E-Paper

পাত্র হাজির, বিয়ে রুখে দিল নাবালিকা

নাবালিকার বিয়ে রোধে স্কুলে-স্কুলে ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর মাধ্যমে প্রচার চলছে। তার পরেও এমন ঘটনায় উঠেছে প্রশ্ন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের দাবি, নাবালিকা বিয়ে রোখার ক্ষেত্রে পাত্র ও কনে পক্ষকে শুধু মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিলে হবে না, আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:০৩

— প্রতীকী চিত্র।

বরযাত্রী-সহ দুয়ারে হাজির পাত্র। পরিবার ব্যস্ত আপ্যায়নে। সেই সুযোগে বান্ধবীদের সাহায্যে গ্রামেরই বাসিন্দা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকার বাড়িতে হাজির কনে-সাজে ষোড়শী ছাত্রী। মুখে আবেদন, ‘‘ম্যাডাম সাহায্য করুন। বিয়ে করতে চাই না। আরও পড়াশোনা করে পুলিশ হতে চাই।’’ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রীর আর্তি শুনে পুলিশ ও প্রশাসনকে জানিয়ে নাবালিকার বিয়ে রোখার বন্দোবস্ত করেন শিক্ষিকা। পুলিশ দেখেই বরপক্ষ পালায়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকা দেন ছাত্রীর বাবা। মালদহের রতুয়ার এ ঘটনা এক সপ্তাহ আগের। তবে বুধবার স্কুলে গিয়ে মেয়েটিকে সংবর্ধনা জানান জেলা শিক্ষা দফতর এবং ব্লকের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।

নাবালিকার বিয়ে রোধে স্কুলে-স্কুলে ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর মাধ্যমে প্রচার চলছে। তার পরেও এমন ঘটনায় উঠেছে প্রশ্ন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের দাবি, নাবালিকা বিয়ে রোখার ক্ষেত্রে পাত্র ও কনে পক্ষকে শুধু মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিলে হবে না, আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘‘নাবালিকার বিয়ে রোধে মামলা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রতুয়ার ঘটনার তদন্ত চলছে।” জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক শিবেন্দুশেখর জানা বলেন, “প্রচারের পাশাপাশি, নাবালিকার বিয়ে রোধে শাস্তিমূলক কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

মেয়েটির বাবা ভিন্ রাজ্যে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিক, মা বাড়িতে থাকেন। পরিবারের মধ্যে মেয়েটিরই প্রথম হাই স্কুলের চৌহদ্দিতে পা পড়েছে। অভিযোগ, মাসখানেক ধরে বাড়িতে বিয়ের আলোচনা চললেও শান্ত স্বভাবের মেয়েটির আপত্তিকে আমল দেয়নি তার পরিবার। ৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় রতুয়ার বাসিন্দা দিনমজুর পাত্র বরযাত্রী নিয়ে হাজির হয়।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বলেন, “স্কুলে মেয়েটি বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলেনি। সন্ধ্যায় স্কুলের কন্যাশ্রী বাহিনীর সঙ্গে তাকে বিয়ের সাজে দেখে চমকে গিয়েছিলাম। ওর কথা শুনে দেরি না করে, প্রশাসনকে সব জানাই। ওর লড়াই অন্যদেরও সাহস জোগাবে।” মেয়ের বাবা বলেছেন, “অভাবের সংসারে ভাল পাত্রের খোঁজ পেয়ে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলাম। কষ্ট হলেও মেয়ের স্বপ্নপূরণ করব।” ছাত্রীটি বলে, ‘‘আরও পড়াশোনা করে পুলিশ হব। পরিবারের পাশে ছেলের মতো দাঁড়াব। তাই বিয়ের দিন বান্ধবীকে বলেছিলাম, যে করে হোক আমাকে দিদিমণির কাছে নিয়ে যা।” ছেলের বাড়ির লোকজন এ নিয়ে মন্তব্য করেননি।

জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বাণীব্রত দাস বলেন, “স্কুলে-স্কুলে বাল্যবিবাহ রোধে প্রচার চলছে। রতুয়ায় মেয়েটির লড়াইকে কুর্নিশ করে তাকে জাতীয় স্তরের পুরস্কার দেওয়ার জন্য আবেদন জানাব।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Child Marriage Preventing Child Marriage Malda Society

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy