Advertisement
E-Paper

খুনের চেষ্টার অভিযোগ, জেল গুণিনের

আদিবাসী বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলেকে অত্যাচার ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত গুণিন গোবিন্দ পাহানের ১৪ দিনের জেল হলো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৮
আহত মাতা-পুত্র। নিজস্ব চিত্র।

আহত মাতা-পুত্র। নিজস্ব চিত্র।

আদিবাসী বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলেকে অত্যাচার ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত গুণিন গোবিন্দ পাহানের ১৪ দিনের জেল হলো। বৃহস্পতিবার ধৃত গুণিনের বিরুদ্ধে ঝাড়ফুঁকের নামে সুকল মুর্মু ও তার সৎমা সুমরি বাস্কেকে বাড়িতে আটকে রেখে (৩৪২ ধারা) জলন্ত মোমের ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে ও ত্রিশূলের খোঁচা দিয়ে অত্যাচার (৩২৬ ধারা) করে প্রাণে মারার চেষ্টার (৩০৭ ধারা) অভিযোগে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ দিন বালুরঘাটের সিজেএম কোর্টে তাঁকে হাজির করালে বিচারক হেদায়েতুল্লা ভুটিয়া অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এদিন বালুরঘাট আদালতে উপস্থিত ধৃত গুণীনের মা ফুলু মুর্মুর দাবি, ঝাড়ফুঁকে ওদের গায়ে ফোস্কা পড়ে ঘায়ের মতো হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাঁর ছেলে ৫০০টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিল। ওদের হুমকির অভিযোগ ঠিক নয়।

এ দিকে, কুমারগঞ্জের বরাহারে ব্লক হাসপাতালে আহত সুকল এবং তার সৎমা সুমরিদেবীকে রাতেই ভর্তি করে নিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। বিএমওএইচ পুষ্পেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। দেরি করলে ক্ষতস্থানে সেপ্টিক হয়ে যেত।’’

কুমারগঞ্জের মহিপুর সংসদের আদিবাসী অধ্যুষিত চারকাটি গ্রাম থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে ব্লক হাসপাতাল। গ্রামে স্বাস্থ্য দফতরের আশা কর্মীরাও বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন বলে বিএমওএইচের দাবি। তবু ওই এলাকার আদিবাসী যুবক সুকল মু্র্মুর অসুখ সারাতে আত্মীয়রা কেন ওই সমাজের ওঝার দ্বারস্থ হলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

কুমারগঞ্জের বিডিও দেবদত্ত চক্রবর্তী জানান, বুধবার রাতেই অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে আহতদের ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই রাতেই অত্যাচারিত সুমরিদেবীর বাড়ির লোকের তরফে ওই জানগুরু গোবিন্দ পাহানের বিরুদ্ধে কুমারগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপরই বালুরঘাটের ভূশিলা গ্রাম থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে সুকলের অসুস্থতার জন্য সৎমা সুমরিদেবীকে ডাইনি বলে অপবাদ দিয়ে কয়েকজন আত্মীয় ওই গুণিনের কাছে ঝাড়ফুঁকের জন্য নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ডাইনি অপবাদের আড়ালে অনেক ক্ষেত্রে জমি বা সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্য কাজ করে বিডিও দেবদত্তবাবু মনে করেন। এ ক্ষেত্রে এমন উদ্দেশ্যকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে পড়শি সূত্রে জানা গিয়েছে। চারকাটি এলাকার কৃষিজীবী কাঞ্চন মুর্মুর দুই বিয়ে। তিনি মারা যাওয়ার পর প্রথম পক্ষের স্ত্রী সুমরিদেবীর নামে অল্প চাষ জমি ও বাড়ির দখল রয়েছে। দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে ৩৫ বছরের সুকল বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ। কাছেই হাসপাতাল। কিন্তু সুকলকে গ্রাম থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বালুরঘাটের ভাটপাড়া অঞ্চলের ভূশিলা গ্রামের ওই গুণিনের আখড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

সুকলের উপর চিকিৎসার নামে বুকে পিঠে মোমের ছ্যাঁকা ও ত্রিশূলের খোঁচা সহ নানা ধরনের অত্যাচারের পর রোগ না-সারার কারণ হিসাবে ওই গুণিন সুমরিদেবীকে দায়ী করে তাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে অত্যাচার করে বলে অভিযোগ ওঠে। এদিন অবশ্য সুকলের এক জ্যাঠা মংলু মুর্মু অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁদের দাবি, ‘‘সুকল সুস্থ হয়ে উঠবে জেনে সেখানে যাই। ভাতৃবধুকে গুণিন ডেকে পাঠায়। জানগুরুর কী নিদান দিয়েছিল, জানা নেই।’’ কুমারগঞ্জের বিডিও দেবদত্তবাবু বলেন, এলাকায় গিয়ে সচেতনার প্রচার হবে। পাশাপাশি ঘটনার পিছনে কায়েমি স্বার্থ লুকিয়ে রয়েছে কী না, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

witch-craft police Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy