Advertisement
E-Paper

বোর্ড গঠনের তিন ঘন্টার মধ্যেই পদত্যাগ ৫ তৃণমূল সদস্যের

সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও শুধুমাত্র গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন অনেকেই। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মণ্ডলঘাট পঞ্চায়েতে ১৬টির মধ্যে ৯ আসন পেয়েছিল তৃণমূল

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৬
আলোচনা: মণ্ডলঘাটে বোর্ড গঠনের পরে। ছবি: সন্দীপ পাল

আলোচনা: মণ্ডলঘাটে বোর্ড গঠনের পরে। ছবি: সন্দীপ পাল

আড়াই-আড়াইতে রফা হয়েছিল। তাতেও মিটল না গোষ্ঠীকোন্দল। বুধবার জলপাইগুড়ির মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই বিডিও কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন পাঁচ তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য। পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে ওই পাঁচটি আসনে ফের নির্বাচন করতে হতে পারে।

সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও শুধুমাত্র গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন অনেকেই। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মণ্ডলঘাট পঞ্চায়েতে ১৬টির মধ্যে ৯ আসন পেয়েছিল তৃণমূল। পরে এক কংগ্রেস সদস্য দলে যোগ দেয়। এ ছাড়া সিপিএমের ৩টি, নির্দল ২টি এবং কংগ্রেসের একটি আসন রয়েছে। ১০টি আসনে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় সহজেই বোর্ড হতে পারত এখানে। কিন্তু অভিযোগ, প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেলেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যরা। পরিস্থিতি এরকম দাঁড়ায় যে বোর্ড গঠন করতে সিপিএম সহ অন্য বিরোধীদের হাত বাড়াতেও তৃণমূলের একটা শিবির কুণ্ঠা বোধ করেনি বলে দাবি। দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের দুই জেলা নেতার গোষ্ঠী দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার ফল এই ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি।

গত ২৪ অগস্ট প্রথম বোর্ড গঠনের দিন ঠিক হলেও প্রিসাইডিং অফিসার অসুস্থ হয়ে পড়ায় বোর্ডগঠন প্রক্রিয়া মুলতুবি হয়ে যায়। যদিও তৃণমূলের একংশের অভিযোগ, তাঁদের পছন্দের ব্যক্তি যাতে প্রধান হতে না পারেন, তার জন্য জেলা নেতৃত্বের নির্দেশে কৌশলে বোর্ড গঠন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই অভিযোগে তৃণমূলকর্মীদের বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। পরে ৪ সেপ্টেম্বর ফের বোর্ড গঠনের দিন ধার্য হলেও আইন শৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে সে বারও বোর্ডগঠন বাতিল করা হয়।

বুধবার ফের বোর্ড গঠনের দিন ধার্য হয়। বিগত দিনের কথা মাথায় রেখে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয় পঞ্চায়েত অফিসের সামনে। ছিলেন ডিএসপি হেডকোয়ার্টার প্রদীপ সরকার, কোতোয়ালির আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার। যা দেখে বিজেপি নেতা বাপি গোস্বামীর কটাক্ষ, ‘‘এই তো তৃণমূলের অবস্থা, গোষ্ঠীকোন্দল সামাল দিতে থানায় তালা মেরে সব পুলিশকে নিয়ে আসতে হয়েছে।’’

এ দিন এখানে চলে আসেন তৃনমূলের একাধিক জেলা নেতাও। যার মধ্যে জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী ছাড়াও ছিলেন সহ সভাপতি দুলাল দেবনাথ, সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মণ। সূত্রের খবর, গোপন দলীয় বৈঠকে ঠিক হয় দুই শিবির থেকে দু’জনকে দুই দফায় প্রধান করা হবে। প্রথম দফায় আড়াই বছর প্রধান থাকবেন প্রদীপ দাস। তারপর শেষ আড়াই বছর প্রধানের দায়িত্ব সামলাবেন শ্যামলচন্দ্র রায়। হুইপ জারি করে এই সিদ্ধান্ত মতোই এদিন প্রদীপবাবুর পক্ষে ভোট দেন নয় তৃণমূল সদস্য। উপপ্রধান হন শম্পা রায়। যদিও বিরোধী ছ’জন ভোটদান থেকে বিরত থাকেন। বোর্ড গঠন হয়ে যাওয়ার পরে জেলা নেতারাও সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

যদিও ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পরিস্থিতি উল্টে যায়। পাঁচ জন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য প্রচুর সমর্থক নিয়ে এ দিন বিকেলে জলপাইগুড়ি সদর বিডিও অফিসে আসেন। তাদের মধ্যে প্রধান পদের দাবিদার শ্যামলবাবু ছাড়াও উপপ্রধান শম্পা, পঞ্চায়েত সদস্য সৌরেন্দ্রনাথ রায়, সাহেনা খাতুন, সামসুন নেহার ছিলেন।

তাঁরা বিডিও-র কাছে পদত্যাগপত্র জমাও দিয়ে দেন। এতেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে দাড়িয়েছে। প্রশাসন সূত্রে যানা গিয়েছে, যদি এই পাঁচজনের পদত্যাগ পত্র গৃহীত হয় তবে ওই আসনগুলিতে আবার ভোট হতে হবে। এদিকে একবার প্রধান নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় বর্তমান পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী আড়াই বছরের আগে তাঁকে পদ থেকে অপসারিত করা সম্ভব নয়। ফলে ওই পাঁচটি আসনে ফের নির্বাচন করতে হবে। বিডিও তাপসী বলেন, ‘‘জটিল পরিস্থিতি, আমরা বিষয়টি দেখছি।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল গায়ের জোরে নির্বাচন জিতেছে। এগুলি তারই ফল।’’

এদিকে ঘটনায় দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পদত্যাগী ওই পাঁচ তৃণমূল সদস্য। তাঁদের দাবি, প্রথমে জেলা নেতৃত্ব শ্যামলবাবুকে প্রধান করার জন্য হুইপ জারি করেছিল। তাহলে রাতারাতি সেটা বদলে নতুন হুইপ জারি করে প্রদীপবাবুকে প্রধান করা হল কোন স্বার্থে? যদিও এ সব অভিযোগকে ‘অভিমান’ বলে ব্যাখা করেছেন জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মানতে হবে।

যাঁদের অভিমান হয়েছে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হবে।’’ আর যুব সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘দলে ভুল বোঝাবুঝির ফল।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy