E-Paper

আগলে রইল খুদে, অস্ত্রোপচার হল না জখম হাতির

সপ্তাহ দুয়েক আগে গভীর জঙ্গলে লড়াইয়ে জখম হয়েছিল একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বা মাকনা হাতি। হাতিটির লেজের নীচে গভীর ক্ষত হয়ে রয়েছে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:২৭
বৈকণ্ঠপুরে আপাল চাঁদের জঙ্গলে আহত অবস্থায় ঘুরে বেড়ানো মাকনা হাতিটি কে শুক্রবার ভোর থেকে  এ ভাবেই গার্ড করে রাখে

বৈকণ্ঠপুরে আপাল চাঁদের জঙ্গলে আহত অবস্থায় ঘুরে বেড়ানো মাকনা হাতিটি কে শুক্রবার ভোর থেকে এ ভাবেই গার্ড করে রাখে ওপর আরেকটি বুনো হাতি ফলে বন দপতরের থেকে নিয়ে আসা চিকিৎসক দল কিছুতেই দুটো কে আলাদা করে চিকিৎসা করতে পারলো না। ছবি দীপঙ্কর ঘটক

জখম হাতিকে আগলে ঘণ্টাছয়েক এক নাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকল অসমবয়সী আর একটি মাকনা হাতি। এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি নিয়েও জখম হাতির অস্ত্রোপচার করতে পারলেন না পশু চিকিৎসকদের দল। শুক্রবার ভোর থেকে জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুরের আপালচাঁদের জঙ্গলে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী হলেন বনকর্মীরা।

সপ্তাহ দুয়েক আগে গভীর জঙ্গলে লড়াইয়ে জখম হয়েছিল একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বা মাকনা হাতি। হাতিটির লেজের নীচে গভীর ক্ষত হয়ে রয়েছে। যন্ত্রণা উপশমে হাতিটি কখনও নদীতে, কখনও জলাশয়ে নেমে পড়েছে। বনকর্মীরা হাতিটিকে নজরে রেখেছেন এবং খাবারের মধ্যে ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছেন। বন দফতরের গঠিত চিকিৎসক দলের সিদ্ধান্ত, হাতিটিকে দেখে সেটির ব্যথা কমেছে মনে হলেও, ক্ষতস্থানে অস্ত্রোপচার করে মলম লাগাতে হবে। তা হলেই পুরোপুরি নিরাময় হবে। সেই চিকিৎসা করতেই শুক্রবার ভোর ৫টায় বনকর্মীদের বিশাল দল আপালচাঁদের জঙ্গলে তিন দিক থেকে হাতিটিকে ঘিরে ফেলে। চিকিৎসকদের দল পাঁচটি বড় বড় ইঞ্জেকশনও তৈরি করে এগোতে শুরু করে। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে চিকিৎসা হবে, তেমনই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হাতিটির কাছাকাছি পৌঁছতেই দেখা যায়, বয়সে ছোট আর একটি মাকনা হাতি জখম বুনোকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পরেই শুরু হয় বনকর্মী এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা।

বনকর্মীরা কখনও ডান দিক, কখনও বাঁ দিক থেকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন, ছোট মাকনা হাতিটি প্রতিবারই আড়াল করে দাঁড়িয়েছে জখম হাতিটিকে। ছোট মাকনা হাতিটি জখম হাতিটির চারপাশে ঘুরতে থাকে ক্রমাগত। বনকর্মীরা কাছাকাছি গেলে, সে তাড়াও করেছে। বনকর্মীরা পটকা ফাটিয়ে ছোট হাতিটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। ছোট মাকনার সঙ্গে শব্দ শুনে ভয় পেয়ে পা মিলিয়েছে জখম বুনোটিও। এ ভাবে ভোর থেকে বেলা গড়িয়েছে। শেষে বেলা ১১টা নাগাদ চেষ্টায় ভঙ্গ দেন বনকর্মীরা। এক বনকর্মীর কথায়, “ছোট হাতিটা অদ্ভুত ভাবে জখম হাতিটিকে আড়াল করে গেল। জানি না, ও কী বুঝেছে। একটা সময় জখম হাতিটির চারপাশে ঘুরতেও শুরু করল। আমাদের দিকে তেড়েও এল।”

অস্ত্রোপচার আপাতত মুলতুবি রাখলেও, নজরে রাখা হয়েছে জখম হাতিটিকে। বনকর্মীরা জানিয়েছেন, কমবয়সী মাকনাটিকে দূরে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে। যে ইঞ্জেকশন তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলি বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে, ফ্রিজেও রাখা হবে। তিন দিন ধরে অস্ত্রোপচারের চেষ্টা চালানো হবে। বৈকুণ্ঠপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক রাজা এম বলেন, “জখম বুনো হাতিটিকে খাবারের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আজকে অস্ত্রোপচারের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আর একটি ছোট হাতি সব সময়ে জখম হাতিটির সঙ্গে থাকায় সম্ভব হল না। কিছুতেই দু’জনকে আলাদা করা গেল না।”

বনকর্মীদের একাংশের অনুমান, ছোট হাতিটি কোনও ভাবে দলছুট হয়ে পড়েছে। সে কারণে বয়সে বড় আর একটি মাকনা বুনো হাতিকে জঙ্গলে পেয়ে তার কাছছাড়া হতে চাইছে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jalpaiguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy