কখনও দুপুরে, কখনও বা সন্ধের পরেও হোমের ভিতরে যেতেন ওঁরা। তার পর পাকা মেঝের উপরে গামছা পেতে শুরু হতো ‘জিমন্যাস্টিকস’ শেখানো। ডেকে নেওয়া হত বাছাই করা মেয়েদের। এবং ‘জিমন্যাস্টিকস’ শেখানোর নামে অবাধেই চলত শ্লীলতাহানি। কোচবিহারের বাণেশ্বরে বেসরকারি হোমের তিন তরুণীর ফিনাইল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার পরে এমনই সমস্ত তথ্য উঠে আসায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা জেলা। দোষীদের শাস্তির দাবি উঠেছে সর্বত্র।
আবাসিকরা জানান, হোম পরিচালন কমিটির কয়েক জন সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের মদত দিচ্ছিলেন হোমেরই কিছু কর্মী। মহিলাদের হোমে পুরুষদের যাতায়াতে বিধিনিষেধ থাকলেও সে সবের তোয়াক্কা করতেন না কেউ। বিশেষ করে হোম পরিচালন কমিটির সদস্য জগদীশ ওরফে ভজন চৌধুরী-সহ দু’জনের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ বিস্তর। ওই দু’জন যখন তখন হোমে যেতেন। এক তরুণী আবাসিক বলেন, “নানা অছিলায় মেয়েদের শরীরে হাত দেওয়াই ছিল ওঁদের প্রধান লক্ষ্য। সে জন্য আমাদের জিমন্যাস্টিকস শেখানোকে হাতিয়ার করা হয়।’’ কোনও প্রশিক্ষক ছাড়াই চলত জিমন্যাস্টিকসের প্রশিক্ষণ। আরেক তরুণী আবাসিক বলেন, “আমি বিপদ বুঝে সরে যাই। অনেকেই ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি।” শুধু তাই নয়, অভিযোগ, চেয়ারে বসে মেয়েদের ‘পা’ দেখানোর নির্দেশ দিতেন। বিষয়টি শুনেছেন ওই হোমের ফ্যামিলি কাউন্সেলিং সাব কমিটির সদস্য গায়ত্রী ঝা। তিনি বলেন, “মেয়েরা ভয়ঙ্কর অভিযোগ করছে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ওই ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। এতটুকু বলতে পারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি হোমের দেখভাল ঠিকমতো করছে না। সে জন্যই এমন নানা ঘটনার কথা উঠে আসছে।” কোচবিহারের জেলশাসক পি উল্গানাথন জানিয়েছেন, তারা ওই ব্যাপারে সমস্ত তথ্য জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি সমস্ত হোমের অবস্থা খতিয়ে দেখতে বৈঠক ডেকেছেন। তিনি বলেন, “যারা অপরাধ করবেন তারা পার পাবেন না।”
পুলিশ শ্লীলতাহানির মামলায় ইতিমধ্যেই জগদীশ ওরফে ভজনকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার তাঁকে কোচবিহার সিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক বাবলু কার্জি অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy