ছবি: সংগৃহীত।
এক দশক আগেও দুর্গাপুজোর পর থেকে কালীপুজো পর্যন্ত উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা কোথাও বাংলা আবার কোথাও হিন্দি গানের জলসার আয়োজন করতেন। সেখানে বাজত মান্না দে, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় থেকে রাহুল দেববর্মনের গান। সেই গানও হারিয়ে গিয়েছে একই সঙ্গে। তার বদলে এসেছে চটুল গান ও নাচ।
কালীপুজোর পর থেকে ছটপুজো পর্যন্তও অনেক জায়গায় সেরকমই জলসার আয়োজন করতে দেখা যেত বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলিকে। পুজোর মরসুমে জেলা ও জেলার বাইরের বহু সঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীরা সেই সব জলসায় যোগ দিয়ে বাড়তি রোজগার করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু গত প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে জেলায় ধীরে ধীরে জলসার আসর কমতে শুরু করায় হতাশ শিল্পীরা। তাঁদের অনেকেরই দাবি, গত কয়েক বছর ধরে শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটি পুজোর পরে হাতে গোনা কিছু জলসার আয়োজন করলেও বেশিরভাগ জায়গাতেই সঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের পর্যাপ্ত আর্থিক পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে শিল্পীদের অনেকেই জলসায় যোগ দেওয়ার উত্সাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁরা বলছেন, ডিস্কে গান শোনা আর সামনে শিল্পীর কণ্ঠ থেকে গান শোনার অভিজ্ঞতা আলাদা। কেনও ধীরে ধীরে জেলায় জলসার আসরের সংখ্যা কমছে, তারও নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পীরা। রায়গঞ্জের প্রবীণ সঙ্গীতশিল্পী কমল নাগ ও তবলাবাদক গিরিধারী দাসের বক্তব্য, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বেশিরভাগ পুজো কমিটি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে কিছু কমিটির সদস্যরা রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে জলসার আয়োজন করলেও বেশিরভাগ সঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী সেই সব কমিটির জলসায় যোগ দিয়ে বিতর্ক তৈরি করতে চান না। জলসার সংখ্যা কমার সেটাও অন্যতম কারণ।
শহরের আর এক প্রবীণ সঙ্গীতশিল্পী সরোজ সিংহের দাবি, এক একটি জলসার আয়োজন করতে বিভিন্ন পুজো কমিটির কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তাই বর্তমানে জেলার বেশিরভাগ পুজো কমিটি খরচ কমাতে জলসার বদলে ডিজে বক্স ভাড়া করে পাশ্চাত্য ও চটুল গান বাজিয়ে হুল্লোড় করতে পছন্দ করছেন।
জেলার যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী বৃন্দাবন মণ্ডল, গৌতম মল্লিক, সীমা ঘোষ, অমিতাভ দে, দুলাল দাসের দাবি, এই প্রজন্মের বেশিরভাগ পুজো উদ্যোক্তার মধ্যে জলসার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নেই। তা ছাড়া এই প্রজন্মের বেশিরভাগ স্রোতাদের মধ্যেও জলসার গান শোনার আগ্রহ নেই। তার বদলে কম খরচে ডিজে বক্স বাজিয়ে নাচের অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সব মিলিয়ে জেলায় ধীরে ধীরে জলসা হারিয়ে যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy