প্রতীকী ছবি।
কেউ গানই গাইতে পারেন না। কেউ আবার গান জানলেও লোকসঙ্গীত গাইতে পারেন না। কেউ আবার বিত্তশালী হয়েও প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে লোকশিল্পীর ভাতা পাচ্ছেন। অনেকে আবার শাসক দলের নেতাদের অনুগামী হওয়ার সুবাদে অডিশন ছাড়াই সরকারি লোকশিল্পীর মর্যাদা পেয়ে গিয়েছেন।
সরকারি সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের অগস্ট মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দেন। সেইসময় জেলায় সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত লোকশিল্পীর সংখ্যা ১০ হাজার ১৩৮ জন জানার পর অবাক হয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কী ভাবে কোন যোগ্যতায় এত লোকশিল্পী লোকপ্রসার শিল্পে অন্তর্ভূক্ত হলেন, সেই বিষয়েও প্রশাসনের কাছে জবাব চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনকে তদন্ত করে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পর যৌথভাবে তদন্তে নামে জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সেই তদন্তেই জেলার লোকপ্রসার প্রকল্পে বড়সড় দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছে প্রশাসন।
কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। তারপরেই রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরকে জেলায় লোকশিল্প প্রসার প্রকল্পে সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত লোকশিল্পীদের সরকার নির্ধারিত যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য নতুন করে অডিশন নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে লোকপ্রসার প্রকল্পে জেলায় প্রায় পাঁচ হাজারেও বেশি সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত লোকশিল্পী ভুয়ো এবং তাঁদের এই ভাতা পাওয়ার কোনও যোগ্যতা নেই বলে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সন্দেহ।
দফতরের জেলা আধিকারিক অরুণাভ মিত্রের দাবি, রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে দিলেই লোকপ্রসার প্রকল্পে ভাতাপ্রাপ্ত জেলার ১০ হাজার ১৩৮ জন লোকশিল্পীর রি-অডিশন নেওয়ার কাজ শুরু হবে। অযোগ্যদের নাম ওই প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপকদের তালিকা থেকে বাতিল করা হবে। পাশাপাশি, কোনও লোকশিল্পী সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা সরকারি পেনশনভোগী হলে তাঁদের নামও ওই প্রকল্প থেকে বাতিল করা হবে। জেলাশাসক আয়েশা রানি বলেন, ‘‘জেলায় লোকপ্রসার শিল্পকে দুর্নীতিমুক্ত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’’
প্রশাসনের দাবি, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের নেতাদের একাংশের সুপারিশে বিনা অডিশনেই পাঁচ হাজারেরও বেশি পুরুষ ও মহিলার নাম লোকপ্রসার প্রকল্পে নথিভূক্ত হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকমাস আগে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এক আধিকারিককে বদলিও করা হয়েছে।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ‘‘দল সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ করে না। তবুও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy