অস্ত্র মেলায় খুদেরাও। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
ইন্ডিয়ান স্মল আর্ম সিস্টেম বা ইনসাসের তৈরি ৫.৬ ক্যালিবারের রাইফেলের কত দূরে থাকা শত্রুকে আঘাত করতে পারে? মালবাজারের যুবক সৌভিক দাসের এই প্রশ্নের জবাবে সঙ্গে সঙ্গে সেনা জওয়ান জানিয়ে দিলেন, ৪০০ মিটার পর্যন্ত মারণ ক্ষমতা রয়েছে এই রাইফেলের।
আবার কলকাতার বাসিন্দা কৌশিক দত্ত জানতে চাইলেন, বড় কামানের আকৃতির লাইট ফিল্ড গানের গোলা যেখানে পড়বে সেখানে কত ব্যাসার্ধ এলাকায় তার মারণক্ষমতা থাকবে। তৎক্ষণাৎ সেনা জওয়ানেরা জানালেন, ৩৪ মিটার ব্যাসার্ধে ছড়িয়ে যাবে এর মারণ ক্ষমতা। কখনও এলএমজি, কখনও আবার বিরাট আকৃতির বোফর্স কামান এই সব নিয়েই নানা প্রশ্নে রবিবার বেশ অন্যরকম দিন কাটলো মালবাজারের বাগরাকোটে।
সকাল ১০টা থেকে বাগরাকোট মিলিটারি স্টেশনের উদ্যোগে অস্ত্র সম্ভারের প্রদর্শনী শুরু হয় চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। বাগরাকোট, ওদলাবাড়ি, মালবাজারের বাসিন্দা বেশ কিছু স্কুলের খুদে পড়ুয়ারাও অস্ত্র ভাণ্ডার দেখতে ভিড় জমান। সেনা আধিকারিকেরা এলাকার বাসিন্দাদের উৎসাহ দেখে খুশি। বাগারাকোটের সেনা আধিকারিকদের কথায়, ‘‘আমরা সারা বছর যে সব অস্ত্র, কামান, গোলা, বারুদ নিয়ে পড়ে থাকি, সেগুলো কী ভাবে কাজ করে এর ছোট খাটো নানা ধরনের তথ্য জানতে বাসিন্দাদের মধ্যে বরাবরই আগ্রহ থাকে। অস্ত্র মেলার আয়োজনও করা হয় এই কৌতুহল নিবৃত্তির জন্যেই।’’
এ দিন মেলার শুরুতেই রাখা হয়েছিল নানা ধরনের ওয়াকিটকি। যুদ্ধক্ষেত্র হোক কিংবা জঙ্গি দমনের গোপন অপারেশন, এই ওয়াকিটকি দিয়ে কী ভাবে কথা বলতে হয়, এর কার্যক্ষমতা কত মিটার পর্যন্ত,, কী ভাবে এর কার্যক্ষমতা বাড়ানো যায়—সবই বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়। বিশেষ ধরনে আধুনিক জিপি ৩৩৮ ওয়াকিটকি প্রদর্শনীতে দেখানো হয়।
বন্দুকের সারিতে কার্বাইন বন্দুক দিয়ে মেলার বন্দুকের প্রদর্শনী শুরু করা হয়। ৩০টি বুলেট ভরা হয় এই কার্বাইন বন্দুকে। সেনা জওয়ানের জানান ৩.৬ কেজির এই কার্বাইন থেকে সিঙ্গল ফায়ার আবার মাল্টি ফায়ারও করা যায়। শুধু লাইট মেশিনগান দিয়েই ৬০০মিটার দূরত্বে থাকা শত্রুকে আক্রমণ করা যায়। বার্স্ট মোডের মাধ্যমে এই মেশিন গান দিয়ে চোখের নিমেষে ৬০০ থেকে ৬৫০ বুলেট ফায়ার করা যেতে পারে বলে সেনা জওয়ানেরা যখন জানালেন, তখন অবাক মুখের সারি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। নবম শ্রেণির পড়ুয়া চেতন কুমারের কথায়, ‘‘মেশিনগান যে কখনও এত কাছ থেকে খুঁটিয়ে দেখতে পাব, তা ভাবিইনি।’’
তবে এ দিনের এই অস্ত্র প্রদর্শনীতে দিনের সেরা ছিল বোফর্স কামান। একেবারে সয়ংক্রিয় যে বোফর্স কামানটি এদিন প্রদর্শনীতে দেখানো হয় সেটি নিজেকে কেন্দ্রে করে দ্রুতগতিতে চারদিকে যেমন ঘুরতে পারে তেমনই মুহূর্তের মধ্যেই গোলা ভরে নিয়ে তা ছুড়ে দিতেও প্রস্তুত থাকে। সেনা আধিকারিকেরা জানালেন ৪০ কিমি পর্যন্ত পাল্লা দিতে পারে বোফর্সের গোলা। এদিন দর্শকদের অনুরোধে বারংবার বোফর্স কামানকে ঘুরিয়ে, পাক খাইয়ে দেখাতে হয়েছে সেনা জওয়ানদের। সব মিলিয়ে স্বাধীনতার আগে এক অন্যরকম দিন কাটাবার সুযোগ পেল মালবাজার। এই ধরনের অস্ত্র প্রদর্শনীর ফলে সেনায় যোগ দেবার ইচ্ছাও অনেক বেড়ে যায় বলে সেনাআধিকারিকেরা জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy