Advertisement
০২ মে ২০২৪
শিলিগুড়ি হিন্দি হাইস্কুল

স্কুলের পাশে থাকার আশ্বাস অশোকের

শিলিগুড়ি হিন্দি হাইস্কুলের সমস্যা নিয়ে ছাত্র, শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বামেদের তরফে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র পদের দাবিদার তিনি। বুধবার হিন্দি হাইস্কুলে গিয়ে ছাত্র, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন অশোকবাবু। পরে তিনি জানান, স্কুলটি ঠিক মতো চলছে না। ছাত্রদের বই দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন না।

শিলিগুড়ি হিন্দি হাইস্কুলে অশোক ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়ি হিন্দি হাইস্কুলে অশোক ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

শিলিগুড়ি হিন্দি হাইস্কুলের সমস্যা নিয়ে ছাত্র, শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বামেদের তরফে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র পদের দাবিদার তিনি। বুধবার হিন্দি হাইস্কুলে গিয়ে ছাত্র, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন অশোকবাবু। পরে তিনি জানান, স্কুলটি ঠিক মতো চলছে না। ছাত্রদের বই দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন না।

এই স্কুলের জায়গা কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি। ভিতরে ভিতরে তা প্রমোটারের হাতে তুলে দেওয়ার একটা চেষ্টা চলছে বলে সবার সঙ্গে কথা বলে তাঁর ধারণা। তিনি বলেন, ‘‘কিছুতেই এই স্কুলের জায়গায় অন্য কিছু হতে দেওয়া হবে না। স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে তিন জনের একটি কমিটি গড়ে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখুক।’’

অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্কুলের এই জায়গা অন্তত ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। তা প্রোমোটারদের হাতে তুলে দিয়ে মুনাফা করতে চাইছে কেউ কেউ। আমরা তা হতে দেব না।’’ তা ছাড়া ভাষাগত ভাবে স্কুলটি সংখ্যালঘু বলে দাবি করার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তাতে সরকার পক্ষের আইনজীবী সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর কথায়, পরিস্থিতি দেখে বাধ্য হয়ে আমরা মামলার অংশীদার হয়েছি। শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছি। স্কুলে সরকারি শিক্ষক রয়েছে। স্কুলটি সরকারি ভাবে চালাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

গত জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলটিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়। স্কুলটি ভাষাগতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবি করে এক সদস্যের পরিচালন কমিটি তাদের মতো করে ভর্তির ফি এবং অন্য ব্যবস্থা চালু করে। তা মেনে নেননি ছাত্র অভিভাবকেরা। তারা আন্দোলনে নামে। রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ কর্মসূচি চলতে থাকে। প্রশাসনের তরফে কয়েক বার বৈঠক ডাকা হলেও সমস্যা মেটেনি। পরিচালন কমিটি স্কুলটি ভাষাগত ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবি করলেও তা নিয়ে মামলা হয়। সেই মামলা চলছে।

কয়েক মাস আগে স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে ওই স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ঠিক করা হলেও পরিচালন কমিটি তা মানতে চায়নি। তারা এর বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ঠিক করার নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা হয়। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিভাবক মঞ্চ। তাদের অভিযোগ, প্রশাসক, স্কুল পরিদর্শকের দফতর বা সরকারের তরফে স্কুলের ছাত্রদের সমস্যার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না। ছাত্ররা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ অবস্থান করলে সমস্যা মেটাতে সাহায্যের আশ্বাস দেন মন্ত্রী গৌতম দেব।

ইতিমধ্যেই স্কুলের দুই অস্থায়ী শিক্ষককে বরখাস্ত করা হলে আন্দোলনে নামে শিক্ষকেরা। স্কুলে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া হয়নি। ছাত্রদের বই দেওয়া হয়নি। পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অভিযোগ তুলে দুই মাস ধরে ধর্না অবস্থান করেন শিক্ষকেরা। পরে তারা কর্ম বিরতি চালাতে থাকলে অচলাবস্থা তৈরি হয়। বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষকদের বেতন। মহকুমা প্রশাসনের তরফে বিষয়টি স্কুল শিক্ষা দফতরকে জানানো হয়। সম্প্রতি তিন সদস্যের কমিটি গড়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়। তারা ইতিমধ্যেই শিলিগুড়িতে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রির্পোট দিয়েছে।

কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটছে না দেখে গত সোমবার চার ছাত্র অনশন আন্দোলন শুরু করে স্কুলের ভবনে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ওই ছাত্রদের টেনে হিঁচড়ে অবরোধ থেকে তোলে বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরেই পরিস্থিতি নিয়ে জটিলতা এড়াতে ওই দিনই স্কুল পরিচালন সমিতিকে ডেকে বৈঠক করেন মহকুমাশাসক। পরিচালন সমিতির লোকজন জানিয়ে দেন তারা স্কুল খোলাই রেখেছে। ছাত্র-শিক্ষকেরা আন্দোলন করাতেই সমস্যা হচ্ছে।

মহকুমাশাসকের তরফে শিক্ষকদের পড়ানো শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নতুন শিক্ষাবর্ষে ছাত্রদের ভর্তি না করানোর যে সমস্যা রয়েছে দিন ১৫ পর প্রশাসনের তরফে বিষয়টি দেখা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু হলেও ছাত্ররা অনেকেই এখনও অসছেন না। স্কুলটি যে সমিতির অধীন তার সদস্য সীতারাম ডালমিয়া বলেন, ‘‘কিছু শিক্ষক নিজেদের মতো চলতে চাইছে। ছাত্রদের উস্কে ফয়দা নিচ্ছেন। তাঁরা কাজ না করলে মাইনে পাবেন কেন? তা ছাড়া শিক্ষকদের টাকা দেওয়ার নাম করে অভিভাবকদের কাছ থেকে মঞ্চের সদস্যরা কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। প্রশাসন দেখুক। আমরা স্কুল চালাতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE