Advertisement
E-Paper

১৯ বছর পরেও গাইসালে কাটেনি দুঃস্বপ্নের বিষাদ

চায়ের দোকানে বসেই দুর্ঘটনার রাতের বিবরণ দিচ্ছিলেন তিনি। ‘‘গোটা গঞ্জের মতো আমিও তখন গভীর ঘুমে। রাত তখন পৌনে দু’টো। বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেল! বোঝা গেল, আওয়াজটা স্টেশনের দিক থেকে। দৌড়লাম স্টেশনের দিকে। গোটা গঞ্জেরই ঘুম ছুটে গিয়েছে! দেখলাম, রেলকর্মী পবন নাগিন দৌড়তে দৌড়তে চিৎকার করছেন— বোমা ফেটেছে!’’

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৫:৫৩
নরেন দাস: এখনও মনে পড়ে সেই দিন। নিজস্ব চিত্র

নরেন দাস: এখনও মনে পড়ে সেই দিন। নিজস্ব চিত্র

উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের গঞ্জ গাইসাল। সে গঞ্জে ছবির মতো ছিমছাম ছোট রেলস্টেশন। সেই স্টেশন আর সেই প্রত্যন্ত গঞ্জের নাম গোটা রাজ্য তথা দেশ জেনে গিয়েছিল ১৯ বছর আগের এক রেল দুর্ঘটনার সূত্রে। গভীর রাতে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছিল অবধ অসম এক্সপ্রেস আর ব্রহ্মপুত্র মেলের। প্রাণ গিয়েছিল অন্তত ৩০০ যাত্রীর। প্রায় দু’দশক পেরিয়ে এসেও সেই বীভৎসতার কথা ভুলতে পারেনি গাইসাল। প্রতি ১ অগস্ট গাইসালে ফিরে আসে ১৯ বছর আগের বিষাদ।

১৯৯৯ সালের ১ অগস্ট রাতে ঘটেছিল গাইসালের রেল দুর্ঘটনা। সে ঘটনার কথা এখনও চোখে ভাসে ৫৫ বছরের নরেন দাসের। রেলস্টেশন লাগোয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে চায়ের দোকান নরেনবাবুর। বাড়ি স্টেশন থেকে ৫০০ মিটার দূরে। চায়ের দোকানে বসেই দুর্ঘটনার রাতের বিবরণ দিচ্ছিলেন তিনি। ‘‘গোটা গঞ্জের মতো আমিও তখন গভীর ঘুমে। রাত তখন পৌনে দু’টো। বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেল! বোঝা গেল, আওয়াজটা স্টেশনের দিক থেকে। দৌড়লাম স্টেশনের দিকে। গোটা গঞ্জেরই ঘুম ছুটে গিয়েছে! দেখলাম, রেলকর্মী পবন নাগিন দৌড়তে দৌড়তে চিৎকার করছেন— বোমা ফেটেছে!’’

বোমা নয়। দু’টি ট্রেনের সংঘর্ষ। নরেনবাবুদের প্রথমে তা বোঝার উপায় ছিল না। কারণ, দাউদাউ করে জ্বলছিল আগুন। ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল চারদিক। খানিক পরেই বোঝা গেল আসলে কী ঘটেছে। ভুল সিগন্যালের কারণে এক লাইনে চলে এসেছিল অবধ অসম এক্সপ্রেস আর ব্রহ্মপুত্র মেল। মুহূর্তে ঘটে গিয়েছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ রেল দুর্ঘটনা। সরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ৩০০ বলা হলেও বেসরকারি সূত্র দাবি করেছিল, সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি।

এখনও চোখ ভিজে যায় নরেনবাবুর। পাশের একটা গাছে উঠে পড়েছিলেন তরুণ নরেনবাবু। সকাল হওয়ার পর দেখা গিয়েছিল, মৃত্যুপুরীতে পরিণত গাইসাল। লাশের পাহাড়। ছিন্নভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। স্বজনহারাদের কান্না। আহতদের আর্তনাদ। উদ্ধারকাজে নেমেছিল বিএসএফ, পুলিশ, সেনা। হাত লাগিয়েছিলেন গাইসালের স্থানীয় মানুষজনও। সেই করুণ দৃশ্য নরেনবাবুর মতোই ভোলেননি কোনও গঞ্জবাসীই।

গাইসালের বর্তমান স্টেশনমাস্টার রাকেশ কুমার। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ভয়ঙ্কর রাতের কথা ভোলেনি গাইসাল! ’’ এখনও গাইসাল স্টেশনে কর্মরত ওয়াচম্যান বাস্কো ওঁরাও। তিনি বললেন, ‘‘একটাই কামনা, আর যেন দ্বিতীয় গাইসাল না হয়!’’

একই কামনা গাইসালের সকলের। প্রতি ১ অগস্ট তাঁর চায়ের দোকানে মোমবাতি জ্বালেন নরেন দাস। উনিশ বছর আগে মৃত মানুষগুলোর আত্মার শান্তিকামনায়।

Gaisal Train Accident Disaster
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy