Advertisement
E-Paper

নিঝুম স্টেশনে বসেই কাটছে দিন

মাঝদুপুরের আলসেমি ভেঙে দেয় রাজধানী এক্সপ্রেস স্টেশনে ঢোকার ঘোষণা। বেঞ্চ ছাড়েন তিন জন। কার্তিক দাস, মনোজ পাসওয়ান ও লক্ষ্মণ রাউত

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৪০
সুনসান: বন্ধ রেল চলাচল। খাঁ খাঁ করছে এনজেপি স্টেশন। নিজস্ব চিত্র।

সুনসান: বন্ধ রেল চলাচল। খাঁ খাঁ করছে এনজেপি স্টেশন। নিজস্ব চিত্র।

বছরের পর বছর এক প্ল্যাটফর্মে কাটলেও, ওঁরা কেউ কাউকে চেনেন না। কোনওদিন এক বেঞ্চে বসেছিলেন কি না কেউ জানে না! তবে যেখানেই থাকুন, দুপুর বারোটার পরে তিনজনকেই বেঞ্চ ছেড়ে উঠতে হয়।

মাঝদুপুরের আলসেমি ভেঙে দেয় রাজধানী এক্সপ্রেস স্টেশনে ঢোকার ঘোষণা। বেঞ্চ ছাড়েন তিন জন। কার্তিক দাস, মনোজ পাসওয়ান ও লক্ষ্মণ রাউত। সবুজ রঙের উর্দি গায়ে পকেটে ফিনাইলের কৌটো হাতে ঝাড়ু নিয়ে কার্তিক দাস এবং লোহার টিনভর্তি মুড়ি, মশলা নিয়ে মনোজ পাসওয়ান ট্রেনের অপেক্ষা করেন। ভবঘুরে লক্ষ্মণ আরপিএফের লাঠির গুঁতো খেয়ে প্ল্যাটফর্মের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে যান।

শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনের প্রতিদিনের ব্যস্ততার সাক্ষী ওঁরা। সপ্তাহখানেক ধরে এনজেপি দিয়ে যাওয়া অসম, কলকাতা এবং উত্তর ভারতগামী ২৫৪টি ট্রেন বাতিল। হাতে গোনা কয়েকটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলে। বেশিরভাগ সময়ে স্টেশন সুনসান। স্টেশনের মতো বদলে গিয়েছে ওদের তিনজনের দিনলিপিও। মাঝবয়সী মনোজ গত পনেরো বছর ধরে স্টেশনে মুড়ি বিক্রি করছেন। সাফাইকর্মী কার্তিক দশ বছর স্টেশনে কাজ করছেন। ভবঘুরে লক্ষ্ণণ এনজেপির হকার-কর্মী সকলের কাছে চেনামুখ। তাঁর দাবি, অন্তত ২০ বছর স্টেশনে রয়েছেন। বন্যায় রেলপথ ছিন্ন হয়ে স্টেশনের ব্যস্ততা নেই। তাই বদলে গিয়েছে ওদের দিনলিপিও।

এখন স্টেশন যেন ধু ধু মাঠ। প্রতিদিন একবার করে স্টেশনমাস্টারের ঘরে গিয়ে ট্রেনের খোঁজ নেন মনোজবাবু। এক ছেলে মাধ্যমিক দিচ্ছে, মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ঝালমুড়ি বিক্রি করেই সংসার চলে। তাঁর কথায়, ‘‘আগে দিনে বারোশো টাকার বিক্রি হতো। এখন দুশো টাকাই ওঠে না। মাত্র দু-তিনটে ট্রেন চলছে। কয়েকদিন তো স্টেশনেই আসিনি।’’

ট্রেন না চললেও ছুটি নেই কার্তিকবাবুর। আগের মতো ফিনাইলের বোতল নিয়ে স্টেশনে থাকতেই হচ্ছে। রাজধানী-ক্যাপিটাল এক্সপ্রেসের ঘোষণা শুনেই প্ল্যাটফর্মের সামনে চলে আসতে হতো। এখন অবশ্য ব্যস্ততা নেই। তবে ছুটিও নেই। কার্তিকবাবু বললেন, ‘‘ডিউটি তো করতেই হচ্ছে। রাজধানী-ব্রহ্মপুত্র হয়তো নেই কিন্তু তার বদলে স্পেশাল ট্রেনের রেক সাফাই হচ্ছে।’’

ভবঘুরে লক্ষ্ণণ রাউত জানালেন তাঁর বাড়ি ছিল বিহারের বেগুসরাই। একসময়ে জামালপুরে মজুরি খাটতেন। বয়স বাড়ায় গায়ের জোর কমে। চলে আসেন এনজেপি স্টেশনে। ভোরে বেরিয়ে বোতল-কৌটো কুড়িয়ে কিছু রোজগার করেন। তারপর দিন কাটে স্টেশনে। আরপিএফের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। লক্ষণ বলেন, ‘‘ফাঁকা বেঞ্চ, প্ল্যাটফর্মে ঘুমোই। ট্রেন আসার আগে আরপিএফ তাড়িয়ে দেয়। ট্রেন চলে গেলে আবার ফিরে আসি। এখন সে সব নেই।’’

তবে কয়েকদিনের মধ্যেই ফের শুরু হবে ট্রেন চলাচল। স্টেশন ফিরে যাবে চেনা গমগমে চেহারায়। ততদিন খানিক নিশ্চিন্তিই যেন কাটিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা।

hawkers NJP Station এনজেপি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy