Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীকে ধর্ষণ, খুন

মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের মিলনগড় এলাকায়। শনিবার রাতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে বিয়েবাড়ি-ফেরত কিশোরীকে ছোটগাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত মহম্মদ রসুল।

ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত মহম্মদ রসুল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০২:১১
Share: Save:

মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের মিলনগড় এলাকায়। শনিবার রাতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে বিয়েবাড়ি-ফেরত কিশোরীকে ছোটগাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

রবিবার সকালে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ধানখেত থেকে উদ্ধার হয় বছর পনেরোর ওই কিশোরীর বিবস্ত্র দেহ। কিশোরীকে গণধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে ওই ম্যাজিকের মালিক তথা চালক ও তার দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে। রাতেই গাড়ির চালক মহম্মদ রসুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই ঘটনায় তার আরও দুই সঙ্গী জড়িত বলে ধৃতকে জেরা করে জানতে পারলেও তাদের হদিশ পায়নি পুলিশ। বাকি দুই অভিযুক্তকে ধরে তাদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সোমবার থানায় বিক্ষোভও দেখান স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। দুই অভিযুক্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের ধরতে সবরকম চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীন দরিদ্র পরিবারের ওই কিশোরীকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় গোটা হরিশ্চন্দ্রপুর জুড়েই ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

সোমবার সকালে কিশোরীর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতকে জেরা করে ওই ঘটনায় জড়িত আরও দু’জনের নাম পুলিশ জানতে পেরেছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর ১৫-র ওই কিশোরীর বাবা নেই। এক দিদি বিবাহিত, দাদা দিনমজুরি করে সংসার চালান। বাড়িতে রয়েছেন প্রৌঢ়া মা। অভাবী ওই কিশোরীকে এলাকার প্রায় প্রত্যেকেই চেনেন। খিদে পেলে কারও বাড়িতে গিয়ে খাবার চেয়ে খেত সে। কোথাও বিয়ে বা অনুষ্ঠান বাড়ি দেখলেই সে হাজির হত। বাসিন্দারাও ভালবেসে তাকে পেট পুরে খাওয়াতেন। শনিবার রাতে লাগোয়া হরদমনগর এলাকায় একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে গিয়ে খেয়েদেয়ে একাই বাড়ি ফিরছিল ওই কিশোরী। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাতে ম্যাজিক ভ্যান নিয়ে ফিরছিল রসুল। বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে গাড়িতে তুলে কিশোরীকে মাটিয়ারি এলাকার একটি ধানখেতে নিয়ে যাওয়া হয়। গণধর্ষণের পর কিশোরীকে তার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তরা পরিচিত হওয়াতেই তাকে খুন করা হয় বলে সন্দেহ পুলিশের।

শনিবার রাতে খোঁজাখুজি করেও কিশোরীর হদিশ মেলেনি। পরদিন সকালে মাঠে কাজ করতে গিয়ে তার বিবস্ত্র দেহ ধানখেতের আলে পড়ে থাকতে দেখেন কয়েকজন চাষি। হরিশ্চন্দ্রপুরের কংগ্রেস প্রার্থী মোস্তাক আলম, তৃণমূল প্রার্থী তজমুল হোসেনরা এলাকায় ছুটে যান। এলাকায় গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশকেও। অভিযুক্তরা ধরা না পড়া পর্যন্ত দেহ তুলতেও বাধা দেওয়া হয়। ঘটনার জেরে বিকেল গড়িয়ে যাওয়ায় রবিবার আর কিশোরীর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠাতে পারেনি পুলিশ। পরে এসডিপিও গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তদন্তে নেমে গ্রেফতার করা হয় রসুলকে। কংগ্রেস প্রার্থী মোস্তাক আলম বলেন, ‘‘হরিশ্চন্দ্রপুরে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি চাই। তৃণমূল প্রার্থী তজমুল হোসেনও বলেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’’ কিশোরীর দাদা জানান, ‘‘বোনকে সবাই চিনত। একা একাই ঘুরে বেড়াত। ওকে প্রায় প্রত্যেকেই ভালোবাসত। কেউ যে ওর এতবড় ক্ষতি করতে পারে কখনও ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE