Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আদালতে আত্মসমর্পণ তিন ডিওয়াইএফ নেতার

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রায়গঞ্জ শহর কমিটির সভাপতিকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের তিন নেতা। মঙ্গলবার দুপুর ২টা নাগাদ তাঁরা রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক ইন্দ্রনীল হালদার তাঁদের জামিনের আবেদন নাকচ করে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

রায়গঞ্জ আদালত চত্বরে কার্তিক দাস।

রায়গঞ্জ আদালত চত্বরে কার্তিক দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৯
Share: Save:

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রায়গঞ্জ শহর কমিটির সভাপতিকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের তিন নেতা। মঙ্গলবার দুপুর ২টা নাগাদ তাঁরা রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক ইন্দ্রনীল হালদার তাঁদের জামিনের আবেদন নাকচ করে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই তিন ডিওয়াইএফ নেতার নাম কার্তিক দাস, সুজয় নন্দী ওরফে গণেশ ও তন্ময় সাহা। রায়গঞ্জের রবীন্দ্রপল্লি এলাকার বাসিন্দা কার্তিকবাবু ডিওয়াইএফের রায়গঞ্জ জোনাল কমিটির সম্পাদকের পদে রয়েছেন। রায়গঞ্জের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুজয়বাবু ডিওয়াইএফের উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটি ও সোহারই মোড় এলাকার বাসিন্দা তন্ময়বাবু ডিওয়াইএফের রায়গঞ্জ জোনাল কমিটির সদস্য। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ৩২৬, ৩০৭, ৫০৬, ৩৪১, ৩২৩ ও ৩২৫ ধারায় মামলা দায়ের করেছে।

সরকারি আইনজীবী নীলাদ্রী সরকার বলেন, ‘‘৩২৬ ও ৩০৭ জামিন অযোগ্য ধারা হওয়ায় ও কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত অভিযুক্তদের আগাম জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয়। এদিন নিম্ন আদালত তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়।’’

অভিযুক্তদের আইনজীবী সঞ্জীব বিশ্বাসের দাবি, কার্তিকবাবু, সুজয়বাবু ও তন্ময়বাবুকে টিএমসিপি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। তাঁরা কারও উপরে হামলা চালাননি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি এসএফআই পরিচালিত রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ছাত্র সংসদের ঘর দখলকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি ও এসএফআই সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওই ঘটনার পর ওইদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ এসএফআই ও ডিওয়াইএফের একদল সমর্থক মোটরবাইকে করে এসে রায়গঞ্জের সুপারমার্কেট এলাকায় টিএমসিপির রায়গঞ্জ শহর কমিটির সভাপতি বাবন সাহা ও গোকুল প্রামাণিক নামে আরেক টিএমসিপি সমর্থককে রাস্তায় মাটিতে ফেলে বেধরক মারধর করে। এমনকী, বাবনবাবু ও গোকুলবাবুকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুনের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ।

বিষয়টি দেখতে পেয়ে এলাকার মানুষ রায়গঞ্জের বন্দর এলাকার বাসিন্দা বাবনবাবুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই ঘটনার পর কার্তিকবাবু, সুজয়বাবু ও তন্ময়বাবু সহ মোট ১১ জন এসএফআই সমর্থকের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওইদিন রাতে টিএমসিপি সমর্থকরা রায়গঞ্জের এসএফআই নেতা তথা সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক গৌরব সাহাকে রায়গঞ্জের অশোকপল্লি এলাকায় আটক করে বেধরক মারধর ও খুনের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। গৌরববাবুর পরিবারের তরফে টিএমসিপির জেলা সভাপতি অজয় সরকার সহ টিএমসিপির পাঁচ সমর্থকের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রাণেশ সরকারের অভিযোগ, দুটি পৃথক মামলার একই অভিযোগ থাকা সত্বেও পুলিশ শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির চাপে ডিওয়াইএফ ও এসএফআই সমর্থকদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে। অথচ টিএমসিপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে লঘু ধারায় মামলা দায়ের করে।

রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তীর অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে আইন মেনেই দুপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সাত বছরের কম সাজার কোনও মামলায় অভিযুক্তদের পুলিশের তরফে নোটিশ পাঠিয়ে থানা অথবা আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। টিএমসিপির অভিযুক্ত সমর্থকদের ওই নিয়মে দীর্ঘদিন আগেই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

টিএমসিপির জেলা সভাপতি অজয়বাবুর দাবি, ‘‘পুলিশের নোটিশ হাতে পাওয়ার পর তাঁরা কিছুদিন আগে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। পুলিশি তদন্তে এসএফআই সমর্থকদের দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।’’

ঘটনার প্রতিবাদে এদিন রায়গঞ্জের বিবিডি মোড় থেকে সুপারমার্কেট পর্যন্ত মিছিল করেন এসএফআই ও ডিওয়াইএফের সমর্থকরা। এর পর দুটি সংগঠনের শতাধিক সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে আদালতে হাজির হয়ে তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, এদিন এসএফআই ও ডিওয়াইএফ সমর্থকদের সঙ্গে মিছিল করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করার কথা ছিল কার্তিকবাবু, সুজয়বাবু ও তন্ময়বাবুর । কিন্তু পুলিশ তাঁদের মিছিল করে থানায় যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আইসি গৌতমবাবুর দাবি, ‘‘পুলিশের অনুমতি ছাড়া এদিন শহরে মিছিল করার অভিযোগে এসএফআই ও ডিওয়াইএফের সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আমি নিজে সেই মিছিলের ছবি সংগ্রহ করেছি।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE