Advertisement
E-Paper

প্রচার শেষ পর্বে গড়াতেই বাড়ছে হুমকির অভিযোগ

ভোট প্রচারের শেষ পর্বে শিলিগুড়ির নানা এলাকায় হুমকির অভিযোগ যেন বেড়েই চলেছে। সোমবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নানা হুমকির অভিযোগ উঠে এল রাজ্যের বিরোধী শিবিরের শীর্ষ নেতাদের কথায়। তবে কলকাতায় ভোটের দিন যা হয়েছে, তেমন শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গে ঘটানোর চেষ্টা করলে ‘গণ প্রতিরোধ’ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী শিবিরের সব নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪১

ভোট প্রচারের শেষ পর্বে শিলিগুড়ির নানা এলাকায় হুমকির অভিযোগ যেন বেড়েই চলেছে। সোমবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নানা হুমকির অভিযোগ উঠে এল রাজ্যের বিরোধী শিবিরের শীর্ষ নেতাদের কথায়। তবে কলকাতায় ভোটের দিন যা হয়েছে, তেমন শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গে ঘটানোর চেষ্টা করলে ‘গণ প্রতিরোধ’ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী শিবিরের সব নেতারা।

যেমন, সিপিএম নেতারা সকাল-সকাল জোট বেঁধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। কোনও বেচাল দেখলে সমবেত ভাবে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কংগ্রেস নেতারা এক ধাপ এগিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, পুলিশ নিরপেক্ষ না থাকলে তাদের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চালাতে হবে। বিজেপি নেতাদের হুঁশিয়ারি, প্রতিটি ওয়ার্ডে যে যাঁর মোবাইল ক্যামেরা সচল রাখুন। কোথাও গোলমাল দেখলেই ভিডিও ফুটেজ তুলে রাখুন।

তবে শাসক শিবির যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছে, কোণঠাসা হয়ে হারের আগে মিথ্যে যুক্তি সাজাচ্ছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের প্রদেশ স্তরের নেতারা শিলিগুড়িতে প্রচারে গিয়ে বারেবারেই দাবি করেছেন, কলকাতার মতো ‘শান্তিতে ভোট’ হবে শিলিগুড়িতেও। শুধু তাই নয়, পুলিশ-প্রশাসন সক্রিয় বলেই উত্তরবঙ্গে পরিস্থিতি ‘শান্ত’ রয়েছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

কিন্তু, বিরোধী শিবির ভিন্ন কথা বলছেন। যেমন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম নেতা মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, শিলিগুড়িতে কোনও বাণিজ্যিক এলাকায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হচ্ছে, ভোটে হার হলে যদি বিক্রয় কর সংক্রান্ত গোলমাল হয় তা সামলাতে পারবেন তো? আবার কোথাও গিয়ে সরকারি কর্মীকে বলা হচ্ছে, রুটিন বদলির মুখে পড়লে কে আটকাতে পারে সেটা ভাবতে হবে। কোথাও আবার পুলিশি ঝামেলা হলে পাশে দাঁড়াতে পারে কে, আলতো করে সেই প্রশ্ন ছোড়া হচ্ছে। যা অবশ্য পুরোটাই ভিত্তিহীন ও হারের ভয় থেকে বলা হচ্ছে দাবি শাসক শিবিেরর।

শিলিগুড়ি পুর এলাকার এখনও অবধি প্রকাশ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তিনটি এলাকায় সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। ২০, ৩৬ এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে। সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, গত বোর্ডে ওই ওয়ার্ডগুলি দুটি (২০ এবং ২৮) বামেদের দখলে ছিল। অন্যটি তৃণমূলের দখলে ছিল। এবার ভোটপর্ব শুরু হতেই পার্টি অফিস ভাঙচুর, বহিরাগতদের আনাগোনা এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ করলেও পুলিশ উল্টে, সিপিএমের লোকজনকে গ্রেফতার করে দায় সেরেছে। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি থানা এবং ভক্তিনগর থানার আশিঘর ফাঁড়ি ঘেরাও হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘আমরা আশঙ্কা করছি ভোটের দিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে শাসক দল সন্ত্রাস চালিয়ে ভোট করাতে পারে। আমরা কলকাতায় ঘটনা শিলিগুড়িতে চাই না।’’

বামেদের অভিযোগ, বিভিন্ন বস্তি এলাকাগুলিতে শাসকদলের মদতে বহিরাগত লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন অটো, ট্রাক মালিকদের তৃণমূলে সামিল না হলে গাড়ি চালাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিজেপি’র বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতৃত্বের তরফেও ভোটের দিন সন্ত্রাসের আশঙ্কা করে একই অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিশেষ করে সংযোজিত এলাকায় গোলমালের চেষ্টা হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। বিজেপি নেতা শ্যামল সাহা বলেন, ‘‘বহিরাগদের এনে শাসক দল ভোট করাবে বলেই আমাদের সন্দেহ।’’

পুরসভার ৩১-৪৪-এর মতো সংযোজিত এলাকার বহু ওয়ার্ড ১৮, ১৯, ২৮, ৪৫, ৪৭ মতো ওয়ার্ডে চুপেচাপে হুমকি, ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। চাপা অভিযোগ রয়েছে ১, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ নম্বরের মতো পরপর ওয়ার্ডেও। অভিযোগ, কোথাও প্রচারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সেলস ট্যাক্স, ইনকাম ট্যাক্স অফিসারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। কোথাও বলা হচ্ছে তৃণমূলকে ভোট না দিয়ে বস্তিবাসীদের নানা সুবিধা থেকে আগামীদিনে বঞ্চিত থাকতে হবে। আবার বিরোধীদের ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন করা হবে না বলেও প্রচারে বক্তব্য রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকার যুবকেরা অন্য এলাকায় ঢুকে ঘোরাফেরা শুরু করেছে। এমনকী, ভোটের অন্যরকম কিছু করলে ভোটের পর ব্যবসা য়ীদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি বন্ধ, বদলির মত হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

কোচবিহারের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ভোটের দিন গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছে। তাদের আশঙ্কা, গ্রাম লাগোয়া পুরসভার যে ওয়ার্ডগুলি রয়েছে সেগুলিতে সন্ত্রাস করবে শাসক দল। সেক্ষেত্রে তাঁরা গ্রামের তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে এসে বুথে বুথে মজুত করতে পারে। সেই আশঙ্কার কথা কমিশনকেও জানিয়েছে তারা। বামফ্রন্টের নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ অভিযোগ করেন, সর্বত্র চাপা সন্ত্রাস তৈরি করা হয়েছে। ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “কলকাতার ঘটনা থেকে পুলিশ যদি শিক্ষা না নেয় সেক্ষেত্রে তাঁদের উর্দি ছেড়ে তৃণমূলের পোশাক পরা ঊচিত।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, “সন্ত্রাসের কোনও ব্যাপার কোথাও নেই। মানুষ সঙ্গে আছেন। বিরোধীরা হারবে বুঝতে পেরে সন্ত্রাসের গল্প তৈরি করছে।”

দক্ষিণ দিনাজপুরের সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাসের অভিযোগ, শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা ও ভয়ভীতি, পুড়িয়ে মারার হুমকি মতো ঘটনায় এখনও পর্যন্ত থানায় আমরা চারটি অভিযোগ করেছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে ৩টি অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। কোনও ফল হয়নি। বিজেপি জেলা সভাপতি গৌতম চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট করে তৃণমূলের প্রার্থী-সহ কর্মীদের বিরুদ্ধে তিনটি হামলার ঘটনা থানায় ও জেলাশাসকের কাছে নালিশ জানিয়েছি। কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।’’ জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়ার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘সব ক্ষেত্রে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

allegation against tmc siliguri corporation election 2015 siliguri left vs tmc north bengal news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy