Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফের দুর্ঘটনায় জখম বাগানের ৩১ পড়ুয়া

বাগানে স্কুলবাস না থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তবুও টনক নড়েনি মালিকপক্ষের। ফের তার খেসারত দিতে হল চা বাগানের পড়ুয়াদের। ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে স্কুলে যাবার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস ঢুকে গেল চা বাগানের ভিতরে।

ঝুঁকি নিয়েই চলছে যাতায়াত। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ।

ঝুঁকি নিয়েই চলছে যাতায়াত। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

বাগানে স্কুলবাস না থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তবুও টনক নড়েনি মালিকপক্ষের। ফের তার খেসারত দিতে হল চা বাগানের পড়ুয়াদের। ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে স্কুলে যাবার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস ঢুকে গেল চা বাগানের ভিতরে। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছে ৩১ জন পড়ুয়া। এদের মধ্যে আবার ১০ জন পড়ুয়া গুরুতর জখম। সোমবার ঘটনাটি ঘটে মালবাজার শহরের অদূরে গুরজংঝোরা চা বাগানে। বাগানের থেকে মালবাজারের স্কুলে পড়ুয়াদের নিয়ে আসার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। গত ১ জুন মধ্য ডুয়ার্সের তেলিপাড়া চা বাগানের পড়ুয়া বোঝাই ট্রাক্টর উল্টে জখম হয়েছিল ৩৬জন পড়ুয়া। তারপরে এই ঘটনায় বাগানে বাস না থাকার কারণে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে।

গুরজংঝোরা চা বাগানের মালিক জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি কৃষ্ণ কুমার কল্যাণী। ডুয়ার্সের বেশ কিছু চা বাগানে যেখানে এখনও ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে বা ট্রাক্টরে করে বাগানের পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠানো হয়। তার মধ্যে কৃষ্ণবাবুর বাগান একটি। গুরজংঝোরা চা বাগানে দেড়শোর বেশি পড়ুয়া রয়েছে। এরা মালবাজারের আদর্শ বিদ্যাভবন, সুভাষিণী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় , আনন্দ বিদ্যাপীঠের মত স্কুলগুলিতে পড়াশুনো করে। এই বিপুল পড়ুয়াদের পৌছাবার জন্যে বাগানের একটি মাত্র ট্রাক রয়েছে। দিনে দুইবার যাতায়াত করে পড়ুয়াদের স্কুলে পৌছায় ট্রাকটি। যে ট্রাকটি পড়ুয়াদের জন্যে বরাদ্দ সেটিও অত্যন্ত লজঝড়ে দশায় রয়েছে বলেও শ্রমিকদের অভিযোগ।

একই মালিকের সরস্বতীপুর চা বাগান থেকে বেহাল দশায় এই ট্রাকটিকে এনে রঙ করে স্কুলের যাতায়াতে এটিকে লাগানো হয়েছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। এ দিন ট্রাকটি দ্বিতীয় দফায় পড়ুয়াদের মালবাজারে নিয়ে যাচ্ছিল।গু রজংঝোরা চা বাগানের পাহাড়ি বাঁকে ট্রাকটির সামনে বাগানের জলের ট্যাঙ্কার পড়ে গেলে চালক জোরে ব্রেক চাপেন। কিন্তু গাড়ি না দাঁড়ালে তিনি তৎপরতার সঙ্গে গাড়িটিকে চা বাগানের ঢালে ঢুকিয়ে দেন। চালকের দক্ষতাতেই ট্রাকটি উল্টে যায়নি বলেও দুর্ঘটনাগ্রস্ত পড়ুয়ারা জানান। ট্রাকের থেকে গড়িয়ে পড়ে জখম হওয়া ৩১ জন পড়ুয়াকে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় ট্রাকের খালাসি সহ ১১ জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালেই পাঁচ ছাত্রীকে ভর্তি করানো হয়। অন্যদের অবশ্য প্রাথমিক শুশ্রূষা করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই দুর্ঘটনা ট্রাকের বদলে বাসে হলে যে এত আহতের ঘটনা ঘটত না সে বিষয়ে একমত বাগানের শ্রমিকেরা। মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনি ওঁরাও, নবম শ্রেণির রোশনি ছেত্রী , চতুর্থ শ্রেণির নিশা ওঁরাও দের কথায়, ‘‘ট্রাকের বদলে বাস থাকলে তো আমরা বাইরে ছিটকে পড়তাম না। তাই এত ব্যাথাও পেতাম না।’’ অভিভাবক সুবন্তী ওঁরাও, শনিলাল ওঁরাও এর কথায় এখন তো প্রায় সব বাগানেই বাস হয়ে গিয়েছে। আমাদের বাগানে যে কেন বাস নেই জানি না। বাগানের আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ইউনিটের নেতা চন্দন লোহারের কথায়, ‘‘যে ট্রাকটি এ দিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে সেটিও তো লজঝড়ে। বাগান কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে ন্যূনতম যত্নবান হলে এই ঘটনা ঘটে না।’ জলপাইগুড়ি জেলা সিটু সম্পাদক তথা চা বাগানের ২৩টি শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলমের কথায়, ‘‘আশা করি এরপর ওঁরা বাসের ব্যবস্থা করবেন।’’ এ দিন হাসপাতালে জখম পড়ুয়াদের দেখতে আসেন রাঙামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নাগেশ্বর পাসোয়ান। বাগান কর্তৃপক্ষকে দ্রুত বাস চালাতে চাপ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তবে কৃষ্ণকুমার কল্যাণী অবশ্য বাগানের আর্থিক দুরবস্থার জন্যেই বাস পরিষেবা পড়ুয়াদের জন্যে চালু করা যায়নি বলে যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গুরজংঝোরা আদৌ লাভদায়ক বাগান নয়। শ্রমিকদের স্বার্থেই বাগানটি কোনওরকমে চালিয়ে যাচ্ছি। সঙ্গতি থাকলে বাস কেন কিনব না?’’ তবে জখম পড়ুয়াদের সকলের চিকিৎসার ভার বাগান কর্তৃপক্ষ বহন করবে বলেও এদিন জানান তিনি। যাদের চোট বেশি তাদের সকলকেই শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমেও বাগানের তরফে ভর্তি করানো হয়েছে বলেও কৃষ্ণবাবু জানান।

তবে এ দিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাকটিকে অবশ্য বাজেয়াপ্ত করেছে মালবাজার থানার পুলিশ। দুর্ঘটনার মামলাও রুজু করা হয়েছে বলে মালবাজারের এসডিপিও নিমা নরবু ভুটিয়া জানান। বাগানে যাতে বাস চালু করানো যায় সে বিষয়ে উদ্যোগী হবে মালবাজারের মহকুমা শাসক জ্যোতির্ময় তাঁতিও।তিনি বলেন, ‘‘যাতে গুরজংঝোরা চা বাগানে দ্রুত বাস চালু করা যায় সেজন্যে বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

malbazar accident student dooars
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE