কোথাও কোনও সমস্যা নেই, আচমকাই এক দিন দেখলেন, স্নান করার সময় মাথা থেকে চুল পড়া বন্ধই হচ্ছে না। প্রতি বার মাথার চুলে হাত দিলেই হাতে উঠে আসছে মুঠো মুঠো চুল। অথচ মাথায় খুশকি নেই। চুলের যত্নে আচমকা কোনও পরিবর্তনও আনেননি। সেই একই শ্যাম্পু-তেল-কন্ডিশনার ব্যবহার করছেন। তার পরেও চুল পড়ছে কেন?
দিল্লির এক ট্রাইকোলজিস্ট অর্থাৎ মাথার চুল ও স্বাস্থ্যের চিকিৎসক সুরুচি পুরী জানাচ্ছেন, শীতে কোনও স্পষ্ট কারণ ছাড়া এ ভাবে চুল পড়ার একটি নাম আছে। একে বলা হয় সিজ়নাল হেয়ারলস। এটি যে কোনও মরসুমেই হতে পারে। তবে শীতে এর প্রবণতা বেশি বাড়ে বিশেষ কয়েকটি কারণে।
১. মাথার ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা
শীতের বাতাসে আর্দ্রতা খুব কম থাকে। খুশকি না থাকলেও মাথার তালু বা স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত শুষ্ক ভাব তৈরি হতে পারে। মাথার ত্বক শুষ্ক হলে চুলের গোড়া শিথিল হয়ে যায়। ফলে খুব সহজেই চুল পড়ে যায়।
২. গরম জলের ব্যবহার
ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে শীতে অনেকেই একটু বেশি গরম জলে স্নান করেন। এই অতিরিক্ত গরম জলে স্নান করার কারণেও চুল পড়তে পারে। কারণ, গরম জলে চুলের গোড়ায় থাকা প্রাকৃতিক তৈলপদার্থ বা সেবাম ধুয়ে যায়। এতে চুল দ্রুত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং গোড়া থেকে উঠে আসতে শুরু করে।
৩. রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া
শীতকালে ঠান্ডার কারণে শরীরের রক্তনালীগুলি খানিক সঙ্কুচিত থাকে। ফলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। আর রক্ত সঞ্চালন না হলে চুলের গোড়ায় পুষ্টি বা অক্সিজেন, কিছুই পৌঁছোয় না। ফলে চুল ঝরতে শুরু করে।
৪. জল কম খাওয়া
শীতে তেষ্টা কম পাওয়ায় জলও কম খাওয়া হয়। এতে শরীরে জলাভাব তৈরি হয়। আর জলাভাবও মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন না হওয়ার অন্যতম কারণ।
৫. উলের স্কার্ফ বা টুপি পরার কারণে
ঠান্ডা থেকে বাঁচতে শীতে গরম টুপি বা মাফলার ব্যবহার করা হয়। অনেকেই উল বা ফারের টুপি পরেন। টুপি বা স্কার্ফের কাপড়ের সঙ্গে চুলের ঘষা লাগলে এক ধরনের ‘স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি’ তৈরি হয়, যা চুলকে রুক্ষ করে দেয় এবং চুল সহজেই ছিঁড়ে যায়।
৬. টেলোজেন এফ্লুভিয়াম
ঋতু পরিবর্তনের আগের সময়টায় অনেকেই আবহাওয়ায় বদলের কারণে নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন। তার প্রভাবও কিছু দিন পরে পড়তে পারে মাথার ত্বক এবং চুলে। একে ‘টেলোজেন এফ্লুভিয়াম’ বলে। এমনটা হলে মাথার বেশ কিছু অংশের চুল একসঙ্গে ‘রেস্টিং ফেজ়’-এ চলে যায়। ফলে ঝরতে শুরু করে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকেও এমন হতে পারে। সাধারণত অসুস্থতা বা মানসিক সমস্যা যে সময় হয়েছে, তার ১-২ মাস পরে এমনটা হতে পারে।
৭. সূর্যের আলো না পাওয়া
শীতে সূর্যের তাপ এবং আলো কম লাগে শরীরে। ফলে সূর্যের আলো গায়ে লেগে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয় ব্যাহত হয়। ফলে শীতে শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা দেয় এবং তা থেকেও চুল পড়ার সমস্যা বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন:
প্রতিকার
১। স্নানের সময় ফুটন্ত গরম জল ব্যবহার না করে হালকা গরম বা ঘরের তাপমাত্রার জল ব্যবহার করুন।
২। সপ্তাহে অন্তত দু'বার নারকেল তেল বা আমন্ড তেল হালকা গরম করে মাসাজ করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করবে।
২। খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, বায়োটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। যেমন— বিভিন্ন ধরনের বাদাম, ডিম, পালংশাক ইত্যাদি।
৩। উলের টুপির নীচে একটি পাতলা সুতি বা সিল্কের কাপড় ব্যবহার করলে ঘর্ষণজনিত ক্ষতি এড়ানো যায়।
৪। যদি মনে হয়, চুল পড়া স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে, এমনকি, মাথার কোনও কোনও অংশ প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, তবে থাইরয়েড বা রক্তে আয়রনের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নিলে ভাল হয়।