Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Alipurduar

‘সরকার স্বীকৃতি দিক টোটো বর্ণমালার’

আলিপুরদুয়ার জেলার প্রত্যন্ত টোটোপাড়ায় জন্ম ধনীরামের। বাবা অনিফা টোটো ছিলেন সামান্য কৃষক। মা লক্ষ্মিণী টোটো ছিলেন গৃহবধু। ধনীরামরা ছিলেন ছয় ভাই, চার বোন।

ধনীরাম টোটো। নিজস্ব চিত্র

ধনীরাম টোটো। নিজস্ব চিত্র

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৮
Share: Save:

‘ফসলের মাঠে, মেঘনার তীরে ধু ধু বালুচরে, পাখিদের নীড়ে তুমি আমি লিখি প্রাণের বর্ণমালা...’

রেডিওয় কয়েক বছর আগে গানটি শুনেছিলেন ধনীরাম টোটো। তাঁর কথায়, “রুনা লায়লার কণ্ঠে গানটি শোনার পর থেকেই মনের ভিতরে খচ-খচ করতে শুরু করে। সকলের বর্ণমালা রয়েছে, আমাদের টোটোদের কোনও বর্ণমালা থাকবে না কেন— প্রশ্নটা বিঁধতে শুরু করে আমাকে।’’

আর দেরি করেননি। রাত-দিন এক করে টোটোদের লিপি তৈরিতে উদ্যোগী হন। তৈরি করেন টোটোদের বর্ণমালা। যাতে রয়েছে ৩৭টি অক্ষর। ধনীরাম বলেন, “এ জন্য ছ’মাস ধরে আমাকে বহু কষ্ট করতে হয়েছে। টোটো ভাষার ‘ফোনেটিক সাউন্ড’ ধরেছিলাম। তা দিয়েই আমাদের টোটোদের বর্ণমালা তৈরি করি। যেখানে থাকা ৩৭টি অক্ষর দিয়ে ইতিমধ্যেই তিনশোটি শব্দ তৈরি হয়েছে।”

আলিপুরদুয়ার জেলার প্রত্যন্ত টোটোপাড়ায় জন্ম ধনীরামের। বাবা অনিফা টোটো ছিলেন সামান্য কৃষক। মা লক্ষ্মিণী টোটো ছিলেন গৃহবধু। ধনীরামরা ছিলেন ছয় ভাই, চার বোন। ধনীরাম বলেন, “আমার বাবা ও মা কেউই পড়াশোনা জানতেন না। কিন্তু বাবা পড়াশোনার গুরুত্বটা বুঝতেন। তিনি আমাদের ভাই-বোনদের সব সময়েই বলতেন, ‘তোমরা কেউ এক জন অন্তত পড়াশোনা করো’। আমার এক দিদির পড়াশোনা দ্বিতীয় শ্রেণিতেই শেষ হয়ে যায়। তবে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সে জন্য জোড়াই-রামপুরে চলে যাই। সেখানেই মাধ্যমিক পাশ করি।” নিজের সন্তানদেরও পড়াশোনা করিয়েছেন ধনীরাম। তাঁর ছোট ছেলে ধনঞ্জয় ২০১৬ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর হন। ধনীরামের দাবি, টোটো জনজাতির মধ্যে ধনঞ্জয়ই প্রথম, যিনি এমএ পাশ করেছেন।

বর্তমানে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের কর্মী ধনীরামের স্কুলে পড়াশোনার সময়েই লেখালেখিতে আগ্রহ জন্মায়। বর্তমানে তাঁর একটি উপন্যাস ছাপা হয়ে গিয়েছে। একটি উপন্যাস ছাপা হচ্ছে। আরও একটি উপন্যাস লেখা প্রায় শেষ। এ ছাড়া, কবিতা ও গল্প মিলিয়ে তাঁর সাতটি বই রয়েছে। তবে এখন তিনি তাঁর নিজের আবিষ্কার, টোটোদের নিজেদের বর্ণমালায় একটি উপন্যাস লিখতে চান। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে পদ্ম-সম্মান দেওয়া খুশি ধনীরাম। তবে তিনি চান, তাঁর হাতে তৈরি হওয়া টোটোদের বর্ণমালার স্বীকৃতি সরকার দিক। বলেন, “টোটোদের বর্ণমালার স্বীকৃতি মিললে, সেটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সেই সঙ্গে আমি চাই, আমাদের টোটো জনজাতির উন্নতি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alipurduar Linguistic Recognition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE