Advertisement
E-Paper

গণমৃত্যু কুকুরছানাদের, ঘনাচ্ছে রহস্য

তার মধ্যেই শুক্রবার রাতে গুঞ্জবাড়ির ওই চত্বরে পাওয়া গেল পাঁচটি কুকুরশাবকের দেহ। আরও দু’টি ধুঁকছে। এই ঘটনায় শহর জুড়ে একটাই প্রশ্ন, কী ভাবে মৃত্যু হল শাবকগুলির? কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন, তা হলে কি বিষ দিয়ে মারা হয়েছে এখানেও? 

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৪
উদ্ধার হওয়া কুকুরছানাদের দেহ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

উদ্ধার হওয়া কুকুরছানাদের দেহ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

রাতের হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন এলাকার মানুষ। প্রথমটায় তাই কেউই খেয়াল করেননি। ধাক্কা লাগল গোঙানির শব্দে। কোচবিহার শহরের গুঞ্জবাড়ি লাগোয়া ওই এলাকায় ঝোপঝাড় রয়েছে অনেকটা জায়গা জুড়ে। তারি মাঝে একটি ফাঁকা চত্বর। গোঙানির শব্দে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে কয়েক জন দেখেন, ওই চত্বরে পাশাপাশি শুয়ে দু’টি কুকুরছানা। একটির শ্বাস পড়ছে না। অন্যটির গলা থেকে ক্ষীণ শব্দ বেরোচ্ছে।

তার পর ওই এলাকায় তোলপাড় পড়ে যায়। এনআরএসের ঘটনা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে শহরে। তার মধ্যেই শুক্রবার রাতে গুঞ্জবাড়ির ওই চত্বরে পাওয়া গেল পাঁচটি কুকুরশাবকের দেহ। আরও দু’টি ধুঁকছে। এই ঘটনায় শহর জুড়ে একটাই প্রশ্ন, কী ভাবে মৃত্যু হল শাবকগুলির? কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন, তা হলে কি বিষ দিয়ে মারা হয়েছে এখানেও?

শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য রাজা বৈদ বলেন, “কারা কী বলছেন, জানি না। আমাদের সন্দেহ, খাবারের বিষক্রিয়া হতে পারে। একটি শাবকের দেহে আঘাতের চিহ্নও তো ছিল। তাই কোনও বাসিন্দা জড়িত কি না, তা-ও দেখা দরকার। চূড়ান্ত পরীক্ষা, নিরীক্ষায় সংশয় কাটাতে হবে।” একটি পশুপ্রেমী সংগঠন কোচবিহারের সম্পাদক সম্রাট বিশ্বাস বলেন, “ঘটনা যা-ই হোক, একসঙ্গে পাঁচটি কুকুর শাবকের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক।”

বিক্ষোভ পশুপ্রেমীদের।

প্রাথমিক তদন্তে অবশ্য দেহে বিষক্রিয়ার চিহ্ন মেলেনি, জানাচ্ছে প্রশাসন। শনিবার প্রাণী সম্পদ দফতরে কুকুরশাবকদের দেহের ময়নাতদন্ত করেন পশু চিকিৎসক প্রসূন বিশ্বাস। দফতর সূত্রের খবর, ‘হৃদযন্ত্র বিকল’ হওয়ায় মৃত্যু বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান। পাঁচটি শাবকের পাকস্থলীতে কোনও খাবার ছিল না। দফতরের কোচবিহারের উপ অধিকর্তা শেখরেশ বসু বলেন, “টানা অভুক্ত থাকা, প্রবল ঠান্ডার জেরে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্ট এসেছে। শরীরেরও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। একটির দেহে পুরানো ঘা ছিল।”

তোলপাড় রাতদিন

শুক্রবার
রাত ১০টা: গুঞ্জবাড়ি লাগোয়া এলাকায় ১ নম্বর ওয়ার্ডে কুকুর শাবকের দেহ পড়ে আছে বলে জানাজানি হয়।
রাত সাড়ে ১০টা: স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে।
রাত ১০টা ৪০: উদ্ধার আরও চারটি কুকুর শাবকের দেহ।
রাত পৌনে ১১টা: খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় যায়।
রাত সাড়ে ১১টা: দুটি অসুস্থ কুকুর শাবককেও উদ্ধারের পর পুলিশের গাড়িতে স্বেচ্ছাসেবীরা প্রাণী সম্পদ দফতরের উদ্দেশে রওনা হন।
রাত সাড়ে ১২টা: অন্য একটি সংস্থার কর্তার বাড়িতে অসুস্থ দুই শাবককে রাখা হয়। সেখানেই শাবকগুলির দেহও বস্তাবন্দি
করে রাখা হয়।
রাত ১টা: শনিবার ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার।
শনিবার
বেলা ১১টা: প্রাণী সম্পদ দফতরের সামনে বিক্ষোভ।
বেলা সাড়ে ১১টা: কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ জানাতে যান স্বেচ্ছাসেবীরা।
বেলা ১২টা: ময়নাতদন্ত শুরু।
বিকেল ৪টা: প্রাথমিক রিপোর্ট মেলে।
বিকেল ৫টা: শালবাগানে মৃত কুকুর শাবকদের দেহ মাটির
নীচে পুঁতে দেওয়া হয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা সেখানে ফুলও দেন।

তা-ও সন্দেহ সম্পূর্ণ দূর করতে ভিসেরার জন্য তৈরি থাকছেন তাঁরা, জানান শেখরেশ। তিনি বলেন, ‘‘মৃত শাবকের দেহাংশের নমুনা, ভিসেরা সংরক্ষণ করা হয়েছে। সে সব পুলিশকে দেওয়া হয়। ওই পরীক্ষা হলে বিষক্রিয়া নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’’

দীর্ঘদিন অভুক্ত অবস্থায় থাকার ফলে মৃত্যু হয়েছে— এই আশঙ্কার কথা বলছেন এলাকার কয়েক জনও। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, এই শাবকগুলি তাদের মায়ের দুধ পায়নি বলেই মনে হচ্ছে। তা হলে খোঁজ নিতে হবে, মা গেল কোথায়? তাকে কি আগেই মেরে ফেলা বা তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? নাকি অন্য কোনও জায়গা থেকে কুকুরশাবকগুলি তুলে এনে এই এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে? এ সবের যা-ই হোক না কেন, তা নিঃসন্দেহে নৃশংস। কারণ, এর ফলে পরোক্ষে শাবকগুলিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যুক্তি ওই সব এলাকাবাসীর।

এই বিষয়ে অবশ্য কেউই কিছু জানাতে পারেননি। পুলিশের দাবি, মৃত শাবকগুলির দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। এটা পিটিয়ে মারার ঘটনা নয় বলেই মনে হচ্ছে। পুলিশও অপুষ্টির কথাই বলেছে। যদিও কোচবিহারের পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। পুরসভার চেয়ারম্যান ভূষণ সিংহ বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। দুঃখজনক ব্যাপার। তদন্ত সম্পূর্ণ হলেই সব স্পষ্ট হবে।’’

Dead Puppies Gunjabari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy