গুরুর কাছে মাটির প্রতিমাতেই নাড়া বাঁধা। কিন্তু চার-পাঁচ বছর ধরে গতানুগতিক মাটির প্রতিমা তৈরিতে মন ভরছিল না। সাবেকি প্রতিমার পাশাপাশি দু’একটি করে নতুন আঙ্গিকে প্রতিমা গড়ার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। ভাবনার ডানায় ভর করে কখনও শিমূল তুলোর খোসা, কলা গাছের বাকল দিয়ে প্রতিমা, আবার কখনও আইসক্রিমের কাঠি, বা চক-স্লেট-পেনসিল, কি কাঠের পুথিঁর মালা দিয়ে প্রতিমা তৈরি করে মালদহের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। জুটেছে নানা পুরস্কারও। এ বার প্রতিমা তৈরি করতে হাতে তুলে নিয়েছেন সুতোর রিল ও বোতামের যুগলবন্দি। ঝিনুক ও ঘুড়ি-লাট্টু দিয়েও দু’টি প্রতিমা গড়ছেন।
ইংরেজবাজারের মাধবনগরে মহানন্দার পাড়ে নিজের কারখানায় চার মাস ধরে ওই উপকরণ দিয়ে প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী সুশান্ত সরকার। এলাকার মানুষ অবশ্য একডাকে তাঁকে হারু বলেই চেনেন। মৃৎশিল্পী বলে নামডাক থাকলেও হারুবাবু পেশায় নৈশপ্রহরী। স্থানীয় মৃৎশিল্পী মিন্টু দাসের কাছে ১৫ বছর আগে হাতেখড়ি। তার পর থেকে নিজের কারখানায় তাঁর পথ চলা শুরু। এ বার তিনি নানা আঙ্গিকে ১৩টি প্রতিমা তৈরি করছেন। বুলেনের সাজে ১৮ ফুট উঁচু একটি প্রতিমা তৈরি করছেন হারুবাবু। সেই প্রতিমা যাবে গাজলের একটি ক্লাবের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের পুজো মণ্ডপে। সাবেক প্রতিমাও কিছু রয়েছে। কিন্তু মূল আকর্ষণ সুতোর রিল ও বোতামের অভিনব প্রতিমা। ইংরেজবাজারের মনস্কামনা রোডের রবীন্দ্র সঙ্ঘের মণ্ডপে তা ঠাঁই পাবে। হারুবাবু জানান, চার মাস আগে থেকে তিনি কাজ শুরু করেন। প্রথমে খড় দিয়ে প্রতিমার কাঠামো গড়ে পরে তাতে মাটির প্রলেপ দিয়ে আদল গড়েছেন। তার ওপরে কখনও সুতো পেঁচিয়ে আবার কখনও হরেক কিসিমের সুতোর রিল আঠা দিয়ে সেঁটেছেন। সঙ্গে জুড়েছে রংবেরঙের বোতাম। দেবীর চুলও সুতোর তৈরি। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ। শুধু মণ্ডপে যাওয়ার আগে ফিনিশিং টাচ বাকি। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রতিমাটি গড়তেই বেশি সময় লেগেছে। বায়না নিয়ে রাখা অনেক প্রতিমা গড়া বাকি এখনও। তাই ফুরসত নেই। এক দিকে রাত জেগে নৈশ প্রহরা দিতে হচ্ছে, আর দিনভর প্রতিমা গড়ার কাজ।’’ তাঁর আশা, এ বারও এই অভিনব প্রতিমা জেলার মানুষের নজর কাড়বে। আর তাতেই মিলবে পরিশ্রমের সার্থকতা।