংগ্রাহকদের সহযোগিতা দরকার হবে। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলের সংস্কৃতির অনেক অংশেই হারিয়ে যাচ্ছে। আমরাও তা সংগ্রহের চিন্তা শুরু করেছি। সেই জায়গা থেকে বিপুলবাবুর মতো মানুষদের ডেকে এনে প্রদর্শনী করা হয়েছে।

(সংগ্রহের জিনিসপত্রের নাম স্থানীয় ভাষায় ব্যবহার করা হয়েছে)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE