Advertisement
E-Paper

বনবস্তির চাষের জমি বদলে যাচ্ছে চা বাগানে

বাগান রইককে এখান হামরে মন চেন সে আহি.....মুচকি হেসে সুরসুতি বনবস্তির যুবক বুধুয়া ওঁরাও সাদ্রিতে যা বললেন, তার বাংলা অর্থ—“চা বাগান হয়েছে। তাই এখন আমরা ভাল আছি।”

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫২

বাগান রইককে এখান হামরে মন চেন সে আহি.....

মুচকি হেসে সুরসুতি বনবস্তির যুবক বুধুয়া ওঁরাও সাদ্রিতে যা বললেন, তার বাংলা অর্থ—“চা বাগান হয়েছে। তাই এখন আমরা ভাল আছি।”

ছিপছিপে কালো গড়ন। পরণে ফ্যাকাসে জিন্স, লাল-সাদা ডোরাকাটা গেঞ্জি। মাথায় অবিন্যস্ত চুল। থুতনিতে এক গোছা কালো দাড়ি। চাষের জমিতে চা বাগান তৈরি করে বুনো হাতির হামলা থেকে বেঁচে থাকার পথ বার করে নিতে কত দ্রুত নিজের বস্তির ছবি পাল্টে যেতে শুরু করেছে তা ঘুরে দেখালেন বুধুয়া। তিনি জানালেন, অভাবে দীর্ণ আদিবাসী পরিবারের মেয়েরা বস্তির বাগানে শ্রমিকের কাজ করে রোজগারের সুযোগ পেয়ে খুশি।

একদিকে নেওরা নদী, অন্য দিকে গরুমারার শাল জঙ্গল। মাঝে পশ্চিম ডুয়ার্সের প্রাচীন বনবস্তি সুরসুতি। যত দূর চোখ যায় সবুজ চা বাগান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাঁচ বছর আগেও এ সবই ধান খেত ছিল। এখন মেঠো পথ দিয়ে হুসহাস ছুটে যাচ্ছে বাইক। সামান্য দূরে কলাবতী ওঁরাও, পূর্ণিয়া ওঁরাও, রাখি ওঁরাও-র মতো মহিলারা দল বেঁধে বাগানে পাতা তোলার কাজে ব্যস্ত। দেড় একর আয়তনের বাগান মালিক বুধুয়া বলেন, “এত দিন বস্তিতে কাজ ছিল না।” সত্যি কি কাজের অভাব ঘুচেছে? বাগানের শ্রমিক কলাবতী প্রশ্ন শুনে হাসেন পাতা তোলার ফাঁকে বলেন, “এক কেজি পাতা তুলে ৩ টাকা মজুরি মিলছে। দিনে একশো টাকার বেশি রোজগার হচ্ছে।”

বাগান তৈরির টাকা মিলছে কোথায়? পঞ্চায়েত সদস্য জানান, শুরুতে ধারে টাকা নিয়ে দু’বিঘা জমিতে বাগান তৈরি করছে ছেলেরা। তিন বছর পরে পাতা উঠছে। দু’বিঘা বাগান থাকলে ১০ দিন অন্তর ৫ কুইন্টাল পাতা হয়। বর্তমানে সেটা বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা ঘরে আসে। বাড়ির ছেলেমেয়ে, বউ মিলে পাতা তোলার কাজ করে। তাই ধারে নেওয়া টাকা শোধ করতে সমস্যা হচ্ছে না।

তবে বুধুয়ারা খুশি হলেও বনবস্তির চাষের জমি চা বাগান পাল্টে যেতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বনকর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, বাগানের হাত ধরে বনবস্তিতে রোজগারের সুযোগ তৈরি হলেও চিতাবাঘের হামলা বাড়বে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাগানে ব্যবহৃত কীটনাশকের সমস্যা। উত্তরবঙ্গের বনপাল তাপস দাস বলেন, “নতুন সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।”

প্রশ্ন উঠেছে কেন বনবস্তির চাষের জমি বাগানে পাল্টে যাচ্ছে? এক বনকর্তা জানান, বুনো হাতির উপদ্রবের জন্য বনবস্তিতে খেতের ফসল রক্ষার সমস্যা ছিলই। কিন্তু ২০০৭ সালের আগে বন দফতরের অনুমতি ছাড়া বস্তির বাসিন্দারা ইচ্ছে মতো জমির ব্যবহার করতে পারেনি। ২০০৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দখলে থাকা জমির ভোগ দখলের অধিকার বস্তির পরিবারগুলির হাতে তুলে দেওয়া হলে চাষের জমির পরিবর্তন শুরু হয়।

১৯১৭ সালে রাঁচি থেকে ১৪টি আদিবাসী পরিবারকে সুরসুতি বনবস্তিতে আনা হয় ধান ও ভুট্টা চাষের জন্য। ওই সময় পরিবার পিছু ১৫ বিঘা জমি বণ্টন করে বন দফতর। বস্তিতে পরিবারের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে হয়েছে ৩৮টি। পরিবার পিছু চাষের জমি কমে তিন বিঘা থেকে পাঁচ বিঘায় দাঁড়ায়। সেটাই এখন চা বাগানের দখলে।

শুধু সুরসুতি নয়। গত পাঁচ বছরে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলার ৭৬টি বনবস্তির বেশির ভাগ এলাকায় ওই পরিবর্তন শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র গরুমারা জঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার বিছাভাঙ্গা, কালামাটি, চটুয়া, বুধুরামের মতো নয়টি বনবস্তিতে ১১২টি বাগান গড়ে উঠেছে। বিছাভাঙ্গা বনবস্তির সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য ধীরেন কোড়া বলেন, “বস্তিতে হাতির উপদ্রব অনেক কমেছে এখন রাত জেগে খেত পাহারা দিতে হয় না।”

agricultural land tea gardens jalpaiguri banabasti banabasti north bengal news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy