নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সামনে রবিবার দুপুরে দাঁড়িয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছি। শনিবার রাত থেকে কয়েক ঘন্টা আগে পর্যন্ত যে পরিস্থিতিতে ছিলাম, তা ভাবলে এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। পাহাড়ে বৃষ্টি কত ভয়ঙ্কর চেহারা নিতে পারে, এ দিন তা টের পেলাম। সকালে গাড়ি নিয়ে নামার সময়ে রাস্তায় ধস,গাছ পড়ে থাকার দৃশ্য দেখে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। মনে হচ্ছিল, পরিবার নিয়ে আজ বুঝি আর নামা সম্ভব হবে না!
আশি ছুঁইছুঁই বাবা, বৃদ্ধ মা, ১৫ বছরের ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে দার্জিলিঙের কাছে দাওয়াইপানিতে বেড়াতে এসেছিলাম। হোম-স্টেতে ছিলাম। কয়েক দিন ধরে পাহাড়ে বৃষ্টি দেখেছি। তাতে বিপদ বুঝিনি। শনিবার রাতে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। চারদিক কাঁপিয়ে মেঘের সে গর্জনে আঁতকে উঠছিলাম।
একটা সময় মনে হল, বাইরেযেন প্রলয় চলছে! ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুতের ঝলক কাচের জানলায়। মুষল ধারায় বৃষ্টির ভয়ঙ্কর শব্দ। মনে হচ্ছিল, পাহাড়ের উপর থেকে সব ভাসিয়ে নীচে নিয়ে যাবে।রবিবার ট্রেন ধরতে সকাল ৮টায় কী ভাবে বেরোব তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম। রাতে একটুও ঘুম হয়নি। ভোরে বৃষ্টি থামতেই দ্রুত বেরিয়েপড়ি আমরা।
জোড়বাংলো পর্যন্ত যেতেই রাস্তা বন্ধ। গাড়ির সারি। সকলেই উদ্বিগ্ন। চারিদিকে গাছ পড়ে। বিধ্বস্তঅবস্থা। বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে চালক গাড়ি ঘুরিয়ে তিন মাইল হয়ে নামার চেষ্টা করলেন। সে পথওবন্ধ। অন্য গাড়িতে থাকা লোকজনের সূত্রে নানা খবর তখন শুনতেপাচ্ছি। মিরিকে, মানেভঞ্জনে ধস নেমে নাকি অনেকে মারাও গিয়েছেন।ভয়ে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। গাড়ি নিয়ে ফের জোড়বাংলোতে এলাম।রাস্তা তখনও বন্ধ।
কী করব ভাবছি। ইতিমধ্যে চালক খবর নিয়ে এলেন মংপু থেকে রম্ভিবাজার, লোহাপুল, শ্বেতিঝোরা, কালিঝোরা, সেবক হয়ে নীচে নামা যাবে। অনেক ঘুরে ঘুরে নামতে হল আমাদের। তাতে একটুও অস্বস্তি কমেনি। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি পাহাড় থেকে ধস নামল! সেবক পার হয়ে জঙ্গলের রাস্তায় গাড়ি ঢুকতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি।
অনুলিখন: সৌমিত্র কুন্ডু
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)